• বায়নার অপেক্ষায় বহু ঢাকি
    আনন্দবাজার | ০৩ অক্টোবর ২০২৪
  • দেবীপক্ষ শুরু। অথচ, মন খারাপ হাওড়ার সাঁকরাইলের কালো রুইদাসের। ঢাকিদের বায়না আগের তুলনায় কম।

    হুগলির গোঘাটের শ্যামবাজার রুইদাসপাড়ার অনেক ঢাকি বসে পুজো কমিটির ডাকের প্রতীক্ষায়। বাজার কেন মন্দা, তার পিছনে জোড়া কারণ দেখছেন তাঁরা: আর জি কর কাণ্ড এবং বন্যা।

    রুইদাসপাড়ায় ৩৫ ঘর ঢাকির বাস। প্রৌঢ় জয়দেব রুইদাসের শঙ্কা, ‘‘করোনা-পর্বের পরে এ বছরেও আমাদের ভুগতে হবে। বন্যা এবং আর জি করের ঘটনায় অনেকে বায়নাই পাইনি।’’ অনেকে জানান, ধরাবাঁধা পুজোয় ডাক পেলেও ২-৩টির পরিবর্তে একটি ঢাক চাওয়া হচ্ছে। জয়দেব জানান, বছর দশেক ধরে ছেলেকে নিয়ে তিনি কলকাতার একটি সর্বজনীন পুজোয় যাচ্ছেন। তবে ওই কমিটি মজুরি বাড়ানো যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।

    বাপি রুইদাস ডাক পাননি। তিনি জানাচ্ছেন, দিনে ৫০০ টাকা মজুরি বাড়ানোর দাবি তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যা পরিস্থিতি, সেই দাবি তোলার উপায় নেই। ডাকের অপেক্ষায় লক্ষ্মীচরণ, মহাদেব, মনোমত রুইদাসেরাও। তাঁরা জানান, চতুর্থীতে কলকাতার শোভাবাজার, শ্যামবাজার বা শিয়ালদহে চলে যাবেন। সেখানে অনেক পুজো কমিটি বায়না করতে আসে। বায়না না পেলে ফিরে আসবেন। কলকাতা বা ভিন্‌ রাজ্যে পুজোর ৫ দিন ঢাকিপিছু রোজগার ১০-১৫ হাজার টাকা। হুগলি বা আশপাশের জেলায় মেলে দিনে হাজার টাকার মতো।

    মহিলা ঢাকিদের দলের প্রায় ৩০ শতাংশ বায়না কম হয়েছে বলে জানান আরামবাগের রামনগরের ‘কালীমাতা ঢাক পার্টি’ এবং বলরামপুরের ‘নিউ কালীমাতা ঢাক পার্টি’র প্রশিক্ষক ও তত্ত্বাবধায়ক দিলীপকুমার দাস জানান, বন্যার কারণে খানাকুলে দু’টি বায়না বাতিল হয়েছে। দুই দলে ২৩ জন মহিলা ঢাকি। তাঁদের মধ্যে রামনগরের চম্পা মল্লিক, বলরামপুরের মানসী দাসেরা বলেন, ‘‘বছরে ৩০-৪০ হাজার টাকা উপার্জনের বেশির ভাগই পুজোর পাঁচ দিনে আসে। এ বার তা হবে না।’’

    ঢাকিদের একাংশ বলছেন, ঢাকি হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি যাঁদের আছে, তাঁরা মাসিক ভাতা পান। দুর্গাপুজোয় এক দিন সরকারি অনুষ্ঠানে বাজানোর বরাত পান। এক ঢাকি বলেন, ‘‘ষষ্ঠীতে সরকারি অনুষ্ঠানে বাজাতে যাব। তবে সপ্তমী থেকে পুজোর বায়না পাওয়া কঠিন। পেলেও অল্প টাকায় বাজাতে হবে। এই অবস্থায় সংসার কী ভাবে চলবে?’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)