কর্মবিরতির পথ থেকে সরে এলে আন্দোলনের বিকল্প পন্থা কী? সিনিয়রদের সঙ্গে বৈঠকে জুনিয়র ডাক্তারেরা
আনন্দবাজার | ০৩ অক্টোবর ২০২৪
জুনিয়র ডাক্তারেরা দ্বিতীয় বার পূর্ণ কর্মবিরতি শুরুর পর থেকেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে। চিকিৎসক মহলের একাংশও এই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। কিন্তু পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্তের পথ থেকে সরে দাঁড়ালে, কী হতে পারে আন্দোলনের বিকল্প পন্থা? সেই বিষয়টি নিয়ে চিন্তা ভাবনা চলছে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্টের অন্দরেও। বৃহস্পতিবার আরজি কর হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠক শুরুর আগে এ কথা জানালেন আন্দোলনকারী অন্যতম প্রতিনিধি কিঞ্জল নন্দ। সিনিয়র ডাক্তারদের থেকেও পরামর্শ নিচ্ছেন তাঁরা। কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত বা আগামী আন্দোলনের রূপরেখা কী রকম হবে, তা নিয়ে বৃহস্পতিবারের বৈঠকে আলোচনা করতে পারেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। পুজোর সময় আন্দোলন কোন পথে চলবে, সেই বিষয়টিও উঠে আসতে পারে বৈঠকে।
পুজোর দিনগুলিতে কী হবে আন্দোলনের অভিমুখ? কর্মবিরতি কি তুলে নেওয়ার কোনও পরিকল্পনা রয়েছে? তা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে কিঞ্জল বলেন, “বিষয়টি আলোচনা সাপেক্ষ। আলোচনা চলছে। আলোচনা করে আমরা এই বিষয়ে জানাব। সিনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গেও আমাদের কথা হবে। বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে আমরা কথা বলব। তাঁরা কী চাইছেন, সেটা বুঝব। কারণ, আন্দোলনের শুরু থেকে তাঁরা সঙ্গে রয়েছেন।” চিকিৎসক মহলেই একাংশের মত, জুনিয়র ডাক্তারেরা আন্দোলন চালিয়ে যান। কিন্তু পূর্ণ কর্মবিরতির পথ থেকে তাঁরা সরে আসুন। এই নিয়েও প্রশ্ন করা হয়েছিল কিঞ্জলকে। এই ধরনের একটি মতামত যে উঠে আসছে, সে কথা মানছেন তিনিও। কিঞ্জল জানিয়েছেন, সেই বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে। তবে কর্মবিরতি এখনও চলছে।
জুনিয়রদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আগে সিনিয়র ডাক্তারদের কেউ কেউ জানাচ্ছেন, আন্দোলনের কারণে যাতে সাধারণ মানুষ সমস্যায় না পড়েন— তা মাথায় রাখতে হবে। তাঁদের আশা, জুনিয়রদের সঙ্গে আলোচনায় নিশ্চয়ই আন্দোলনের একটি পথ বেরিয়ে আসবে। সিনিয়রদের বক্তব্য, আন্দোলনের প্রতি তাঁদের সমর্থন রয়েছে। তবে আন্দোলনটি যাতে আরও সুষ্ঠু ভাবে হয়, যাতে সাধারণ মানুষের অসুবিধা না হয়, সেটিই তাঁরা বোঝাতে চান জুনিয়র ডাক্তারদের। আলোচনার আগে এক সিনিয়র ডাক্তার বলেন, “আন্দোলনের অনেক অভিমুখ রয়েছে, সেগুলি নিয়েই আলোচনার প্রয়োজন। সাধারণ মানুষ যাতে কোথাও সমস্যায় না পড়েন, সেটি দেখতে হবে।” তবে কর্মবিরতির কারণে এখনও পর্যন্ত রোগী পরিষেবায় কোথাও কোনও সমস্যা হয়নি বলেই দাবি সিনিয়র ডাক্তারদের।
আরজি করের মহিলা চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পর থেকে পূর্ণ কর্মবিরতির ঘোষণা করেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। পরে সরকারের তরফে ইতিবাচক কিছু আশ্বাস পাওয়ার পর ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আংশিক ভাবে কাজে ফিরেছিলেন তাঁরা। কিন্তু সাগর দত্ত হাসপাতালে হামলার ঘটনার পর ১ অক্টোবর থেকে ফের একবার পূর্ণ কর্মবিরতি শুরু করেছেন তাঁরা। প্রথম বারের কর্মবিরতির সময়ে রোগী পরিষেবায় জুনিয়র ডাক্তারদের অভাব অনেকাংশে পূরণ করেছিলেন সিনিয়র ডাক্তারেরা। অতিরিক্ত সময় কাজ করে রোগী পরিষেবা সচল রাখার চেষ্টা চালিয়েছেন সিনিয়রেরা। তবে দ্বিতীয় বারের পূর্ণ কর্মবিরতি ঘোষণার পর থেকে সিনিয়র ডাক্তারদের একাংশও আন্দোলনের বিকল্প পন্থা খোঁজার প্রস্তাব দিয়েছেন।
শুধু সিনিয়র ডাক্তারেরা নন, গত ৩০ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টে শুনানির পর টানা আট ঘণ্টা ধরে চলা জুনিয়র ডাক্তারদের জিবি বৈঠকেও এই বিষয়টি উঠে এসেছিল। সূত্রের খবর, জিবি বৈঠকে পূর্ণ কর্মবিরতিতে ফেরার সিদ্ধান্ত সমর্থন করেননি অনেকেই। পূর্ণ কর্মবিরতিতে না গিয়ে বিকল্প কোনও পথে কি আন্দোলন জিইয়ে রাখা যায় না? এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল সেই রাতের বৈঠকেও। বুধবার ধর্মতলায় জুনিয়র ডাক্তারদের সভামঞ্চ থেকে ‘জয়েন্ট প্লাটফর্ম অব ডক্টর্স’-এর প্রতিনিধি পুণ্যব্রত গুণও প্রস্তাব দিয়েছিলেন মানুষের কথা বিবেচনা করে আন্দোলনের পরবর্তী কর্মসূচি স্থির করার জন্য। কর্মবিরতি ছাড়াও যে আন্দোলনকে জিইয়ে রাখার একাধিক উপায় রয়েছে, সেটিও মনে করিয়ে দিয়েছিলেন তিনি।