সীমান্ত পার করে কাঁটাতারের ওপারে পাচারকারীদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য গোপন আস্তানায় ডাঁই করা হয়েছে কোটি কোটি টাকার মাদক। পুজোয় যখন ভিড় সামলাতে ব্যস্ত থাকবে পুলিশ, তখনই ভিন্রাজ্য থেকে অন্য দেশে নিষিদ্ধ নেশাজাত দ্রব্য পাচারের ছক কষছে কারবারিরা। এর আগে পুলিশের তৎপরতায় বার বার ভেস্তে গিয়েছে পাচার পরিকল্পনা। এ বার পুজোর ছুটির সময়টাকেই পাখির চোখ করেছে পাচারকারিরা। গোপন সূত্র মারফত সেই খবর পেয়ে সজাগ থাকছে প্রশাসন। নদিয়া-সহ সীমান্তবর্তী জেলাগুলির জন্য নেওয়া হচ্ছে বাড়তি সতর্কতা।
গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্যের মাধ্যমে পুলিশ জানতে পেরেছে, আন্তঃরাজ্য মাদক পাচার কারবারে যে পাণ্ডারা এলাকায় এলাকায় কাজ করে উৎসবের সময়ে তারা বিশেষ দায়িত্ব নিয়েছে। পুলিশের ব্যস্ততার ফাঁকে তারা মূল পাণ্ডাদের কাছে কোটি কোটি টাকার মাদক পাচারের ছক কষেছে তারা। এ-ও জানা যাচ্ছে, বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক অবস্থার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে উৎসবের সময়টাকেই বেছে নেওয়া হয়েছে পাচার কারবারের জন্য। পাচারের জিনিসের মধ্যে রয়েছে, উত্তর-পূর্ব ভারতের উন্নত মানের গাঁজা, নিষিদ্ধ কাশির সিরাপ ফেনসিডিল, ইয়াবা ট্যাবলেট, হেরোইন এবং হেরোইন তৈরির কাঁচামাল।
কী এবং কেমন পরিকল্পনা পাচারকারীদের? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নদিয়ার করিমপুর সীমান্তের এক ‘ক্যারিয়ার’ বলেন, ‘‘নদিয়ায় গোপালপুর ঘাট থেকে তেহট্ট পর্যন্ত আন্তর্জাতিক মাদক পাচার সিন্ডিকেটের রাশ কমবয়সি এক যুবকের হাতে দেওয়া হয়েছে।’’ জানা যাচ্ছে, বেশ কয়েকটি পাচারের ঘটনায় পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে তার নাম। বিগত কয়েক মাসে পুলিশের লাগাতার অভিযানে বাজেয়াপ্ত হয়েছে কয়েক কোটি টাকার মাদকদ্রব্য। পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে কয়েক জন। তাই এবার অনেক বেশি সাবধানী ওই পাচারকারীরা। জেলা পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ, বিশেষ তদন্তকারী দলের সাহায্যে নদিয়ার বিভিন্ন এলাকা এখন পাচার কারবারিদের জন্য ‘দুর্ভেদ্য’। কিন্তু পুজোর সময় যে হেতু ভিড় নিয়ন্ত্রণ-সহ অন্যান্য ব্যবস্থাপনায় ব্যস্ত থাকবে পুলিশ, ওই সময়টাকেই বেছে নিয়েছে অবৈধ কারবারিরা।
জেলা পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক বলেন, ‘‘পুজোর সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভিড় এবং যান নিয়ন্ত্রণের মতো বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন পুলিশকর্মীরা। সেই সুযোগেই সক্রিয় হয়ে ওঠে মাদক পাচার চক্র। বেশিরভাগ পাচারকারীর লক্ষ্য থাকে আন্তর্জাতিক সীমান্ত টপকে ওই মাদক বাংলাদেশে অথবা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার।’’ আগাম খবর পাওয়ার পর পুলিশ সক্রিয় বলে জানাচ্ছেন তেহট্ট মহকুমার পুলিশ আধিকারিক শুভতোষ সরকার। তিনি বলেন, ‘‘মাদক পাচারের বড় বড় ‘কন্সাইনমেন্ট’ আটকে দিয়ে পাচারকারিদের মনে ভয় তৈরি করতে পেরেছে মহকুমা পুলিশ। পুজোর ব্যস্ততাকে যাতে তারা নিজেদের কাজে লাগাতে না পারে, সে বিষয়েও আমরা সজাগ থাকব।’’