• যানজট, উম্পুনের জোড়া ফলায় কি শহর থেকে গায়েব হচ্ছে ট্রাম
    এই সময় | ০৪ অক্টোবর ২০২৪
  • সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়

    উষ্ণায়নের আতঙ্কে লন্ডন, প্যারিস, প্রাগ, মাদ্রিদ, এডিনবরা, সিয়াটেল, ওয়াশিংটন ডিসি-র মতো ইউরোপ ও আমেরিকার শহরগুলিতে নতুন করে চালু হয়েছে পরিবেশ-বান্ধব গণ পরিবহণ — ট্রাম। প্রাগ, বার্লিন, মিউনিখে সম্প্রসারিত হয়েছে ট্রাম পরিষেবা। আর কলকাতার গণ পরিবহণের ১৫০ বছরের শরিক হয়েও শহর থেকে চিরবিদায় নিতে চলেছে সে। স্মারক হিসেবে শুধু জয় রাইডিংয়ে গড়ের মাঠে থাকবে তার অস্তিত্ব! যার প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে শহর।উন্নত শহরগুলিতে যখন পরিবেশ-বান্ধব ট্রাম ফিরছে, তখন কেন বিদায় জানাচ্ছে কলকাতা? কলকাতা পুলিশের আপত্তি? শ্লথ গতির ট্রাম শহরের যানজটের কারণ? বিশেষজ্ঞরা কলকাতা পুলিশের এই যুক্তি মানতে নারাজ। খড়্গপুর আইআইটির ভার্গব মৈত্ররা রাজ্য পরিবহণ দপ্তরকে দেওয়া একাধিক রিপোর্টে কলকাতার দূষণ ও যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে ছোট গাড়িকে দায়ী করেছেন। দু’চাকা বা চার চাকার গাড়ির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে না-পারলে যা অসম্ভব। ট্রামের মতো শক্তিশালি গণ পরিবহণই তার বিকল্প হতে পারে।

    ১১ বছর আগে, ২০১৩-তে ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) এবং ইনস্টিটিউট অফ আর্বান সাপোর্ট তাদের একটি রিপোর্টে কলকাতার ট্রাম পরিষেবা চালু রাখার পক্ষে সওয়াল করেছিল। ‘মডার্ন ট্রামস ইন সিটিজ় ইন ইন্ডিয়া’ শীর্ষক ওই রিপোর্টে ট্রাম পরিষেবাকে অবিরত আপগ্রেড অর্থাৎ যুগপোযোগী করার কথা বলা হয়। সেই রিপোর্টে দাবি করা হয়, রাস্তার অন্যান্য যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে ট্রাম, এই দৃষ্টিভঙ্গিটাই ভুল। প্রশ্ন উঠেছে তারপরও কেন কলকাতা ট্রামের কোনও আধুনিকিকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি?

    পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিকদের কথায়, নেওয়া হয়েছিল। যানজট নিয়ে পুলিশের আপত্তিকে গুরুত্ব দিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে গত দশকের মাঝামাঝি দুই কামরার বদলে এক কামরার ট্রাম তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ় কোম্পানি বা সিটিসি-র নোনাপুকুর ওয়ার্কশপে তৈরিও করা হয় ১৫টি এক কামরার ট্রাম। সেই ওয়ার্কশপের ম্যানেজার এস এস ঘোষ জানিয়েছেন, এক কামরার এসি ট্রামও তৈরি করা হয়েছিল। প্রশাসন সূত্রের খবর, নন-এসি এক কামরার ট্রাম তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ২১ লক্ষ টাকা। নন-এসির খরচ খানিকটা বেশি।

    লকডাউনের আগে ২০১৯-এর ৬ মার্চ বিদেশী পর্যটকদের দিকে তাকিয়ে বেশি ভাড়ার এক কামরার দু’টি এসি ট্রাম পথেও নামে। নোনাপুকুর থেকে রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড, ধর্মতলা, কলেজ স্ট্রিট ঘুরে শ্যামবাজার রুটে। ততদিনে শহরে ট্রাম-রুটের সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছিল নয়ে। ২০০০ সালের পরে দুর্ঘটনা এড়াতে এবং ট্রামের গতি বাড়াতে ট্রাম-ট্র্যাক সংস্কারেও উদ্যোগী হয়েছিল রাজ্য। ২০১৩ পর্যন্ত চলেছিল সেই সংস্কার। কয়েক কোটি টাকা খরচে ৫৬ কিলোমিটার ট্রাম-পথ কংক্রিটের করা হয়। যদিও প্রথমে কলকাতায় ৪১টি রুটে ট্রাম-পথ ছিল ৭৬ কিলোমিটার।

    রাজ্যের দাবি, ২০২০-তে উম্পুন সবটাই ওলটপালট করে দেয়। বিভিন্ন রুটে ট্রামের ওভারহেড তার ছিঁড়ে স্তব্ধ হয় ট্রামের গতি। উম্পুন কাটিয়ে বালিগঞ্জ-টালিগঞ্জ আর ধর্মতলা-গড়িয়াহাট রুটে ১৪ কিলোমিটার পথে ট্রাম চালু হয়। এই মুহূর্তে শহরে চালু রয়েছে শ্যামবাজার-ধর্মতলা, বালিগঞ্জ-ধর্মতলা রুটের ট্রাম।
  • Link to this news (এই সময়)