ছেলের জন্য ঘর বানিয়ে দিয়েছিলেন বাবা, সেখানে আর ঢুকবে না সৌম্য
এই সময় | ০৩ অক্টোবর ২০২৪
দেবাশিস দাস
ছেলে ক্লাস নাইনে পড়ে। পড়াশুনোর চাপ বেড়েছে। তাই তাকে ছাদের উপরে টিনের ছাউনি দিয়ে ছোট্ট একটা ঘর করে দিয়েছিলেন পেশায় রিকশা চালক শঙ্কর শীল। তাঁর মেধাবি বড় ছেলে সেই ঘরে পড়াশুনো করবে, এই আশা নিয়ে। মহালয়ার রাত শেষে দেবী পক্ষের প্রথম সকালেই সেই আশায় ইতি পড়লো। ওই ঘরে আর কোনও দিন যাবে না শঙ্করের বড় ছেলে সৌম্য। বুধবার সকালে, প্রাইভেট টিউশন নিতে গিয়ে আর্থ মুভারের ধাক্কায় তার মৃত্যু হয়েছে।শঙ্কর শীলের বাড়ি রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের গীতানগরে। তাঁর বাড়ির সামনে দিয়ে এখনও বয়ে যায় প্রায় বুজে যাওয়া রেনিয়া খাল। বাড়ি থেকে বেরিয়ে সরু বাঁশের সাঁকো টপকে আসতে হয় বড় রাস্তায়। সেই রাস্তা দিয়েই বুধবার সকাল সাতটা নাগাদ সাইকেল চেপে দেড় কিলোমিটার দূরে, নবম শ্রেণির পড়ুয়া সৌম্য তাঁর প্রাইভেট টিউটর সন্তোষ রায়ের বাড়িতে গিয়েছিল।
মাস্টারমশাই সন্তোষ বলেন,‘ও আমার ঘরের দরজা ধাক্কা দিয়েছিল। আমি দাঁড়াতে বলি। দরজা খুলতে যাবো সেই সময়ে আচমকা একটা বিকট আওয়াজ শুনতে পাই। দরজা খুলে দেখি আর্থ মুভারের পিছনের অংশ নারকেল গাছে ঠেসে রয়েছে। আর তার নীচে রাস্তার রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে সৌম্য। কোলে নিয়ে ওকে গাড়িতে তুলে দিই। পাড়ার ছেলেরা নিয়ে হাসপাতালে যায়। আমি ওর মাকে ফোন করে আমার বাড়িতে আসতেও বলি।’
সৌম্য গঙ্গাপুরী স্কুলের নবম শ্রেণীর ছাত্র ছিল। সন্তোষের কাছেই সব সাবজেক্ট পড়ত। তাঁর কথায়, ‘ছেলেটি মেধাবী ছিল। একটা সম্ভবনার অকালেই মৃত্যু হলো।’ বুধবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায় ওই বাড়িতে তখনও পড়ে রয়েছে সৌম্যর পড়ার ব্যাগ আর সাইকেল। বাড়ির সামনের গর্তে জমা জল রক্তের সঙ্গে মিশে টকটকে লাল।
দাদার কাছে গিয়েছে মা-বাবা। এ টুকুই জানে সৌম্যর বছর ছয়েকের ছোট ভাই সায়ন। পাশেই প্রতিবেশীর বাড়ির উঠোনে ঘুরছিল সে। ডাকতেই উত্তর দেয়,‘সকালে বাবা-মা দাদার কাছে গিয়েছে। এখনও আসেনি। আমার আজ স্কুল ছুটি।’ সন্তানের এমন পরিণতিতে কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন মা মাধুরী। বাবা শঙ্করের কথায়,‘অনেক আশা ছিল ওকে নিয়ে। সব শেষ হয়ে গেল।’
বাসিন্দাদের অভিযোগ,‘আর্থমুভারের চালকরা বেশির ভাগ সময়ে নেশা করে চালান। অনেক চালক আবার খালাসিকে এই খন্দময় রাস্তায় আর্থ মুভার চালানোর প্রশিক্ষণও দেন।’ তাঁদের বক্তব্য, ‘আর্থমুভারটি সোজাই যাচ্ছিল। আচমকা পিছিয়ে এসে পিষে দেয় ছেলেটিকে।’
কলকাতা পুরসভার ১১৩ নম্বর ওয়ার্ডের পাশের রাস্তা দিয়েই শুরু রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ৩৫ নম্বর ওয়ার্ডের। এই পথ দিয়ে নিত্য যাতায়াত করেন গীতানগর, নতুন পল্লির বাসিন্দারা। যা রাজপুর-সোনারপুরের আওতায়। স্থানীয় বাসিন্দা পল্লব মণ্ডল বলেন,‘দুই পুরসভার সীমানায় বসবাস করাই আমাদের দুর্ভাগ্য। এখানে রাস্তা বছরের পর বছর বেহাল থাকে। পানীয় জল নেই, জঞ্জাল সাফাই ঠিক মতো হয় না। বর্ষার মরশুমে জল বন্দি হয়ে থাকতে হয়। নিকাশি বলে কিছু নেই। আলো থাকলেও তা টিমটিম করে। অথচ আমরাও নিয়ম করে পুরসভায় কর দিয়ে থাকি।’