'ভূতেদের' নিয়ে তাঁর তৈরি ছবি রাতারাতি জনপ্রিয় করে তুলেছিল অনীক দত্তকে। এরপর থ্রিলার থেকে সামাজিক গল্প নিয়ে তৈরি তাঁর একাধিক ছবিতে বুঁদ হয়েছেন দর্শক। কেমন ছিল তাঁর ছোটবেলার দুর্গাপুজো? ২০২৪-এর পুজোকে ঘিরেই বা তাঁর কী পরিকল্পনা রয়েছে? সবকিছু নিয়েই আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে আড্ডা চলল তাঁর।
'ভূতেদের' নিয়ে তাঁর তৈরি ছবি রাতারাতি জনপ্রিয় করে তুলেছিল অনীক দত্তকে। এরপর থ্রিলার থেকে সামাজিক গল্প নিয়ে তৈরি তাঁর একাধিক ছবিতে বুঁদ হয়েছেন দর্শক। কেমন ছিল তাঁর ছোটবেলার দুর্গাপুজো? ২০২৪-এর পুজোকে ঘিরেই বা তাঁর কী পরিকল্পনা রয়েছে? সবকিছু নিয়েই আজকাল ডট ইন-এর সঙ্গে আড্ডা চলল তাঁর।
“সত্যি বলতে কী, পুজো বলতে যে আমার কাছে দারুণ মুঠো মুঠো স্মৃতিতে ভরা অতীত, এমনটা নয়। বানিয়ে বানিয়ে বলতেও পারব না। ইচ্ছেও নেই। আর এই সময় কোনওকালেই আমার মনটা পুজো পুজো করে ওঠে না। ঢাকুরিয়ার বাড়িতে আমাদের যৌথ পরিবার ছিল। আমার জন্মের আগে সেখানে খুব ধুমধাম করে, জাঁকজমক করে দুর্গা পুজো হত বলে শুনেছি, তবে চোখে দেখেনি। যখন একটু বড় হলাম, মানে পুজো দেখে চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার বয়স হল, সেই সময়ও টইটই করে প্যান্ডেল দেখতে বেড়িয়ে পড়তাম এমনটা নয়। আসলে, ছোট থেকেই আমি খুব নিঃসঙ্গ। পাড়ায় খুব একটা বন্ধুবান্ধব ছিল না। মনে আছে, বাড়ির কাছেই পাড়ার পুজো হত। আমি নতুন জামাকাপড় পরে প্যান্ডেলের এক কোনায় বসে ঢাক বাজানো শুনতাম একমনে। খানিক পরে বাড়ির কাজের লোক এসে আবার আমাকে বাড়ি নিয়ে যেত। পুজোর একদিন উত্তর কলকাতায় ঠাকুর দেখতে যেতাম বাবা-মায়ের সঙ্গে। বাইরেই খানিক খাওয়া দাওয়া হত। ”
তখনও কি কলকাতা শহরের রাস্তায় পুজোর সময়ে মানুষের এরকম ঢল নামত? শোনামাত্রই নিজস্ব ছন্দে 'ভূতের ভবিষ্যৎ’ ছবির পরিচালকের জবাব, “কলকাতায় কবে আবার পুজোয় ভিড় হয় না? তখনও ভিড় হত এবং ভালরকম ভিড় হত। তবে গাড়ির দাপটটা তখন অনেক কম ছিল। এত রকমের আওয়াজের ক্যাকাফোনি ছিল না!”
“এরপর যখন বোধ হল, নাস্তিক হয়ে গেলাম। আজও আমি অজ্ঞেয়বাদী। তাই এই পুজো সম্পর্কিত ধার্মিক ব্যাপারগুলো আমাকে টানে না। তবে দুর্গা পুজোর তো একটা ঐতিহ্য রয়েছে, এই পুজোর সঙ্গে একটি জাতির সংস্কৃতি মিশে রয়েছে সেটাই বা এড়িয়ে যাই কী করে? তবে আমার সবথেকে ইন্টারেস্টিং লাগে রাস্তার ধারে, পাড়ায় পাড়ায় এই যে যেভাবে 'ওপেন এয়ার আর্ট ইনস্টলেশন' হয় তা আর বিশ্বের কোনও জায়গায় হয় না। আমি নিজেও তো একাধিক দেশ ঘুরেছি, এমনটি কোত্থাও দেখিনি।"
সামান্য থেমে অনীকবাবু ফের বলে ওঠেন, "আমার মেয়ে যখন একটু বড় হল, সেই সময় কয়েক বছর পুজো বেশ মজার কেটেছিল। যেখানে থাকতাম ওখানকার কো-ওপোরেটিভের শিশুদের নিয়ে নাটক পরিচালনা করতাম, ক্যুইজের আয়োজন করতাম তাতে ছোট-বড় সবাই যোগ দিতেন। দারুণ জমে যেত। আমাদের অ্যাপার্টমেন্টের অনেকেই পুজোর তদারকি করত, সেসব দেখতেও বেশ লাগত।”
“দু'বার দু'টি জনপ্রিয় দৈনিকের হয়ে পুজোর বিচারক হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম পুজোয় তো একেবারেই বেরনো হয় না, এই ফাঁকে না হয় একটু স্বাদ বদল হবে। এটুকু বলব, সেবারে খুব উঁচুমানের নান্দনিক কাজ যে ঘনঘন দেখতে পেয়েছিলাম এমনটা ভেবে নেওয়ার কোনও ব্যাপার নেই। আর একটা মজার ব্যাপার হয়েছিল, সেবারে বহু নামি পুজো প্রতিষ্ঠানের তথাকথিত হোমরা-চোমড়ারা কিন্তু আমাকে দেখে প্যান্ডেল থেকে সুট করে কেটে পড়েছিলেন।" কেন আপনার সামনে আসেননি ওঁরা? এবার খানিক সতর্ক ভঙ্গিতে জনপ্রিয় পরিচালকের জবাব, "সেটা আন্দাজ করে নিন।”
“আজকাল পুজো এলে বিরক্তি লাগে। অষ্টপ্রহর এত আওয়াজ, এত ভিড়। পুরো জগাখিচুড়ি! তার থেকে পুজোতে এক-দু'দিন কোনও না কোনও এক বন্ধুর বাড়িতে যাই। সেখানে তাঁদের কোনও বাড়িতে সাবেকি পুজো হয়। সেটা দেখতে বেশ লাগে। সেখানে খাওয়া দাওয়া হয়, দারুণ আড্ডার সঙ্গে উৎকৃষ্ট সুরাপান হয়, সেটা আমাকে বেশি টানে। কোনওবার পুজোয় তাঁরা আমার বাড়িতে আসেন। সেটাই আমার কাছে বেশি আনন্দদায়ক। ”