মহিলাদের কাছে অনুপ্রেরণা বহরমপুরের মৃৎশিল্পী নমিতা চক্রবর্তী
বর্তমান | ০৪ অক্টোবর ২০২৪
অভিষেক পাল, বহরমপুর: বিবাহসূত্রে কলকাতা থেকে বহরমপুরের মৃৎশিল্পী পরিবারে ঠাঁই হয়েছিল নমিতা চক্রবর্তীর। স্বামী মৃৎশিল্পী, তাঁকে সাহায্য করতে গিয়ে অপটু হাতে মাটির তাল নিয়ে নাড়াচাড়া করতে করতেই আজ নমিতা নিজেই পরিপূর্ণ শিল্পী। তাঁর তৈরি মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তি স্থান পায় মুর্শিদাবাদ জেলার নামী মণ্ডপে। অন্যান্য মহিলাদের কাছে অনুপ্রেরণা মৃৎশিল্পী নমিতা।
তাঁর জন্ম ত্রিপুরার আগরতলায়। পড়াশোনা শেষ করে কলকাতার সোদপুরে জেঠুর বাড়ি থাকতেন। সেখান থেকে সম্বন্ধ করে বিয়ে হয় বহরমপুরের প্রদীপ চক্রবর্তীর সঙ্গে। বিয়ের পর থেকে স্বামীর সঙ্গে প্রতিমা তৈরির কাজে হাত লাগান। ঘরের কাজ সামলে নিছক ভালোলাগা থেকেই কাদামাটি চটকানো শুরু করেছিলেন। তারপর স্বামীর মূর্তি তৈরি দেখে দেখে শিক্ষালাভ। এখন দুর্গা থেকে সরস্বতী, বিশ্বকর্মা থেকে মনসা একের পর এক প্রতিমা গড়ে স্বামীর সঙ্গেই টেক্কা দেন তিনি।
বর্তমান সময়ে মৃৎশিল্পীদের আক্ষেপ, নতুন প্রজন্ম মাটির কাজে আসছে না। কেউ মাটির মূর্তিও বানাতে চায় না। পড়াশোনা, কম্পিউটার, মোবাইল এসব নিয়েই ব্যস্ত সকলে। নতুন প্রজন্ম না এলেও, মহিলারা বাড়ির কাজ সামলে এগিয়ে আসছেন প্রতিমা গড়ার কাজে। মাটির কারখানায় পুরুষদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে তাঁরাও রূপদান করেছেন প্রতিমার। নমিতাদের দেখে অনেক গৃহবধূ এখন স্বামীর সঙ্গে মাটির কাজে হাত লাগাচ্ছেন। কেউ কেউ নিজেরাই মাটির কাজ করে সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করছেন।
বহরমপুরের পুরনো কান্দি বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন এলাকায় নমিতা ও তাঁর স্বামীর মাটির স্টুডিও। স্বামীর সঙ্গে দিনভর সেখানেই কাজ করেন তিনি। কিছুটা দূরে কল্পনা হাউসের গলিতে ছেলেকে নিয়ে তাঁদের সংসার। ছেলে মাটির কাজ করতে একদম পছন্দ করে না বলেই আক্ষেপ করছিলেন নমিতা। তবে এবার পুজোয় কাজের চাপে সেও হাত লাগিয়েছে।
নমিতাদেবী বলেন, স্বামীর সঙ্গে নতুন সংসারে এসে ধীরে ধীরে প্রতিমা তৈরির কাজে হাত লাগাই। কিছুটা হলেও তো সংসারের হাল ধরতে পেরেছি। আমি প্রথম সরস্বতী প্রতিমা বানানো শুরু করি। প্রথম প্রথম কিছুই পারতাম না। শুধু প্রতিমার উপরে কাদা লেপে দিতাম। এখন দুর্গা, মনসা, বিশ্বকর্মা সব ঠাকুরের মূর্তি বানাই। আগে শুধু স্বামী কাজ করতেন। তাই কম অর্ডার নেওয়া হতো। এখন দুজনে মিলে একটু বেশি কাজ করতে পারি। পুজোর আগে অর্ডারও ভালো এসেছে এবার। তবে ছেলে কিছুতেই মাটিতে হাত দিতে চায় না। ওকেও কাজ শেখাতে চাই আমরা।
নমিতার স্বামী প্রদীপবাবু বলেন, আমরা আসলে পুজো করতাম। নিজেরা পুরোহিত। কখনওই কেউ মূর্তি বানানোর কাজ শিখিনি। বংশে আমি আর আমার দাদা প্রথম এই কাজে নামি। বাড়িতে বাসন্তী পুজো হতো। আমরা গিয়ে গিয়ে দেখতাম কীভাবে মূর্তি বানাচ্ছেন মৃৎশিল্পী। মায়ের আশীর্বাদে আমরা শিখে গিয়েছি। প্রথম প্রথম দুজনে মিলে ১০-১২টা দুর্গা ঠাকুর বানাতাম। এখন লোক কম, তাই ছ’-সাতটা প্রতিমা বানাই। নতুন ছেলেরা মাটির কাজ করতে একদম চায় না। তবে আমার স্ত্রীকে দেখে মহিলারা অনেকেই মাটির কাজে আসছে। -নিজস্ব চিত্র