নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ‘আপনি কেন? আপনার তো এলাকা নয়। বাঁশদ্রোণী থানার ওসি কোথায়? উনি কি পালিয়ে গিয়েছেন? আপনাকে এলাকা থেকে টাকা তুলতে পাঠিয়ে দিয়েছে নাকি। বাঁশদ্রোণীর ওসি না আসা পর্যন্ত ওঁকে সবাই ঘিরে রাখো। কোথাও যেন পালাতে না পারে।’ চিৎকার করছে উত্তেজিত জনতা।
পে-লোডারের ধাক্কায় স্কুল পড়ুয়ার মৃত্যুতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন পাটুলি থানার ওসি তীর্থঙ্কর দে। বাঁশদ্রোণী থানার ওসির বদলে তিনি কেন? এই প্রশ্ন তুলেই ইনসপেক্টর পদমর্যাদার অফিসারকে ঘিরে উত্তপ্ত এলাকাবাসী। বলা ভালো, দীনেশনগর এলাকার উত্তেজিত, বিক্ষোভরত মহিলাদের চক্রব্যূহে কার্যত নিশ্চুপ মুখে প্রায় ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে থাকতে হল পাটুলি থানার ওসিকে। চারিদিক থেকে উড়ে এল চোখা চোখা কটাক্ষ। তাঁকে একা পেয়ে চড়াও হলেন মহিলারা। কর্তব্যরত সরকারি কর্মীর কাজে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি তাঁকে হেনস্তা করেন মহিলারা। অফিসারের গায়ে ছুড়ে দেওয়া হয় বেহাল রাস্তায় জমে থাকা কাদা জল।
কিন্তু, পাটুলি থানার ওসিকে যখন হেনস্তা চলছে, তখন স্থানীয় থানার অফিসার ইনচার্জ অমিতশঙ্কর মুখোপাধ্যায়ের দেখা নেই কেন? একটু খুঁজে পাওয়া গেল তাঁর দেখা। ঘটনাস্থল থেকে প্রায় ৪০-৫০ মিটার দূরে উত্তেজিত জনতার ভয়ে একটি গলির মধ্যে মাথায় হেলমেট পরে সিঁটিয়ে রয়েছেন বাঁশদ্রোণী থানার বড়বাবু। তাঁর সঙ্গেই রয়েছেন কনস্টেবল, গার্ড সহ কয়েকজন ফোর্স। ততক্ষণে গোটা দীনেশনগরে পুলিস-জনতা কার্যত হাতহাতির পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে। ওই গলির ভিতর থেকে ওয়াকিটকির মাধ্যমে বাড়তি ফোর্সের আর্জি জানান ওসি। এরপরেই ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছয় সাউথ সাবার্বান ডিভিশনের রিজার্ভ ফোর্স। বিক্ষোভকারীদের ঘেরাটোপ থেকে পাটুলি থানার ওসিকে উদ্ধার করতে গিয়ে রীতিমতো কালঘাম ছুটে যায় পুলিসকর্মীদের। স্থানীয় মহিলাদের সঙ্গে সেই সময়ে ধস্তাধস্তি হয়। কয়েকজন ওসি ও পুলিসকর্মীদের লক্ষ্য করে হাত চালান বিক্ষোভকারীরা। এরপরেই দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন সাউথ সাবার্বান ডিভিশনের অ্যাসিস্ট্যন্ট কমিশনার পদমর্যাদার অফিসার প্রদীপ ঘোষাল। তাঁকে ঘিরেও বিক্ষোভ চলে। প্রায় ১৫ মিনিট ঘিরে রাখা হয় তাঁকে। ফের ফোর্স মোতায়েন করতে হয় পুলিসকে। ডিসি এসএসডি বিদিশা কলিতার নেতৃত্বে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
রত্না মণ্ডল নামে এলাকাবাসীর দাবি, পুরসভার গাফিলতিতেই এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু, কাউন্সিলারের কোনও দেখা নেই। তাঁকে আসতে হবে। দীর্ঘ সাত বছর ধরে কাউন্সিলারকে রাস্তা সারাই করার কথা বলা হচ্ছিল। কিন্তু, তাঁর এতদিন কর্ণপাত করার সময় হয়নি। আজ একটা বাচ্চার প্রাণ চলে গেল। উল্লেখ্য, পুরসভার কেইআইআইপির কাজের জন্য টালিগঞ্জ, বাঁশদ্রোণী, নেতাজিনগর, ঠাকুরপুকুর সহ কলকাতার প্রান্তিক অঞ্চলগুলিতে রাস্তার অবস্থা বেহাল। বারবার পাইপলাইনের কাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে পুজোর মুখেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয়দের।