রাশি রাশি ‘বোল্ডার’ ফেলেও শান্ত করা যাচ্ছে না ফুঁসে ওঠা তিস্তা নদীকে। শুক্রবার সেবকের কাছে চমকডাঙি এবং লালটং এলাকার অনেকটাই নদীতে তলিয়ে যায়। প্রায় একশোটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গৌতম দেব, মহকুমাশাসক (জলপাইগুড়ি সদর) তমোজিৎ চক্রবর্তী এ দিন ওই এলাকায় পরিদর্শনে যান।
সেচ দফতর জানিয়েছে, গত বছর সিকিমে বিপর্যয়ের পরে, তিস্তা নদী খাত বদলে জনপদের কাছ দিয়ে বইছে। জল বিপদসীমার নীচ দিয়ে বইলেও দুই পারে ভাঙন চলছে। সেচ দফতরের দাবি, প্রতিদিনই নদী অল্প অল্প করে খাত থেকে সরছে। তার ফলে এই পরিস্থিতি। জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসনের তরফে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে এলাকায়। সিভিল ডিফেন্সের বিশেষ বাহিনীকে এলাকায় রাখা হয়েছে। তিস্তায় জল বেশি থাকায় জলপাইগুড়ির মিলনপল্লি থেকে ময়নাগুড়ির বাঁকালি এলাকাতেও ভাঙন চলছে। পুজোর আগে জেলা প্রশাসনের খোলা কন্ট্রোল রুমে তিস্তার উপরে নজরদারি করতে বিশেষ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঘটনাচক্রে, এ দিন শুক্রবার ৪ অক্টোবরে অনেকের স্মৃতিতে ফিরে এসেছে ১৯৬৮ সালে সিকিমেই বিপর্যয়ের পরে তিস্তার জলে জলপাইগুড়িতে তৈরি হওয়া বন্যা পরিস্থিতি। গত বছর সিকিমের দক্ষিণ লোনাক হ্রদের পাড় ভাঙার প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও ঘটেছিল ৪ অক্টোবর।
শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, বন্যাকবলিতদের পাশে থাকতে। তা মেনে আমরা ভাঙন কবলিত এলাকায় গিয়ে ত্রাণ সামগ্রী বিলি করেছি, মানুষের পাশে থেকেছি। তিস্তায় নদীবাঁধের কাজ চলছে। সেচ দফতর কাজ করছে। কিন্তু প্রবল খরস্রোতা তিস্তায় সে কাজ ব্যাহত হচ্ছে। আজ ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে এসেছিলাম, আবার আসব।”
পুজোর সময়ে বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। সে কারণেই তিস্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছে প্রশাসন। সেচ দফতরের পাশাপাশি, এ দিন জেলা প্রশাসনের তরফেও তিস্তা নিয়ে নজরদারি শুরু হয়েছে। পুজোর সময়ে মহকুমাশাসকের দফতরে খোলা হচ্ছে বিশেষ কন্ট্রোল রুম। সেখানে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় অন্তর তিস্তা নদীর দু’পারের এবং নদীর কী পরিস্থিতি তা খোঁজ নেওয়া হবে। সেবকের কাছে ভাঙন কবলিত এলাকায় এক জন যুগ্ম ব্লক আধিকারিক পদমর্যাদার আধিকারিককে রাখা হয়েছে। সূত্রের খবর, কোনও জায়গা থেকে বিপর্যয়ের খবর এলেই সেখানে এক জন আধিকারিককে শিবির করে রাখা হবে। মহকুমাশাসক বলেন, “সেবকের কাছে ভাঙন এলাকায় পুলিশ এবং ব্লক প্রশাসন রান্না করা এবং শুকনো খাবার বিলি করছে। ত্রিপল এবং বিপর্যয় মোকাবিলার কিটও দেওয়া হচ্ছে। জেলায় তিস্তার পুরো গতিপথেই সর্বক্ষণের নজরদারি রয়েছে। সেচ দফতরের সঙ্গে নিয়মিত তথ্য সমন্বয় করে কাজ করছে প্রশাসন।”