নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: আর অপেক্ষা করতে পারছেন না বঙ্গবাসী। ঘাম মুছতে মুছতে তাঁরা বলছেন, ‘অনেক হয়েছে! এবার আমাদের পালা।’ কীসের পালা? ‘এতদিন বিচারের দাবিতে রাস্তা দখল হয়েছে। এবার আমরা মণ্ডপ দখল করব।’ আর মহালয়ার দিনই লেকটাউনের শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবের মণ্ডপে মাছি গলার জায়গা নেই। রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মণ্ডপে ভিড়ও বাড়ল। এদিন মহালয়া, তার উপর গান্ধীজয়ন্তীর ছুটি। এমন একটা সোনালি দিন বাঙালি ছাড়তে চায় না। তাই সুযোগ পেয়েই কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েছেন উদযাপনে। দুপুর-বিকেলে চুটিয়ে পুজো বাজার। আর সন্ধ্যার পর মণ্ডপ। আম বাঙালির মুক্তি যে উৎসবেই।
মঙ্গলবার শ্রীভূমিতে এসে সূচনা সেরে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার তিনি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেন। সন্ধ্যা ৭টায় দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয় মণ্ডপ। ভিআইপি রোডের ধার ধরে তখন থেকেই দীর্ঘ লাইন। সকাল থেকে শহরের আবহাওয়া দেখে বোঝাই গিয়েছিল, মানুষ অন্তত আজ আর বাড়িতে বসে থাকবেন না। সকালেই মেট্রোয় ভিড়। সকলে শেষ মুহূর্তের পুজোর বাজারে ‘ফিনিশিং টাচ’ দিতে ব্যস্ত। নিউ মার্কেট, হাতিবাগান, গড়িয়াহাটে চোখ ধাঁধানো ভিড়। কেউ কেউ বাজার অর্ধেক রেখেই খবর পেলেন, শ্রীভূমি খুলে দেওয়া হয়েছে। আর সময় নষ্ট না করে ছুটলেন শ্রীভূমিতে। বাঘাযতীন থেকে একদল স্কুল পড়ুয়া ধর্মতলায় এসেছিলেন বাজার করতে। ফোনে মেসেজে শ্রীভূমির ছবি এল। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন, এত তাড়াতড়ি বাড়ি যাওয়ার মানে হয় না। বাড়িতে ফোন করে তাঁরা বোঝালেন, ‘মা, পুজো তো শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন ফিরতে দেরি হবেই।’ কিন্তু মায়ের মন মানে না। কারণ, চারদিকে মিছিলের আবহে ছেলে কোনও বিপদে পড়বে না তো? সকাল থেকে ডাক্তারদের মিছিলেন অবরূদ্ধ হয়েছিল মহত্মা গান্ধী রোড, সি আর অ্যাভিনিউ, ধর্মতলা চত্বর। কিন্তু বাঘাযতীনের পলাশ, রতন, কুণালরা অনড়। কিন্তু কীভাবে যাবে ওঁরা? গুগল ম্যাপের আশ্রয় নিয়ে তারা চলল শ্রীভূমি।
অনেকে আবার মিছিলের কথা মাথা রেখেই সকালে বেরিয়েছিলেন। গড়িয়াহাটে বাজার করতে গিয়ে সোনারপুরের সমিত রায় বলছিলেন, ‘বিকেল থেকে কখন-কোথায় মিছিল শুরু হয়ে যাবে, বলা যায় না। তাই একটু তাড়াহুড়ো করছি।’ পাশ থেকে একজন বললেন, ‘আরে মিছিল তো ধমর্তলায়। গড়িয়াহাটে কিছু নেই। আপনি ধীরে করুন।’ বাজার থেকে সেলুন হয়ে নেইল আর্ট পার্লার। কোনও সিট আজ আর ফাঁকা নেই। দক্ষিণ কলকাতার এক নেইল আর্ট পার্লারের সামনে দাঁড়িয়ে যুবতী বললেন, ‘আগে থেকে সময় নেওয়া ছিল। তাই খুব একটা অসুবিধা হয়নি। একটা বড় কাজ হয়ে গেল। আর চিন্তা নেই।’