পুজোর আগে আগে দলের সতীর্থদের কেউ কেউ ছাড়া পেয়ে গেলেও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জেলমুক্তির সম্ভাবনা আপাতত ক্ষীণ। কারণ, প্রাথমিকে নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় নতুন করে তাঁকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে সিবিআই। ফলে এ বারের পুজোও প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারেই কাটবে পার্থর। ওই জেলেই রয়েছেন তাঁর আর এক সতীর্থ রেশন-দুর্নীতি মামলায় ধৃত রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। পার্থ-জ্যোতিপ্রিয়র জেলমুক্তি না হলেও ঘটনাচক্রে এ বার প্রেসিডেন্সির পুজোর থিম কিন্তু ‘মুক্তি’ই!রাজ্যের ৮টি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের মধ্যে প্রেসিডেন্সি জেলের দুর্গাপুজো বেশ প্রাচীন। ব্রিটিশ আমলেই এই জেলে দুর্গাপুজো শুরু হয়েছিল। বিপ্লবীরাও অংশ নিতেন। গত বছর প্রেসিডেন্সির পুজোর থিম ছিল ‘এক টুকরো গ্রামবাংলা’। বন্দিরাই এই থিমের কারিগর। বাস্তবে না হলেও এ বার তাঁরা ‘মুক্তি’র স্বাদ পেতে চাইছেন থিমের মাধ্যমে। তাঁরা মনে করেন, জেল থেকে ছাড়া পেতে আইনি পথই মুক্তির রাস্তা। সেই চিন্তাভাবনায় ভর করেই প্রেসিডেন্সির পুজোর থিম সাজানো হচ্ছে। পাশের আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারের পুজোও জাঁকজমকপূর্ণ হতে চলেছে। কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, ‘প্রতিবারের মতো এ বারও বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। রীতি অনুযায়ীই জেলে পুজো হবে।’
গোরু পাচার মামলায় অভিযুক্ত বীরভূমের তৃণমূল নেতা অনুব্রত মণ্ডলও সম্প্রতি তিহার জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে বাড়ি ফিরেছে। কেষ্টর বাড়ির কাছে ‘চড়াম চড়াম’ ঢাকও বাজবে। অন্য দিকে, পার্থরও যখন জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে বলে মনে করছিলেন তাঁর আইনজীবীরা, তখনই প্রাথমিকে নিয়োগ-দুর্নীতি মামলায় তাঁকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখাতে আদালতে আবেদন করে সিবিআই। সায়ও দেন বিচারক।
অথচ ওই একই মামলায় অভিযুক্ত পলাশিপাড়ার বিধায়ক তথা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য সদ্যই জামিন পেয়েছেন। মানিকও বন্দি ছিলেন প্রেসিডেন্সিতেই। গোরু-কয়লা পাচার থেকে পুরসভায় নিয়োগ-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত আরও কেউ কেউ মুক্তি পেয়েছেন। সম্প্রতি জেল থেকে ছাড়া পেয়েছেন রেশন-দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত বনগাঁ পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারপার্সন শঙ্কর আঢ্যও। পার্থ এবং জ্যোতিপ্রিয় অবশ্য আটকে ফাটকেই। ২০২২-এর ২২ জুলাই নাকতলায় পার্থের বাড়িতে হানা দিয়েছিল ইডি। এর পর নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট—বার বার দরবারেও মুক্তি হয়নি বেহালার বিধায়কের।
এ নিয়ে তৃতীয় বার পুজোয় জেলের ‘খাবার’ খেতে হবে তাঁকে। জ্যোতিপ্রিয়রও একই অবস্থা। কারা দপ্তর সূত্রে অবশ্য খবর, রাজ্যের ৮টি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে পুজোর চার দিন রাজকীয় ভোজেরই আয়োজন থাকছে। মেনুতে মাটন বিরিয়ানি, হরেক রকমের মিষ্টি থেকে মাছের রকমারি পদ থাকছে। কারা দপ্তরের এক কর্তার কথায়, ‘নানা কারণে অনেকে জেলে বন্দি রয়েছেন। তাঁদের আগের জীবন অন্য রকম ছিল। পরিবারের সঙ্গে পুজো কাটাতেন। আমরা চেষ্টা করি, ভালো লাগার মুহূর্তগুলো যেন ভাগ করে নেন বন্দিরা।’