তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের বিচার চেয়ে মহালয়ার দিনও গর্জন উঠল শহর জুড়ে। আর দেবীপক্ষের সেই সূচনা-লগ্নেই জবাব এল, কেন উৎসব, সেই প্রশ্নেরও।
কেন ‘উৎসবে ফেরা’র কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী? চিকিৎসকদের আন্দোলনের মধ্যে বিস্তর বিতর্ক হয়েছিল তাঁর সেই ডাকে। এ বার তার জবাবও দিলেন তিনি। নিজেই সেই প্রশ্ন টেনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘‘অনেকে বলেন, পুজো কেন করছো? উৎসব কেন করছো?’’ তাঁর জবাব, ‘‘আমরা সব কাজ করি আবার ধর্ম-কর্মও মানি।’’ সেই সঙ্গেই তৃণমূল নেত্রী মনে করিয়ে দেন, ‘‘আরে, বাঙালির ১২ মাসে ১৩ পার্বণ!’’
মহালয়ার দিনও আর জি কর হাসপাতালের ঘটনার বিচার চেয়ে পথে নেমেছে চিকিৎসক ও নাগরিক সমাজ। বিরাট মিছিল করে বুধবার বিকালে তাঁরা ধর্মতলায় সভা করেছেন। এই আবহে প্রায় একই সময়ে পুজো সংক্রান্ত দলীয় ও সরকারি কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রীও। নজরুল মঞ্চে দলীয় মুখপত্রের ‘উৎসব সংখ্যা’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন উৎসব, তার ব্যাখ্যা দিয়ে সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘‘যাঁরা মানুষের সেবা করেন, তাঁরা কাজ করেন নিঃশব্দে। যাঁরা কাজ করেন না, তাঁরা বকেন বেশি! বকম বকম!’’ সেই সূত্রেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমি চাই কথা কম, কাজ বেশি।’’ সাম্প্রতিক বন্যায় দুর্গত এলাকার মানুষের পাশে থাকার জন্য দল ও প্রশাসনের কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি। সেই সঙ্গে ‘এ রাজ্যে যদি একটা ঘটনাও ঘটে তাকে অতিরঞ্জিত’ করার অভিযোগও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
দলীয় মুখপত্রে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা ‘বিশেষ রচনা’ও আর জি কর হাসপাতালের প্রেক্ষিতেই। এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করতে সরকার কতটা আন্তরিক, তা বুঝিয়ে মমতা ব্যাখ্যা করেছেন রাজ্যের ‘অপরাজিতা’ আইন তৈরির উদ্দেশ্য। মমতা লিখেছেন, ‘আর জি কর হাসপাতালের মর্মান্তিক ঘটনায় আমার হৃদয় জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছিল, আমার পরিবারেরই কেউ যেন চলে গেল।’’ তাঁর লেখায়, ‘‘আমিও এক জন অভিভাবক— আমি বুঝি যন্ত্রণা কোথায় বিদ্ধ করে, কেন শাস্তির দাবিতে মানুষ উদ্যত হয়।’’ তবে এই ঘটনা নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে বলেও লেখায় অভিযোগ তুলেছেন তিনি। মমতা লিখেছেন, ‘কিছু মানুষ তা সমাজের যত ছোট অংশই হোক না কেন, প্রতিটি ঘটনায় রাজনীতি খোঁজেন। রাজনীতির রং দিয়ে অমানবিক ঘটনাকে বিকৃত ভাবে পল্লবিত কুসুমিত করে তোলেন। এটা আমি মানতে পারি না।’’ সেই সঙ্গেই এই অপরাধকে গোটা দেশের সমস্যা বলে উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি-শাসিত একাধিক রাজ্যে এই রকম অপরাধের সবিস্তার তথ্য-পরিসংখ্যান দিয়েছেন। এ বারের অনুষ্ঠানে অবশ্য আগের তুলনায় আড়ম্বর কম ছিল।
মুখপত্রের বার্ষিক অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। গত রাতেই তিনি চোখের চিকিৎসার জন্য বিদেশে গিয়েছেন। তবে উৎসব সংখ্যায় তিনিও নারী নির্যাতন প্রতিরোধে রাজ্য সরকারের পদক্ষেপগুলি উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গেই মহিলাদের ক্ষমতায়নে রাজ্যের ইতিবাচক মনোভাব স্পষ্ট করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ভোটে ছাত্রীদের জন্য ৫৫% সংরক্ষণের দাবি তুলেছেন। তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ‘রাত্তিরের সাথী’র মতো যে সিদ্ধান্ত সরকার প্রত্যাহার করে নিয়েছে, তা সরাসরিই সমর্থন করেছেন অভিষেক।
কলকাতার আরও একাধিক পুজোর এ দিন সূচনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। চেতলার অনুষ্ঠান থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার ৩২০টি পুজোরও ভার্চুয়াল উদ্বোধন করেছেন।