অভিষেক পাল, বহরমপুর: বঙ্গ জীবন থেকে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে সিঙ্গেল স্ক্রিন সিনেমা হল। এবার পুজোয় সেই নস্টালজিয়াকেই তুলে ধরতে ব্যস্ত বহরমপুরের গোরাবাজার তরুণ দল। বহরমপুর তথা মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম খ্যাতনামা সিনেমা হল ছিল মোহন টকিজ। বহু খ্যাতনামা অভিনেতা এই সিনেমা হলে বসে সিনেমা দেখেছেন। তবে সেই জায়গায় এখন বহুতল শপিংমল। সিনেমা হল রয়েছে সেই মলের ভিতরে। ঝাঁ চকচকে বিল্ডিংয়ের মধ্যে সেই সিনেমা হলে গেলে অতীতের হলের কোনও স্মৃতিই খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই অতীতকে খুঁজতে গোরাবাজার তরুণ দল এবার এই বিখ্যাত হলটিকে থিম করেছে। ৪৯তম বর্ষে পুরনো মোহন সিনেমা হলের আদলে তৈরি হচ্ছে মণ্ডপ। পঞ্চমীতে হবে পুজোর উদ্বোধন।
গোরাবাজারের আব্দুস সামাদ রোডের গলির উপরে তৈরি হচ্ছে তরুণ দলের পুজো মণ্ডপ। ক্লাবের মন্দিরে দেবীর অধিষ্ঠান। সোনালি আভার দেবী মূর্তি তাক লাগাবে বলে আশাবাদী উদ্যোক্তরা। তাঁদের দাবি, বহরমপুরের বাসিন্দারা এই মণ্ডপে এলে এক মুহূর্তেই খুঁজে পাবেন মোহন সিনেমা হলের সেই পুরনো স্মৃতি ও ঐতিহ্য।
পুজোর প্রধান পৃষ্ঠপোষক অশোক দাস, সভাপতি শ্যামল দাস, সম্পাদক সুজিত চৌধুরী সকলেই প্রতিদিন সকাল থেকে পুজো মণ্ডপে থেকে কাজ বুঝে নিচ্ছেন। শ্যামলবাবু বলেন, সরু গলির উপরে মণ্ডপ তৈরি করে পুজো করতে হয়। তাই আমরা বিষয় ভাবনাগুলিও সেই রকমভাবে নির্বাচন করি। আমাদের এখানে ১৯৮৪ সালে প্রথম থিম পুজো হয়। ধীরে ধীরে নতুন নতুন ভাবনা চিন্তা হচ্ছে। পড়ার ভিতরে পুজো করতে হয়। তাই স্থানীয় বাসিন্দাদের আবেগকে আমরা সম্মান দিই। অনেক ক্লাবে যুবসমাজ থাকছে না। এখানে আমরা যেমন বয়স্করা আছি, তেমনই তরুণ প্রজন্মকে ক্লাবমুখী করার উদ্যোগ নিয়েছি। এবারের পুজোর আয়োজনে বহু কচিকাঁচা আমাদের সঙ্গে কাজ করছে। এটাই বাড়তি পাওনা। আড়ম্বর নয়, আন্তরিকতাই আমাদের পুজোর মূল কথা।
সুজিতবাবু বলেন, আমি এই পুজোর সঙ্গে ১৯৯৬ সাল থেকে যুক্ত আছি। এখানে আমাদের মন্দির সংস্কার হয়েছে। সেখানে দেবী অধিষ্ঠান করবেন। আর তাঁকে ঘিরেই তৈরি হচ্ছে মোহন সিনেমাহল। এটা আমাদের নস্টালজিয়ার সিনেমা হল। দর্শকরা এখানে এসে কয়েক মুহূর্তের জন্য পুরনো দিনে ফিরে যেতে পারবেন। এটা আমাদের পাড়ার সকলের পুজো। দশমীর তাসা নিয়ে শোভাযাত্রায় শত শত মানুষ এসে যোগদান করে। এই পুজো ঘিরে এলাকার মহিলা ও শিশুদের ব্যাপক উৎসাহ রয়েছে।
অশোকবাবু বলেন, ছোটবেলায় মোহন সিনেমা হলে অনেক সিনেমা দেখেছি। সেই সব দিনগুলির কথা মনে পড়লে আজও গায়ে কাঁটা দেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছু বদলে যেতে থাকে। পুরনো সিনেমা হলটিকে থিম হিসেবে বেছে নেওয়ায় এই পুজোর প্রতি মানুষের আলাদা আগ্রহ তৈরি হচ্ছে। -নিজস্ব চিত্র