তিস্তাপাড়ের কাশবন এখন সেলফি জোন, লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশনে দিনভর শ্যুটিং
বর্তমান | ০৩ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: দুর্যোগ সরতেই জলপাইগুড়ির আকাশে এখন পেঁজা তুলোর মেঘ। শরতের বাতাসে তিস্তাচরে শুভ্র কাশের ঢেউ। ‘জল-শহর’ থেকে প্রায়ই দেখা মিলছে চির তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘার। নিসর্গ প্রকৃতির এই হাতছানিকে উপেক্ষা করে কার সাধ্যি! আর তাই কাশবনের মাঝে তিস্তার বিশাল ক্যানভাসই নয়া প্রজন্মের কাছে এখন হয়ে উঠেছে হটস্পট ‘সেলফি জোন’। সকাল হলেই বাইক, স্কুটার নিয়ে ছেলেমেয়েরা হাজির হচ্ছে তিস্তার বাঁধে। অনেকে আবার আগমনির সাজে খুদেদের সাজিয়ে নিয়ে আসছেন। চরে কোথাও কোথাও এখনও রয়ে গিয়েছে খানিকটা জল। তাতেই নামানো হচ্ছে ছাউনি দেওয়া নৌকা। ‘লাইট-ক্যামরা-অ্যাকশন’ বলা মাত্রই শুরু হয়ে যাচ্ছে রিলের শ্যুটিং। ছবি তোলার সঙ্গে সঙ্গেই তা আপলোড হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এদিকে, তিস্তাপাড়ে বহু মানুষের সমাগমকে সামনে রেখে বসেছে মুখোরোচক খাবারের দোকান। শ্যুটিং শেষে ছবি শিকারিরা ভিড় জমাচ্ছেন সেসব দোকানে। ভালোই হচ্ছে বিক্রিবাটা।
স্নিগ্ধ শরতে তিস্তাপাড়ে এলে মনে পড়ে যেতে পারে ‘পথের পাঁচালি’র সেই দৃশ্য। কাশবনের মাঝখান দিয়ে দিদির হাত ধরে রেলগাড়ি দেখতে ছুটছে অপু। তবে এখানে রেলগাড়ি নেই। আছে তিস্তা। ক’দিন আগেই খরস্রোতা এই নদী হয়ে উঠেছিল ভয়ঙ্করী। এখন অনেকটাই শান্ত। ব্যাকগ্রাউন্ডে বিশাল তিস্তা কখনওবা কাশবন রেখে সেলফিতে মজছে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীরা। একটু তফাতে দেখা মিলছে বয়সে বড়দের। তিস্তাপাড়ের কাশবনকে সাক্ষী রেখেই জমে উঠছে যুগলের ‘মধুর আলাপ’ কিংবা খুনসুটি।
তিস্তাপাড়ে সেলফিতে মজেছিলেন কলেজ ছাত্রী মধুস্মিতা রায়। জলপাইগুড়ির মেয়ে। বললেন, সারাবছর এই সময়টার জন্যই অপেক্ষা করে থাকি। তিস্তাপাড়ে কাশবন এক মোহময়ী পরিবেশ তৈরি করে। এর হাতছানি উপেক্ষা করা সহজ নয়। অনুসূয়া মজুমদার বললেন, বয়ফ্রেন্ডকে সঙ্গে আনতে হবে, এমন কোনও কথা নেই। গোটা নদীপথজুড়ে কাশবন। প্রকৃতির ক্যানভাসে অন্যরকম ভালোবাসার অনুভূতি। তিস্তার চর আক্ষরিক অর্থেই অন্তত কিছুটা সময় নিজের মতো করে কাটানোর জায়গা।
তবে এই সেলফি জোন, রিলের শ্যুটিংয়ের মাঝেই তিস্তাপাড়ে এখন আরও এক খুশির আবহ। বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও নিজেদের মতো করে ‘ঘরের মেয়ে’ উমার আবাহনে মাততে চলেছেন বাঁধের বাসিন্দারা। চলছে মণ্ডপ তৈরির কাজ। প্যান্ডেলে বাঁধা বাঁশে খুদেদের দিনভর দস্যিপানা দূরে ঢাকিপাড়ায় মহড়া আক্ষরিক অর্থেই জানান দিচ্ছে পুজো আসছে।