• সুপ্রিম নির্দেশ সত্ত্বেও বেপরোয়া, এবার ব্যবস্থা চায় দুর্ভোগে জেরবার সাধারণ মানুষ
    বর্তমান | ০৪ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, শুধু জরুরি বিভাগ কেন, সবক্ষেত্রেই কাজে ফিরতে হবে জুনিয়র ডাক্তারদের। তাঁদের আইনজীবীরাও সেই মর্মেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু সাগর দত্ত হাসপাতালে চিকিৎসক নিগ্রহের ঘটনাকে ইস্যু করে ফের পূর্ণ কর্মবিরতির পথ বেছে নিয়েছেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। আর সেইসঙ্গে দুর্ভোগের রোজনামচায় ফিরে গিয়েছে রাজ্যের লক্ষ লক্ষ গরিব মানুষ, যাঁরা সরকারি হাসপাতালের পরিষেবার উপরই নির্ভর করে থাকে। তাই এবার শুরু হয়েছে ক্ষোভের বিস্ফোরণ। এমনকী এই ‘বেপরোয়া’ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা পর্যন্ত দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। আর হবে নাই বা কেন? বৃহস্পতিবারও এসএসকেএম, আর জি কর হাসপাতালে গিয়ে দেখা গিয়েছে ভোগান্তির চেনা চিত্র। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে, রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে চিকিৎসা পেতে মরিয়া আম জনতাকে। তারপরও অনেককেই ফিরে যেতে হচ্ছে একরাশ ক্ষোভ নিয়ে। আর জি কর থেকে এসএসকেএম, সব হাসপাতালেই এক চিত্র। মিনাখাঁর নজরুল মোল্লাকে হাসপাতালে এনেছিলেন বাড়ির লোক। অনবরত বমি হচ্ছে। সকাল থেকে এসএসকেএমের জরুরি বিভাগে তাঁর চিকিত্সাও হয়েছে। কিন্তু তারপরই হাসপাতাল বলে দিয়েছে, অন্যত্র নিয়ে যান। কারণ, এখানে বেড নেই। এই অবস্থায় ‘রেফার’-এর কাগজ নিয়ে জরুরি বিভাগের সামনেই হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন পরিজনরা। আশপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করছিলেন, ‘এনআরএস না ন্যাশনাল, কোথায় নিয়ে গেলে ভালো হয় বলুন তো?’


    মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরা, কিংবা স্ট্রেচারে ধুঁকতে থাকা মানুষগুলো টলাতে পারছে না সিদ্ধান্ত। সিনিয়র ও জুনিয়র ডাক্তারদের কনভেনশনের পরও সাধারণ মানুষের সুরাহা কিছু হয়নি। উত্সবের আবহে এমনিতেই ডাক্তারদের আকাল থাকে। সেই সময় জুনিয়রদের কর্মবিরতিতে আরও বিপদে পড়তে পারেন সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি কর্মবিরতির বয়স প্রায় দু’মাস হতে চলেছে। সিনিয়র চিকিত্সকদেরও বয়স হয়েছে। আর কতদিন ‘ওভারটাইম’ করবেন তাঁরা? এমন প্রেক্ষিতে কনভেনশন থেকে জুনিয়রদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের পরামর্শই দিয়েছিলেন সিনিয়ররা। তারপরও পরিস্থিতি বদলায়নি। তাই প্রশ্ন উঠছে, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশই যাঁরা পরোয়া করছেন না, হাইকোর্টের মামলায় তাঁদের কি নড়ানো যাবে? মামলাকারী রাজু ঘোষের দাবি, ‘আগেই জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। তারপরও কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছেন তাঁরা। এতে মানুষের ভোগান্তি তো হচ্ছেই, আদালতের অবমাননাও হচ্ছে। তাই জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতি তোলার জন্য রাজ্যকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিক আদালত।’ মামলাকারীর আইনজীবী তৌসিফ আহমেদ জানিয়েছেন, ‘আইনের বাইরে গিয়ে জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি পালন করছেন। তাঁরা এটা করতে পারেন না।’ একদিকে আজ, শুক্রবার প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানির সম্ভাবনা, অন্যদিকে দিল্লি থেকে ধেয়ে আসা ‘অস্বস্তি’। সূত্রের খবর, জুনিয়র ডাক্তারদের আইনজীবীরাও চিকিত্সকদের পূর্ণ কর্মবিরতির সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। জুনিয়রদের নাকি ইতিমধ্যেই কর্মবিরতি তুলে নেওয়ার জন্য বার্তা পাঠানো হয়েছে। কেন? কর্মবিরতি তাঁরা চালিয়ে গেলে সুপ্রিম কোর্টে সবার আগে প্রশ্নের মুখে পড়বেন আইনজীবীরাই।
  • Link to this news (বর্তমান)