প্লাবনবিধ্বস্ত এলাকায় যেন দেবী দুর্গার মতো আগলে রেখেছেন গৃহহীন, একাধিক সমস্যায় জেরবার গর্ভবতীদের। ওঁদের নিজেদের বাড়িতেও জল ঢুকেছে। ঘর সামলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তবুও দিনের পর দিন স্বাস্থ্য পরিষেবা দিয়ে চলেছেন জলমগ্ন এলাকায়। সামাজিক মাধ্যমে তাঁদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ছবি ইতিমধ্যে ভাইরাল। প্রচুর মানুষ প্রশংসায় ভরিয়ে দিচ্ছেন সেইসব পোস্টে।
মালদহের মানিকচক ব্লকের ভূতনির তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা প্রায় দুই মাস জলমগ্ন। কোথাও এক কোমর, আবার অনেক জায়গায় মানুষ সমান জল দাঁড়িয়েছিল। প্লাবনে এলাকার প্রায় প্রতিটি ঘর কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এমন অবস্থাতেও যৎসামান্য বেতনভুক্ত আশাকর্মীরা তাঁদের দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে চলেছেন। ডিঙি নৌকা নিয়ে, আবার ঝুঁকি সত্ত্বেও বালির বস্তা দিয়ে তৈরি রাস্তা দিয়ে সাইকেলে পারাপার করে পরিষেবা দিচ্ছেন ভূতনীবাসীকে। নিয়মিত এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিয়ে রিপোর্ট দিচ্ছেন ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। মানিকচক ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তরের ইন্দু রবিদাস, সুমিত্রা রানি মণ্ডল, ডলি সাহার মতো আশাকর্মীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও পরিষেবা দেওয়ার সদিচ্ছা দেখে তাঁদের এখন দশভূজা হিসেবেই দেখছেন এলাকার অনেকে।
ভূতনির কিছু এলাকায় জল কমলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অনেকটা সময় লাগবে। তারই মধ্যে গর্ভবতীদের সুরক্ষিত রাখা ও সুষ্ঠু পরিষেবা দিয়ে নিজেদের দায়িত্ব পালনে চেষ্টার অন্ত নেই আশাকর্মীদের। নিজেদের বাড়িও জলমগ্ন। তবুও মানুষের পাশে থাকতে ছুটে চলেছেন এলাকায়। ব্লক স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ভূতনির তিনটি অঞ্চলে প্রায় ৫০ জন আশাকর্মী রয়েছেন। তাঁদের একজন ইন্দু রবিদাসের কথায়, বন্যা পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি সমস্যা যাতায়াতে। বিভিন্ন গ্রামে যেতে ভরসা টিনের নৌকা। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি হলেও গর্ভবতীদের কথা ভেবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওষুধ দেওয়া সহ একাধিক পরিষেবা দেওয়ার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের হাসপাতালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।
সুচিত্রা রানি মণ্ডল জানালেন, জল কমলেও সব এলাকায় নৌকা যায় না। বালির বস্তার বাঁধ ধরেও যাতায়াত করতে হচ্ছে। এছাড়া তো রাস্তাও নেই।
আশাকর্মীদের নিরলস চেষ্টার প্রশংসা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক অভীক শঙ্কর কুমারের মুখেও। তাঁর মন্তব্য, ভূতনিতে বন্যা পরিস্থিতিতে প্রায় ৫০ জন গর্ভবতীকে আশাকর্মীদের সাহায্যে উদ্ধার করে সুরক্ষিত জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এখনও ওই এলাকায় প্রায় ১৫ জন গর্ভবতী রয়েছেন। তাঁদের প্রসব হতে মাসখানেক দেরি। সবাই আমাদের নজরদারির মধ্যে রয়েছেন। বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে ৪৫ জন গর্ভবতীর প্রসব হয়েছে। যার কৃতিত্ব অবশ্যই আশাকর্মীদের।