ট্রাম না-তোলা নিয়ে হাইকোর্টের শুনানির দিকে তাকিয়ে প্রতিবাদীরা
এই সময় | ০৩ অক্টোবর ২০২৪
কলকাতা থেকে ট্রাম তুলে দেওয়ার রাজ্যের সিদ্ধান্ত সামনে আসায় প্রতিবাদে সরব নাগরিক সমাজ। এ নিয়ে রীতিমতো আন্দোলন শুরু হয়েছে শহরজুড়ে। সেই প্রতিবাদের অঙ্গ হিসেবে ৫ অক্টোবর, শনিবার ট্রামের জন্য মহামিছিলের ডাকও দেওয়া হয়েছে। কলেজ স্কোয়ার থেকে শ্যামবাজার সেই মহামিছিলে নাগরিকদেরও সামিল হতে ডাক দিয়েছে কলকাতা ট্রাম ইউজ়ার্স অ্যাসোসিয়েশন। শহর থেকে ট্রাম তুলে দেওয়ার প্রতিবাদ ছিটকে আসছে দেশের বাইরে থেকেও।তবে, আজ নয়, ট্রাম তুলে দেওয়ার আশঙ্কায় প্রায় তিন বছর আগে মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলা দায়ের করেছিলেন এক মহিলা আইনজীবী। তখন সে ভাবে শুনানি হয়নি মামলাটির। গত বছর মার্চে সেই মামলার সঙ্গে যুক্ত হয় আইনজীবী অনিন্দ্য লাহিড়ির করা ট্রাম ডিপোর জমি ও সম্পত্তি বেচার অভিযোগ। কার্যত তার পর থেকেই গুরুত্ব দিয়ে ট্রাম-মামলার শুনানি শুরু হয় হাইকোর্টে। উল্লেখ্য, বছর দেড়েক আগেও ট্রাম তুলে দেওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রধান বিচারপতির আসনে বসা টিএস শিবজ্ঞানম তখনই ট্রাম তুলে দেওয়ার ব্যাপারে প্রবল আপত্তি জানিয়েছিলেন। শহরে আরও পরিকল্পিত ভাবে ট্রাম চালানোর প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তিনি।
সম্প্রতি রাজ্য সরকার ট্রাম তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকী সেই সিদ্ধান্তের কথা রাজ্য হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের কাছে লিখিত ভাবে জানিয়েও দিয়েছে। সেখানেই রয়েছে পুরোনো ট্রাম-মামলাটি। যদিও রাজ্যের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনও শুনানি হয়নি। প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে শুনানির তালিকায় ওই মামলা ঝুলে রয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, সেই শুনানির দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন ট্রাম-প্রেমীরা।
তার কারণ, গত বছরের মার্চে ট্রামের সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলায় প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ সেই সম্পত্তি বিক্রিতে স্থগিতাদেশ জারি করে। সেই রায় এখনও বহাল রয়েছে। গত বছর জুনে দেওয়া সেই অন্তবর্তী রায়ে হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ শহরের ঐতিহ্যের অঙ্গ ট্রাম তুলে দেওয়ার ব্যাপারে প্রবল আপত্তি জানায়। আদালতের বক্তব্য, শুধু হেরিটেজ হিসেবেই নয়, ট্রাম শহরকে দূষণের হাত থেকেও বাঁচাতে পারে। ‘দ্রুত’ গতির শহরে ট্রামের মতো ধীর গতির যান চালানোর বিরোধিতা করে রাজ্য। পর্যাপ্ত যাত্রী না-হওয়ারও যুক্তি দেয়।
হাইকোর্ট পাল্টা যুক্তি দেয়, যে ভাবে ইউনেস্কোর স্বীকৃতি পাওয়া দুর্গাপুজো নিয়ে গর্ব করে বাংলা, তেমনই ট্রামও এ শহরের গর্ব। তাই তাকে তুলে দেওয়ার মতো কোনও পদক্ষেপে সায় দেবে না হাইকোর্ট। প্রয়োজনে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ বা পিপিপি মডেলে চালানো যায় কি না, তা খতিয়ে দেখার পক্ষে মত দেয়। এই প্রসঙ্গে বিদেশের মতো আমূল সংস্কার করেও ট্রাম রাখার পক্ষে সওয়াল করে হাইকোর্ট। এর জন্য সরকারকে এক্সপার্ট কমিটি গড়ে দেয় হাইকোর্ট।
আইনজীবী অনিন্দ্য বলেন, ‘ট্রাম তুলে দেওয়া নিয়ে রাজ্যের সিদ্ধান্তের পাল্টা বক্তব্য আদালতে পেশ করব। যে কোনও দিন মামলাটির শুনানি হওয়ার কথা।’ নাগরিক সমাজ তাকিয়ে রয়েছে সেই শুনানির দিকেই।