সংবাদদাতা, লালবাগ: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছিলেন বেশ কয়েক মাস আগে। তার পরও চালু হচ্ছিল না নশীপুর-আজিমগঞ্জ রেল সেতু দিয়ে প্যাসেঞ্জার ট্রেনের চলাচল। বুধবার সেই প্রতিক্ষার অবসান। দুপুরে বারো কোচের মেমু ট্রেন ছুটল নশীপুর-আজিমগঞ্জ রেল ব্রিজের উপর দিয়ে। স্বপ্নপূরণ হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রেলমন্ত্রী থাকাকালীন তিনিই এই রেলব্রিজ ও রেলপথের অনুমোদন দিয়েছিলেন। দীর্ঘ টালবাহানার পর সেটাই আজ বাস্তবায়িত হল।
ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী থাকতে এদিন সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ হাজির হয়েছিলেন ভাগীরথীর পশ্চিম পাড়ের আজিমগঞ্জ জংশন স্টেশনে। শিয়ালদহ থেকে ভার্চুয়ালি ওই রেলপথের শুভ উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। ঘড়িতে তখন দুপুর ১ টা বেজে ৩৫ মিনিট। আজিমগঞ্জ স্টেশনের ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে উপস্থিত সাংসদ আবু তাহের খান, মুর্শিদাবাদের বিধায়ক গৌরীশঙ্কর ঘোষ, জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান প্রসেনজিৎ ঘোষ এবং রেলের একাধিক আধিকারিক। তাঁরা সবুজ পতাকা নাড়াতেই ট্রেনটি যাত্রীদের নিয়ে রওনা দিল মুর্শিদাবাদ স্টেশনের দিকে। তখন স্টেশনে উপস্থিত জনতা ফেটে পড়েন উচ্ছ্বাসে।
হাওড়া-আজিমগঞ্জ ও শিয়ালদা-লালগোলা পূর্ব রেলের এই দু’টি শাখাকে নশিপুর-আজিমগঞ্জ রেল পথের মধ্য দিয়ে জুড়ে দিতে পারলেই জেলার সার্বিক উন্নয়ন এবং ঐতিহাসিক মুর্শিদাবাদ শহরে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানো সম্ভব। এই কথা প্রথম মাথায় আসে লালবাগের বাসিন্দা প্রাক্তন সমরকর্মী আর খানের। পরবর্তীতে রেল পথের দাবিতে মুর্শিদাবাদ রেলওয়ে প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন গড়ে আন্দোলন শুরু করেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০১ সালের ২১ জুলাই নশীপুর-আজিমগঞ্জ রেল ব্রিজের অনুমোদন করেন। ২০০৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর রেল ব্রিজের কাজের শিলান্যাস করা হয়। মোট ২১ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করে রেল লাইন পাতার কাজ শুরু হয়। ভাগীরথী নদীর উপর ৪০০ মিটার রেল ব্রিজের কাজ শেষ হয় ২০১০ সালে। একাধিক জট ও জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে এদিন দুপুরে আজিমগঞ্জ জংশন স্টেশন থেকে যাত্রী নিয়ে মেমু ট্রেনটি মুর্শিদাবাদ জংশন স্টেশন হয়ে কাশিমবাজার স্টেশনে পৌঁছল। অন্যদিকে, একই সময়ে কৃষ্ণনগর থেকে আজিমগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় আরও একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন। ঐতিহাসিক এই মুহূর্তকে স্মরণীয় করে রাখতে সেলফি তোলার হিড়িক পড়ে যায় উপস্থিত সকলের মধ্যে। মুকুন্দবাগের বাসিন্দা তপেন সূত্রধর সকাল ১১টা থেকে আজিমগঞ্জ স্টেশনের ৬ নম্বর প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেন, ‘এই দিনটির জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। শেষ পর্যন্ত অপেক্ষার অবসান হল। রেল দপ্তরকে অভিনন্দন।’ মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খানের দাবি, নশিপুর-আজিমগঞ্জ রেলসেতু উদ্বোধনের পরেও যাত্রীবাহী ট্রেন চালাতে রেল টালবাহানা করছিল। এই নিয়ে তৃণমূল সাংসদরা লোকসভায় সরব হতেই রেলমন্ত্রক তড়িঘড়ি নশীপুর-আজিমগঞ্জ দিয়ে যাত্রীবাহী ট্রেন চালাতে বাধ্য হল। যদিও মুর্শিদাবাদের বিধায়ক গৌরী শঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘আমি বিধায়ক হওয়ার আগে মানুষকে কথা দিয়েছিলাম। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পেরেছি। ওই লাইন দিয়ে আরও ট্রেন ও দূরপাল্লার ট্রেন দ্রুত চালু করাই একমাত্র লক্ষ্য।’