নিজস্ব প্রতিনিধি, জলপাইগুড়ি: দুর্যোগ কাটতেই লাটাগুড়ির মৌলানির ঢাকিপাড়ায় মহড়া তুঙ্গে। চলছে মণ্ডপে যাওয়ার প্রস্তুতি। মৌলানি বাজার, রেলগেট, ভাণ্ডানি, চেলচেলিডাঙা সহ এলাকায় এখনও প্রায় দু’শো ঢাকি পরিবার রয়েছে। পুজোর মুখে দুর্যোগ তাঁদের কিছুটা দুশ্চিন্তায় ফেলেছিল। কিন্তু বৃষ্টি থামতেই ঢাকিপাড়ায় এখন ব্যস্ততা চরমে। মণ্ডপে রওনা দেওয়ার আগে চলছে ঢাক সারাইয়ের কাজ। সঙ্গে একপ্রস্থ মহড়াও সেরে নিচ্ছেন তাঁরা।
অনেকেই অসমে যাবেন। তাঁরা আজ-কালের মধ্যে রওনা দেবেন। বাকি যাঁরা শিলিগুড়ি, রায়গঞ্জ কিংবা জলপাইগুড়ি শহরের মণ্ডপে ঢাক বাজাবেন, তাঁরা রওনা হবেন পঞ্চমীতে। মৌলানি রেলগেটের পাশের ঢাকিপাড়ায় দেখা হল শ্যামল ঋষির সঙ্গে। বাড়ির উঠোনে ঢাক সারাইয়ের কাজে ব্যস্ত তিনি। সঙ্গে রয়েছেন তিন ছেলে ও ভাইপো, ভাগ্নে। বড় দল শ্যামলের। বললেন, বাপ-ঠাকুরদা ঢাক বাজাতেন। আমিও চল্লিশ বছর ধরে ঢাক বাজাচ্ছি। নতুন প্রজন্ম আর এই পেশায় আসতে চায় না। তবুও জোর করে ওদের শেখানোর চেষ্টা করি।
শ্যামল ঋষির এক ছেলে প্রকাশ। বললেন, আগের মতো আর বায়না হয় না। ফলে পুজোর সময় ঢাক বাজালেও বছরের বাকি সময়টা বাইরে কাজে যেতে হয়। পেটের তাগিদে আমি চেন্নাইয়ে কাজে গিয়েছিলাম। এখন ফিরে আবার ঢাক বাজাচ্ছি।
দীর্ঘদিন ধরে পুজোয় অসমে ঢাক বাজাতে যান রতন ঋষি। বললেন, প্রতিবারের মতো এবারও পুজোয় কামাখ্যায় যাব। আমার সঙ্গে বড় দল যাবে। বাইরে গেলে দু’টো পয়সার মুখ দেখা যায়। সেকারণে মন সায় না দিলেও পুজোর সময় পরিবার ছেড়ে ভিনরাজ্যে যাই।
নতুন প্রজন্মের ঢাকি পঙ্কজ ঋষির কথায়, বাবা-কাকারা সবাই ঢাক বাজান। সেকারণেই শিখে রেখেছি। পুজোর সময় সবাই মিলে মণ্ডপে বাজাতে যাই। তবে বছরের বাকি সময় বসে থাকতে হয়। বাধ্য হয়ে তখন টোটো চালাই কিংবা দিনমজুরির কাজ করি।
শ্যামল ঋষির আক্ষেপ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে আমরা ঢাক বাজাচ্ছি। অথচ কোনও সরকারি সাহায্য পাই না। শুনেছি, অনেক ঢাকি সরকারের কাছ থেকে সহায়তা পেয়ে থাকেন। জলপাইগুড়ি জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক স্বরূপ বিশ্বাস জানিয়েছেন, যেসব ঢাকির নাম লোকশিল্পী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত আছে, তাঁরা সরকারি সহায়তা পেয়ে থাকেন। মৌলানির যেসব ঢাকি সহায়তা পাচ্ছেন না বলছেন, তাঁরা প্রয়োজনে যোগাযোগ করতে পারেন।