• কথ্য ভাষায় ফিরুক সংস্কৃত! দেবীপক্ষের সূচনায় নতুন ভাবনায় রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়
    আনন্দবাজার | ০৩ অক্টোবর ২০২৪
  • মহালয়ার ঠিক আগের দিন, ১ সেপ্টেম্বর, বাঙালির সংস্কৃত ভাষাচর্চা প্রসঙ্গে উঠে এল ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র কথা। বক্তা রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ বৈদিক স্টাডিজ়-এর ডিরেক্টর ও অধ্যাপক ভাস্করনাথ ভট্টাচার্য। তিনি মনে করিয়ে দিলেন, বাণীকুমার-পঙ্কজ মল্লিক-বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের সাবেকিয়ানার ছোঁয়ায় চণ্ডীপাঠ এক সময়ে নিত্যচর্চার বিষয় ছিল। কালের নিয়মে পুঁথির বদলে কাগজের বই এবং ইদানীং ইন্টারনেট থেকে পড়া হয় সেই সব মন্ত্র। তবে, কথ্য ভাষা হিসাবে সংস্কৃতের ব্যবহার আগের তুলনায় অনেকটাই কম।

    নতুন করে কি সংস্কৃতের দৈনিক চর্চা সম্ভব?

    এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই এক বিশেষ আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ এবং ইন্টারনাল কোয়ালিটি অ্যাসিয়োরেন্স সেল। বিভাগীয় প্রধান অতনু আঢ্য জানিয়েছেন, পরীক্ষা এবং অন্যান্য কাজের জেরে গত ১৯ অগস্ট ‘বিশ্ব সংস্কৃত দিবস’ পালন করা হয়ে ওঠেনি। তাই সেই দিনটিকে স্মরণ করেই ১ সেপ্টেম্বর 'অবজ়ারভেন্স অফ ওয়ার্ল্ড সংস্কৃত ডে' শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

    অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ বৈদিক স্টাডিজ়-এর ডিরেক্টর ও অধ্যাপক ভাস্করনাথ ভট্টাচার্য এবং অন্যান্য বিশিষ্ট জনেরা। নিজস্ব চিত্র।

    এ দিনের অনুষ্ঠানটির সূচনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দীপককুমার রায়। পরিচালনায় সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক প্রশান্তকুমার মহলা। বাঙালির সংস্কৃত চর্চা নিয়ে উপস্থিত পড়ুয়া, গবেষক এবং ফ্যাকাল্টি সদস্যদের সঙ্গে স্পিকার হিসাবে আলোচনা করেন অধ্যাপক ভাস্করনাথ ভট্টাচার্য।

    সভায় স্পিকার আন্তর্জাতিক স্তরে সংস্কৃত পুঁথি, নথি, ম্যানুস্ক্রিপ্টের চর্চা কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রাচীন ভাষা নিয়ে কী ধরনের কাজ করে চলেছে, তার উপর বিশেষ ভাবে আলোকপাত করেন। সাবেকিয়ানার আদলে নয়, বরং প্রযুক্তির সাহায্যে কী ভাবে সংস্কৃত ভাষার চর্চা বৃদ্ধি করা সম্ভব এবং তা কী ভাবে সংস্কৃতিকে রক্ষা করতে পারবে, তা নিয়ে আলোচনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অফ আর্টস, কমার্স অ্যান্ড ল-এর ডিন অধ্যাপক অনিরুদ্ধ দাস।

    অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জিতুমণি শর্মা, যিনি সংস্কৃত ভাষা নিয়ে চলা গবেষণা সংক্রান্ত বিষয়ে বক্তব্য পেশ করেন। একই সঙ্গে এ-ও জানান, ওই প্রতিষ্ঠানের অনুমোদনে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে নন-ফর্মাল সংস্কৃত এডুকেশন চালু হতে চলেছে, যার মাধ্যমে উল্লিখিত বিষয়ে সার্টিফিকেট এবং ডিপ্লোমা কোর্স করার সুযোগ পাওয়া যাবে।

    সূত্রের খবর, চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এই কোর্সগুলির আনুষ্ঠানিক সূচনা হতে চলেছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত বিভাগে স্নাতক স্তরে ১০০ জনেরও বেশি এবং স্নাতকোত্তর স্তরে ৫০ থেকে ৬০ জন পড়ুয়া রয়েছেন। সংস্কৃত বিভাগের প্রধানের আশা, বিশ্ববিদ্যালয়ের নন-ফর্মাল সংস্কৃত এডুকেশনের হাত ধরে আরও অনেক বেশি পড়ুয়া এই বিষয়টি নিয়ে পড়াশোনা তো বটেই, দৈনিক কথোপকথনেও এই ভাষার ব্যবহার সাবলীল ভাবে করতে পারবেন। আর একের বেশি ভাষার জ্ঞান পেশাগত ভাবেও তাঁদের দক্ষ করে তুলবে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)