পুজোর মরসুম এসে পড়েছে। কিন্তু পাহাড়ের পরিস্থিতি উদ্বেগ বাড়াচ্ছে পর্যটক ও পর্যটন ব্যবসায়ীদের। এক দিকে চা বাগানের বোনাস নিয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তপ্ত হয়ে আছে। অন্য দিকে, গত ২৪ ঘণ্টা ধরে চলছে প্রবল বৃষ্টি। তাতে দার্জিলিং ও কালিম্পং পাহাড়ের বিভিন্ন প্রান্তে বিপর্যস্ত জনজীবন। বৃহস্পতিবার সকালে ধস চাপা পড়ে প্রাণ হারালেন সুখিয়াপোখরির বুজুয়াগাঁও এলাকারবাসিন্দা রঘুবীর রাই (৭৮)। বহু জায়গায় ধস নামায় সিকিম, কালিম্পংগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়কে যান চলাচল মেল্লি, চিত্রে, রংপো, বিরিকধারায় দফায় দফায় বন্ধ হয়েছে৷ তাতে স্থানীয় বাসিন্দারা বিপাকে পড়েছেন।
বুধবার রাত থেকে পাহাড়ের সঙ্গে উত্তরবঙ্গের বেশিরভাগ জেলাতে ভারী বৃষ্টি, বিক্ষিপ্ত অতিরিক্ত ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ দিন সকালে দার্জিলিং ও বিজনবাড়ির মধ্যে বালাবাস সেতুর রেলিং জলে তোড়ে উড়ে গিয়েছে। ধসে বন্ধ জোড়বাংলোর রাস্তা, মিরিক রোড, রিম্বিক থেকে মানেভঞ্জন যাওয়ার রাস্তা। ডালি ফটকে ধসের কারণে বন্ধ টয় ট্রেনের ‘জয়রাইড’। জিটিএ-এর মুখ্য জন সংযোগ আধিকারিক শক্তিপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘‘সুখিয়াপোখরি এলাকায় চারটি বাড়ি ধসে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এক জন মারা গিয়েছেন। বিভিন্ন প্রান্তে ধস নেমেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, একমাত্র দার্জিলিং যাওয়ার রোহিণী রোড এখনও ঠিক রয়েছে। বাকি জাতীয় সড়ক এবং রাজ্য সড়কগুলির পরিস্থিতি ভাল নয়।
আবহাওয়া দফতর বলছে, বাংলাদেশের উপরে তৈরি ঘূর্ণাবর্তে তৈরি নিম্নচাপ অক্ষরেখা বিহার পর্যন্ত রয়েছে। ফলে আগামী কয়েক দিন ভারী বৃষ্টির মুখে পড়তে পারে উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলা, জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের সিকিমের ভারপ্রাপ্ত অধিকারিক গোপীনাথ রাহা।
পুজোর পর্যটন মরসুম শুরুর মুখে এই আবহাওয়া যথেষ্টই উদ্বেগে রেখেছে পর্যটনমহলকে। তাদের চিন্তা বাড়িয়েছে চায়ের বোনাস নিয়ে মালিক-শ্রমিক সংঘাত এবং তার জেরে শ্রমিকদের ডাকা সফল বন্ধ। শ্রমিকদের উষ্মা সামলাতে মুখ্যমন্ত্রী যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তাতেও বিশেষ কাজ হয়নি বলেই ইঙ্গিত। তাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজ্যের শ্রম কমিশনার জাভেদ আখতার পাহাড়ের ৮টি শ্রমিক সংগঠনকে চিঠি দিয়ে জানান, উৎসবের মরসুম পার হতেই দ্রুত পাহাড়ের জন্য আবার ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে।
যদিও তাতেও উদ্বেগ কাটেনি পর্যটন ব্যবসায়ীদের। পুজোয় ‘বুকিং’ করেও বহু পর্যটক এ দিন থেকে নতুন করে পাহাড়়ের পথঘাট নিয়ে খোঁজখবর করা শুরু করেছেন বলে সূত্রের খবর। অনেকেই অন্যত্র যাওয়ার চিন্তাভাবনাও করছেন। পর্যটন সংগঠন ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজ়ম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’-এর সম্পাদক সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘‘পাহাড় জুড়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া রয়েছে। রাস্তাঘাটের সমস্যা হচ্ছে। প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে। আমাদের আশা, কয়েক দিনের মধ্যে পরিস্থিতি বদল হবে।’’