পদ্মার জলে ডুবেছে ২ হাজার বিঘা জমির কলাই, মাথায় হাত চাষিদের
বর্তমান | ০৩ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, করিমপুর: পদ্মাই মারে, আবার পদ্মাই রাখে। একসময়ে যে পদ্মা বাড়িঘর, জমি জায়গা সব গিলে খেয়েছে, বর্তমানে সেই পদ্মার সৌজন্যে সীমান্ত এলাকার মানুষগুলো জমির পাট জাঁক দেওয়া বা মাছ ধরার সুযোগ পায়। কিন্তু গত কয়েকদিনে পদ্মার জলে ডুবে নষ্টের মুখে ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের প্রায় দুই হাজার বিঘা জমিতে চাষ করা কলাই। পুজোর আগে ব্যাপক ক্ষতির মুখে এলাকার চাষিরা। জানা গিয়েছে, হোগলবেড়িয়া থানার কাছারিপাড়া, বাঊশমারি, মধুগাড়ি, নাসিরের পাড়া সীমান্ত এলাকার একাধিক চাষির জমি ডুবেছে পদ্মার জলে। এই চরের জমিতে এই মরশুমে মূলত কলাই চাষ হয়। এছাড়াও প্রত্যেক বছর চরের উর্বর জমিতে স্থানীয় চাষিরা কলা চাষ করেন। এবারেও তাঁরা কলা এবং কলাই চাষ করেছিলেন। সীমান্তের চাষিরা জানান, ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত রেখা বরাবর এই চরের মাঠের জমি ১৯৯৭ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ভাঙ্গনে পদ্মা গর্ভে তলিয়ে গিয়েছিল। তারপর বাঁধ দেওয়ার পর নদীর স্রোত ঘুরে যায় এবং সেখানে পলি পড়ে ধীরে ধীরে চরে প্রায় তিন হাজার বিঘা জমি জেগে ওঠে। তার মধ্যে বর্ষাকালে প্রায় দুই হাজার বিঘা জমিতে কলাই চাষ হয়। কিন্তু এবার চারদিন আগে থেকে চাষের জমি পদ্মার জলে তলিয়ে গিয়েছে। সম্ভবত ফরাক্কার ছাড়া জলেই পদ্মায় জলস্ফীতি হয়েছে। চাষি বীরেন সরকার বলেন, একটা সময় পদ্মার কারণে এলাকার মানুষকে ভিটেমাটি হারাতে হয়েছে। পরে যখন এলাকায় জলের অভাবে কেউ পাট জাঁক দিতে পারছিলেন না, সেই সময়ে পদ্মার জলই মানুষের ভরসা হয়ে উঠল। বিগত অনেক বছর পদ্মার জলে মানুষ উপকার পেয়েছেন, এবার ক্ষতির সম্মুখীন হতে হল। পদ্মার জল বাড়তে পারে এমন সতর্কবার্তা বিএসএফ থেকে ক’দিন আগে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কিছুই করার ছিল না। চাষি শঙ্কর মণ্ডল জানান, একসময় পদ্মার ভাঙনে জমি হারিয়ে অনেকে নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলেন। তারপর ওই এলাকায় পলি পড়ে বেশিরভাগ চাষি তাঁদের জমি ফিরে পেয়েছেন। এখন পদ্মার চরে বছরে প্রায় তিনটে ফসল হয়। পাট ছাড়াও রবিশস্যের চাষ ভালো হয়। প্রত্যেক বছর কলাই চাষ করে বেশ ভালোই লাভ হতো। গত বছর দশেকের মধ্যে পদ্মার জলে চাষের জমি ডোবেনি। কিন্তু এবছর হঠাৎ জল বেড়ে গিয়ে চাষের জমি ডুবে যাওয়ায় পুজোর আগে চাষিরা চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। করিমপুর ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি আলাউদ্দিন মণ্ডল বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের জন্য পঞ্চায়েত সমিতির বৈঠকে আলোচনা হবে। ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্ভব কিনা তা দেখা হবে।