মহালয়ার ভোরে তর্পণ করার জন্য নবদ্বীপের ঘাটে উপচে পড়া ভিড়
বর্তমান | ০৩ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: পিতৃপক্ষের অবসান আর দেবীপক্ষের সূচনা। মহালয়ার এই পুণ্যতিথিতে পূর্বপুরুষের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তর্পণ এবং পুণ্যস্নান করতে বুধবার কাকভোর থেকে নবদ্বীপের প্রতিটি ঘাটেই উপচে পড়া ভিড় ছিল। ছিল কঠোর পুলিসি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এদিন দূরদূরান্ত থেকে বাসে, গাড়িতে, অটোতে করে বহু মানুষ এসেছিলেন। পার্শ্ববর্তী পূর্ব বর্ধমান জেলা থেকে অনেকেই টোটো ও মোটর সাইকেল নিয়ে এসেছিলেন।
নবদ্বীপের রানিরঘাট, বড়ালঘাট, পোড়াঘাট, শ্রীবাসঅঙ্গনঘাট, ফাঁসিতলাঘাট, জন্মস্থান ঘাট সহ প্রতিটি ঘাটেও এদিন তর্পণ করেন অসংখ্য মানুষ। জেলার অনেক সরকারি পদাধিকারীও প্রতিবছরের মতো এবারও নবদ্বীপে গঙ্গার ঘাটে তর্পণ করেন। তবে সকালের দিকে বেশ কিছু সময়ের জন্য মুষলধারে বৃষ্টি নামে। সেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে অনেকেই এদিন তর্পণ করলেন । এদিন নদীবক্ষেও সিভিল ডিফেন্সের কর্মীদের স্পিডবোট নিয়ে নজরদারি করতে দেখা যায়।
পূর্ব বর্ধমানের সুভাষপল্লি থেকে মামা জগদীশচন্দ্র রুদ্রের সঙ্গে তর্পণ করতে এসেছিলেন ৬৬ বছরের শিশিরকুমার কুণ্ডু। তিনি বলেন, এদিন আমি বাবা, দাদু সহ যেসব আত্মীয়স্বজন মারা গিয়েছেন তাঁদের উদ্দ্যেশ্যে তর্পণ করলাম। প্রতিবছরই চৈতন্যভূমি নবদ্বীপে আসি। দুপুরে গোবিন্দ জিউর মন্দিরে প্রসাদ খেয়ে বাসে করে ফিরে যাব।
আসানসোলের জামুরিয়া থেকে নবদ্বীপ রানিরঘাটে তর্পণ করতে এসেছিলেন শুভাশিস গোস্বামী। তিনি বলেন, বাবা ও মা দুজনেই গত হয়েছেন। তাঁদের উদ্দেশ্যে তর্পণ করতে এসেছি নবদ্বীপ ধামে।
হাওড়ার জেলার বাউরিয়া থেকে এসেছিলেন মৃণাল দেবনাথ। তিনি বলেন আমি পিতৃতর্পণ করতে এসেছি। প্রতি বছরই এখানে আসি। এখানকার স্নানের ঘাটের ব্যবস্থাপনা খুব ভালো। কয়েক বছর ধরে দেখছি বাঁশের ব্যারিকেড করা হয়েছে। তাতে জলে নেমে অনেকটাই নিরাপদ লাগছে।
কৃষ্ণনগর চৌধুরী পাড়া থেকে সন্দীপ সরকার বন্ধুদের সঙ্গে পিতৃতর্পণ করতে এসেছিলেন। সন্দীপ বলেন, প্রতিবছরই পিতৃতর্পণ করতে রানির ঘাটে আসি। অন্য বছরের মতো এবারও ভিড় ভালো হয়েছে। সকাল সকাল এসেছি বলে ভালো করে তর্পণ করলাম। গঙ্গায় জল খুবই বেড়েছে। নিরাপত্তার কারণে বাঁশ এবং জাল দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে।
নবদ্বীপ পুরাতত্ত্ব পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব বলেন, শাস্ত্র মতে এই অমাবস্যাতে পিতৃপুরুষগণ মর্ত্যে নেমে আসেন তার বংশের উত্তরাধিকারের হাতে জল নেওয়ার জন্যে। উত্তরাধিকারী এই দিন তর্পণ করে অর্থাৎ তাঁদের উদ্যেশ্যে জল দেন। এটা দিয়ে তাঁদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করেন। তবে এর মধ্যে দিয়ে শুধু মা বাবা নয়, মাতৃকুল, পিতৃকুল, আত্মীয়স্বজন বন্ধু-বান্ধব যাঁরা প্রয়াত হয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেকেরই আত্মার শান্তিকামনার রীতিই তর্পণ।