• 'ফোন করলাম, তবু জবাব দেননি পিএম', উষ্মা মমতার
    এই সময় | ০৩ অক্টোবর ২০২৪
  • এই সময়: ধর্ষণ রুখতে দেশজুড়ে কঠোর আইন তৈরির প্রস্তাব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীক দু’বার চিঠি দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠির জবাব আসেনি প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে। এমনকী এই আইন তৈরির প্রস্তাব দিয়ে নমোকে ফোনও করেছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তবে ফোন ধরেননি প্রধানমন্ত্রী, কল-ব্যাকও করেননি— এমনই অনুযোগ করেছেন মমতা। তৃণমূলের দলীয় মুখপত্রের উৎসব সংখ্যার শীর্ষ নিবন্ধে মুখ্যমন্ত্রী নিজেই এ কথা লিখেছেন।এই নিবন্ধে মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘তাঁকে (প্রধানমন্ত্রীকে) ফোনে চেষ্টা করলাম। তিনি বোধহয় ফোন ধরার সময় পাননি। প্রত্যুত্তরে ফোনও করেননি। দেখলাম, শুনলাম, অপেক্ষা করলাম। তারপর আমি মেয়েদের অধিকার রক্ষার জন্য যা যা করা দরকার, সেগুলো করেছি। উনি কোনও পদক্ষেপ না-করে ওঁর কাজ করেছেন। তাতে আমার দুঃখ নেই, এটাই স্বাভাবিক।’ মমতার পাশাপাশি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও ধর্ষণ-রোধে কঠোর কেন্দ্রীয় আইনের পক্ষপাতী ছিলেন। কেন্দ্র যদি এই আইনের জন্য সংসদে বিল পেশ না করে, তা হলে তিনি নিজে প্রাইভেট মেম্বার বিল পেশ করবেন বলে জানিয়েছিলেন অভিষেক।

    ধর্ষণ রুখতে ভারতীয় ন্যায় সংহিতায় সংশোধন অথবা নতুন কঠোরতর কেন্দ্রীয় আইন আনার ব্যাপারে কেন্দ্র কোনও উদ্যোগ না-নেওয়ায় ইতিমধ্যে বিধানসভায় ‘অপরাজিতা বিল, ২০২৪’ পাশ করিয়েছে রাজ্য। কেন রাজ্য সরকারকে এই উদ্যোগ নিতে হলো, বিধানসভায় তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। আরজি করের মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি রুখতে রাজ্য সরকার যে এই ধরনের ঘটনায় দ্রুত তদন্ত, দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির পক্ষপাতী— সেটা বারবার তিনি বলেছেন। রাজনৈতিক মহলের একাংশের ব্যাখ্যা, রাজ্য আন্তরিক ভাবে তা চাইলেও কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার যে তাতে উৎসাহী নয়, তাঁর লেখার মধ্যে দিয়ে সেটাই তুলে ধরতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

    তৃণমূলের মুখপত্রের উৎসব সংখ্যায় ‘কেন এই আইনটা করলাম? কেন? কেন? কেন?’ শীর্ষক নিবন্ধে নতুন তথ্য দিয়ে মমতা জানিয়েছেন, তিনি ফোন করেও এই ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছিলেন। সাড়া আসেনি তাঁর দিক থেকেই। বুধবার নজরুল মঞ্চে মমতা এই উৎসব সংখ্যা প্রকাশ করেছেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজ্যসভায় বিজেপির সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘এই বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর যা বলার বলবে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর কথার কোনও প্রভাব নেই জনমানসে। কেন্দ্রীয় আইনেই ধর্ষণে কঠোর সাজা দেওয়ার বন্দোবস্ত রয়েছে। তারপরেও রাজ্য সরকারের গাফিলতিতে কামদুনির ধর্ষকরা ছাড়া পেয়ে গিয়েছে।’

    আরজি করের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় বিজেপি, সিপিএম-সহ বিরোধী দলগুলি রাজনীতি করতে মাঠে নেমে পড়লেও এই ঘটনায় জুনিয়র ডাক্তার, নাগরিক সমাজের প্রতিবাদ অন্যায্য নয় বলে পর্যবেক্ষণ তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের। মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘আরজি কর হাসপাতালের মর্মান্তিক ঘটনায় আমার হৃদয় জ্বলে ছারখার হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছিল, আমার পরিবারের কেউ যেন চলে গেল। কোনও মানুষই এটা মেনে নিতে পারবে না। আমারও বাড়িতে মেয়ে আছে। আমিও একজন অভিভাবিকা। আমি বুঝি যন্ত্রণা কোথায় বিদ্ধ করে, কেন শাস্তির দাবিতে মানুষ উদ্যত হয়।’

    আরজি কর নিয়ে জুনিয়র ডাক্তার, নাগরিক সমাজের সঙ্গে বাম, বিজেপি, কংগ্রেস লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। ধর্ষণের ঘটনার প্রতিবাদে বিরোধীদের এই আন্দোলনকে স্রেফ রাজনীতি বলেই মনে করছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য, এমন একটি গুরুতর বিষয় নিয়েও বিরোধীরা রাজনীতি করে। আরজি করের মেয়েটার কথা ভেবে জ্বলে গিয়েছি আমি। তাই চেয়েছি দোষীদের নিকৃষ্টতম শাস্তি।’

    আরজি কর নিয়ে জুনিয়র ডাক্তার ও নাগরিক সমাজের আন্দোলনের কোনও সমালোচনা করেননি অভিষেকও। তৃণমূলের দলীয় মুখপত্রের উৎসব সংখ্যায় ‘বাংলা সর্বদা নারীর ক্ষমতায়নের ধাত্রীভূমি’ শীর্ষক নিবন্ধে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক লিখেছেন, ‘আমাদের দাবি একটাই, ধর্ষণ বিরোধী কঠোর আইন। যা বাস্তবায়িত করতে মা-মাটি-মানুষের সরকার ইতিমধ্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিল এনেছে। আমরা আশাবাদী, দ্রুত এই বিল আইনে পরিণত হবে।’ অভিষেক অবশ্য এ দিন নজরুল মঞ্চে ছিলেন না।

    কেন্দ্রকে লেখা মমতার চিঠির প্রেক্ষিতে কেন্দ্রের নারী-শিশু-সমাজকল্যাণ মন্ত্রী অন্নপূর্ণা দেবী যে জবাব দিয়েছিলেন, তাতে দাবি করা হয়েছিল বর্তমান আইনেই ধর্ষণের ঘটনায় কঠোর শাস্তির বিধান রয়েছে। যদিও কেন্দ্রের এই যুক্তি মানতে নারাজ মমতা। নিবন্ধে তিনি লিখেছেন, ‘কেন্দ্রের গা-ছাড়া মনোভাব দেখে যখন বুঝলাম, ওরা কিছু করবে না তখন আমাদেরই পদক্ষেপ করতে হলো। ওরা শুধু পারে বাংলার বদনাম করতে। সেই খেলাতেই ওরা নেমেছে।’

    মঙ্গলবার লেকটাউনের শ্রীভূমিতে শারোদৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নজরুল মঞ্চে এ দিন দলীয় মুখপত্রের উৎসব সংখ্যা প্রকাশের পাশাপাশি দক্ষিণ কলকাতায় একাধিক পুজোও উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ভার্চুয়ালি জেলায় অনেকগুলি পুজোরও উদ্বোধন করেছেন। নজরুল মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বলেন, কেন পুজো করব? উৎসব করব? আমাদের তো বারো মাসে তেরো পার্বণ। আমরা সব কাজ করি। ধর্ম মানি। আমাদের রীতি হচ্ছে সর্বধর্ম সমন্বয়।’
  • Link to this news (এই সময়)