• কোচবিহারের রাজশিল্পী ২৩ বছরের সৌভিক এক মনে গড়ছেন মদনমোহন বাড়ির ঠাকুর
    আজকাল | ০৫ অক্টোবর ২০২৪
  • একুশ বছরেই সে হয়েছে 'রাজশিল্পী'। কোচবিহারের মদনমোহন ঠাকুর বাড়ির কাঠামিয়া দুর্গা ঠাকুর নির্মাণে এ বার নিয়ে তৃতীয়বার হাত লাগালেন মহারাজাদের রাজশিল্পীর তৃতীয় প্রজন্মের মৃৎশিল্পী সৌভিক পাল। বাবা তথা রাজশিল্পী সত্যজিৎ পাল মারা গিয়েছেন ২০২২ সালে। সেই থেকে কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ড 'রাজশিল্পী' করেছে সত্যজিতবাবুর ছেলে সৌভিককে। দায়িত্ব পেয়েই কাজ করে চলেছে ২৩ বছরের রাজশিল্পী শৌভিক পাল।

    সাগর দিঘি চত্বরে থাকা কোচবিহারের মহারাজা নৃপেন্দ্র নারায়নের মূর্তির চোখ ঠিক করে দিয়ে মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়নের নজরে পড়ে যান কৃষ্ণনগরের মৃতশিল্পী নিতাই চন্দ্র পাল। পিঠ চাপড়ে দিয়ে মহারাজা নিতাইকে করে নেয় 'রাজশিল্পী'। সেই থেকে বছরের-পর-বছর কোচবিহার রাজ পরিবারের মদনমোহন মন্দিরে কাঠামিয়া দূর্গা প্রতিমা সহ বিভিন্ন প্রতিমা নির্মাণ করে আসছেন রাজশিল্পী নিতাই চন্দ্র পালের পরিবারই। এখন রাজশিল্পী নিতাই চন্দ্র পালের নাতি সৌভিক পাল।

    একই চালায় ,একই কাঠামোতে প্রতিমা তৈরি হয়। তাই মদনমোহন ঠাকুরবাড়ির দুর্গাকে বলা হয় কাঠামিয়া দুর্গা। ৬২ বছর ধরে একই কাঠামোতে দুর্গা প্রতিমা তৈরি হচ্ছে। রাজশিল্পী শৌভিক পাল জানান, 'বিসর্জনের পর মদনমোহন ঠাকুরবাড়ির বৈরাগী দিঘি থেকে সেই কাঠামো আমাদের কাছে চলে আসে ফি বছর। ওই একই কাঠামোতেই মাকে গড়ে তোলা হয়। বাবার কাছ থেকে পাওয়া হিসেব অনুযায়ী এই কাঠামোর বয়স এখন ৬২বছর।'

    রাজপ্রথা মেনে মদনমোহন ঠাকুরবাড়ির কাঠামিয়া দুর্গা সহ রাসমেলার সময়কার প্রায় ১২০ রকম পুতুল যেমন -ভীষ্মের শরসজ্জা, গোপালের ননী চুরি, শ্রীকৃষ্ণের রাসলীলা এসব গড়ে থাকেন রাজ শিল্পী। ছোট থেকে বাবা সত্যজিৎ পালকে সহযোগিতা করত ছেলে সৌভিক পাল। এখন পুরো কাজই তাঁকে করতে হচ্ছে। কেমন লাগছে? উত্তর আসে,'আগে মায়ের চক্ষুদানের কাজটা আমি করতাম। তবে বাবার কাছ থেকে সব কাজই শিখেছি। রাজশিল্পী পরিবারের ধারা আমায় রাখতেই হবে। পারতেই হবে।'

    অর্থাৎ কোচবিহারের মহারাজাদের মৃৎশিল্পীরা তিন প্রজন্ম ধরে মহারাজাদের ঠাকুর বানিয়ে আসছেন। এ বছরও তার অন্যথা হবে না। শৌভিক কিন্তু বাবা - ঠাকুরদার ধারা ধরে রাখতে অসম্ভব তৎপর। 'সত্যজিৎবাবুর ছেলে শৌভিক পাল কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের নথিভূক্ত রাজশিল্পী। রাজ আমল থেকেই ওনাদের পরিবার রাজশিল্পী হিসেবে কাজ করছেন। গুঞ্জবাড়ির ডাঙরাই মন্দিরের মূর্তি গড়েন। মন্দিরের পাশেই মহারাজার দেওয়া বাড়ি', জানান কোচবিহার দেবোত্তর ট্রাস্ট বোর্ডের বড়বাবু জয়ন্ত চক্রবর্তী।

    আজ আর রাজা নেই। নেই রাজ আমল। কিন্তু আছে মহারাজাদের মৃৎশিল্পী, রাজপুরোহিত, দুয়ারবক্সী, রাজ আমলের বিভিন্ন স্থাপত্য, বিশালাকায় রাজবাড়ি। সব মিলিয়ে হেরিটেজ শহর কোচবিহারে আজও রাজ অনুভূতি জড়িয়ে আছে আষ্টেপৃষ্ঠে। আগমনীর দিনগুলিতে তা যেন আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রাজাচারগুলো উঠে আসে সর্বসমক্ষে।
  • Link to this news (আজকাল)