• অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আর্জি স্বাস্থ্যসচিবের কাছে
    আনন্দবাজার | ০৫ অক্টোবর ২০২৪
  • পরীক্ষায় নম্বর বাড়িয়ে দেওয়া, অবাধে পছন্দের পড়ুয়াদের অনার্স পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠছিল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। স্বাস্থ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক ৩ অক্টোবর এক নির্দেশে ১০ জনের তদন্ত কমিটি গড়ে সে অভিযোগের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ১৫ দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে পরীক্ষায় নম্বর বাড়ানো, অবাধে অনার্স পাইয়ে দেওয়া-সহ ‘হুমকি প্রথাকে’ (থ্রেট কালচার) মদত দেওয়ায় অভিযুক্ত খোদ উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহাকে নিয়ে। তাঁকে পদে রেখে ওই তদন্ত হতে পারে না বলে দাবি মেডিক্যাল কলেজের অধিকাংশ বিভাগীয় প্রধানের। ২১ জন বিভাগীয় প্রধানের সই করা ওই দাবি নিয়ে শুক্রবার স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তার দফতরে দেখা করেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের দুই বিভাগীয় প্রধান। অধ্যক্ষ ইন্দ্রজিৎ সাহা রাতে বলেন, ‘‘পরীক্ষা নিয়ে আমাদের অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি গঠন করেছেন। বাকি ঘটনায় দুটো বিষয় রয়েছে। বায়োমেট্রিক হাজিরা নিয়ে অসন্তোষ আর নিজেদের পরীক্ষা সংক্রান্ত দোষ ঢাকার জন্য প্রায় চার মাস পরে কিছু বিষয় তুলে ধরা হচ্ছে। পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয় ডিনের বিভাগ থেকেই দেখাশোনা হয়। তারাই বলতে পারবে, কী হয়েছে।’’ তবে স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের শল্য চিকিৎসা বিভাগের প্রধান নিশীথরঞ্জন মল্লিক বলেন, ‘‘অধ্যক্ষকে পদে রেখে সুষ্ঠু তদন্ত হতে পারে না। স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করে তা জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।’’

    আর জি কর-কাণ্ডের পরে রাজ্যের একাধিক মেডিক্যাল কলেজে ‘হুমকি-প্রথা’র অভিযোগ নিয়ে তোলপাড় হয়েছে রাজ্য। তাতে নাম জড়িয়েছে স্বাস্থ্য-শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য-প্রশাসনে ‘প্রভাবশালী’ চিকিৎসক-গোষ্ঠী বলে পরিচিত ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র। ওই ‘লবি’র বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালেও নানা অনৈতিক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন কলেজের চিকিৎসক, ডাক্তারি-পড়ুয়া, এমনকি, শিক্ষক-চিকিৎসকদের একাংশ। সম্প্রতি ‘হুমকি-প্রথা’র বিরুদ্ধে পড়ুয়া এবং জুনিয়র চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা অধ্যক্ষের দফতর ঘেরাও করে আন্দোলনে নামে। বিক্ষোভের মুখে ডিন সন্দীপ সেনগুপ্ত, সহকারী ডিন সুদীপ্ত শীলকে পদত্যাগ করতে হয়। পরে কলেজ কাউন্সিলের বৈঠকে তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হয়। তদন্তের ভিত্তিতে এক ইনটার্ন এবং হাউসস্টাফ-সহ তিন জনকে বহিষ্কার করা হয়। পাঁচ পড়ুয়াকে একটি সিমেস্টারের জন্য সাসপেন্ড করা হয়। অভিযোগ ওঠে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।

    এ দিন স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করে বেরিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান পার্থসারথি সরকার জানান, কলেজে ছাত্র-বিক্ষোভের দিন তাঁরা নম্বর বাড়ানোর স্পষ্ট অভিযোগ জানিয়েছিলেন। সার্জারি বিভাগের এক পড়ুয়ার নম্বর সাদা কালি দিয়ে মুছে বাড়ানো হয়েছে বলেও অভিযোগ ছিল। তার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, ‘‘অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তদন্ত করা দরকার বলে অধিকাংশ বিভাগীয় প্রধানেরা মনে করছেন। আমরা তা স্বাস্থ্য দফতরে জানিয়েছি।’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)