দশকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বৃষ্টি! ধসে বেহাল দার্জিলিং, দুশ্চিন্তা
এই সময় | ০৪ অক্টোবর ২০২৪
এই সময়, শিলিগুড়ি: পুজোর আগে টানা বৃষ্টি ও ধসের জেরে আরও বেহাল হচ্ছে দার্জিলিংয়ের অবস্থা। একদিকে পুজোর দিনগুলোতে রাজ্যের প্রায় সর্বত্র বৃষ্টির পূর্বাভাসে দুশ্চিন্তায় আমজনতা। তার উপর বাঙালির অন্যতম গন্তব্য পাহাড়েও এমন দুর্যোগের ছবিতে পর্যটকদের চিন্তা বাড়ছে।
পাহাড় তথা উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে গত রবিবারই শিলিগুড়িতে পৌঁছে প্রশাসনিক বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাঝে কিছু সময়ের জন্য বৃষ্টি কিছুটা ধরলেও তারপরে টানা প্রায় ২৪ ঘণ্টা বৃষ্টির জেরে ফের ব্যাপক ধসের কবলে দার্জিলিং। প্রাণ গিয়েছে এক বৃদ্ধেরও। জখম হয়েছেন বেশ কয়েকজন।পুজোর মরশুমে এই পরিস্থিতি পাহাড়ের পর্যটন ব্যবসায় প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। এই মুহূর্তে দার্জিলিংয়ে শ’পাঁচেক পর্যটক আছেন। যদিও তাঁরা এখনই সেখান থেকে ফেরার কথা ভাবছেন না। তবে ফেরার রাস্তা খোলা রয়েছে কি না, সে বিষয়ে খোঁজখবর নিতে শুরু করেছেন তাঁরা। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বুধবার রাতে দার্জিলিং মহকুমায় অন্তত শ’খানেক এলাকা ধসের কবলে পড়েছে।
দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিকের বক্তব্য, সেখানকার পর্যটন ধারণ ক্ষমতা ৩০-৩৫ হাজার। এ বার পুজোর মরশুমে বুকিং এখনও পর্যন্ত মোটের উপর ভালো হলেও বুধবার রাতের দুর্যোগের পর বুকিং বাতিলের আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।
স্থানীয় ও প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ধসে প্রাণ গিয়েছে নাম রঘুবীর রাই (৭৮) নামে সুখিয়াপোখরির এক বাসিন্দার। শিলিগুড়ি-দার্জিলিং রুটে জোড়বাংলোয় ধস নামায় ৫৫ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। দার্জিলিংয়ের রক গার্ডেন যাওয়ার পথেও ধস নেমেছে। ফলে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ।
ধস নামে কালিম্পংয়ের চিত্রে এলাকাতেও। তবে প্রশাসনের তরফে ধস সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করার কাজ চালানো হচ্ছে দ্রুত গতিতে। তিস্তার জল বাড়ায় শিলিগুড়ির কাছে তিস্তা লাগোয়া চমকডাঙির ৫০টি পরিবারকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আবহাওয়া দপ্তরের হিসেব, বুধবার রাতে বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ১৮৪ মিলিমিটার। বেসরকারি একটি সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাতে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বেশি— প্রায় ২৬৯ মিলিমিটার। দার্জিলিংয়ের কুপার রোডে স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের সাহায্যে সেখানে বৃষ্টির পরিমাণ মাপা হয়। গত দশ বছরে দার্জিলিংয়ে এক রাতে এমন বিপুল পরিমাণ বৃষ্টির রেকর্ড মিলছে শুধু ২০২১-এর ২০ অক্টোবর। সে বার এক রাতে ২৪২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল।
আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস, বিপদ এখনও কাটেনি। শুক্রবার পর্যন্ত দার্জিলিং, কালিম্পং ও সিকিমে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের গ্যাংটক শাখার আধিকারিক গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘বাংলাদেশের দক্ষিণ ভাগে একটি নিম্নচাপ অবস্থান করছে। তার জেরেই এই পরিস্থিতি। ৫ অক্টোবর পর্যন্ত এই এলাকায় বৃষ্টিপাত চলবে। কোনও কোনও এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতও হতে পারে।’
এ বছর মে মাস থেকে টানা বৃষ্টিতে সিকিমের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কালিম্পং বার বার বিপর্যস্ত হলেও দার্জিলিংয়ে এতদিন তেমন একটা প্রভাব পড়েনি। বুধবার রাতের ভারী বৃষ্টিতে এখন আতঙ্কিত দার্জিলিংয়ের বাসিন্দারাও। বিশেষ করে পুজোর মুখে এমন ভারী বৃষ্টির জেরে যান চলাচল ব্যাহত হলে পর্যটন মার খাবে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
জিটিএর অন্যতম পরামর্শদাতা এসপি শর্মা বলেন, ‘পুজোর সময়ে গোটা পাহাড় উৎসবে মেতে থাকে। সেই সময়ে এমন ভারী বৃষ্টি অবশ্যই চিন্তার কারণ। পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হচ্ছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকেও সতর্ক করা হয়েছে।’
আবহাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা কাটছে না পর্যটন ব্যবসায়ীদের। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সাধারণ সম্পাদক সম্রাট সান্যালের বক্তব্য, ‘পুজোর দার্জিলিংয়ের বুকিং সিকিম কিংবা কালিম্পংয়ের চেয়ে এ বার বেশ ভালো বলতে হবে। তবে আবহাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তা থেকেই যাচ্ছে।’