শহরে নিঃশব্দে চিকিৎসা বিজ্ঞানে বিপ্লব, বাংলার সরকারি হাসপাতাল SSKM-এ দ্বিতীয়ার দিন জন্ম নিল টেস্ট টিউব বেবি। দেশে এই প্রথম সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সম্পন্ন হল এই প্রক্রিয়া। সুস্থ রয়েছেন মা ও শিশু।বিশিষ্ট বন্ধ্যাত্ব রোগ বিশেষজ্ঞ, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারের নেতৃত্বে তাঁর প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে এসএসকেএম হাসপাতাল এই প্রকল্প চালাচ্ছে। ৩৬ জন মহিলার কোল আলো করার জন্য বিনামূল্যে টেস্ট টিউব বেবিদের জন্মদানের উদ্যোগ নিয়েছে SSKM। কয়েক মাসের মধ্যে আরও তিন থেকে চারজন টেস্ট টিউব বেবি পৃথিবীর আলো দেখবে। নিঃসন্তান গরিব দম্পতিদের বিনা খরচে সন্তান-সুখ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার এক মহিলা দীর্ঘ পাঁচ-ছয় বছর ধরে বন্ধ্যাত্বের সমস্যায় ভুগছিলেন। মা হওয়ার আকাঙ্খা নিয়ে তিনি একাধিক চিকিৎসকের কাছে দৌড়েছেন। বিশেষ লাভ হয়নি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে টেস্ট টিউব বেবি জন্ম দেওয়ার জন্য বিপুল টাকা লাগে, যা তাঁর সাধ্যের বাইরে। এই অবস্থায় তাঁকে দিশা দেখায় SSKM হাসপাতাল। সুদর্শন ঘোষ দস্তিদারের নেতৃত্বে গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁর গর্ভে ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হয়। শুক্রবার এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। সন্তানের ওজন প্রায় তিন কেজি। মা এবং মেয়ে দুই জনেই সুস্থ রয়েছেন।
গত কয়েক মাস ধরেই আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের সঙ্গে ঘটে যাওয়া নৃশংসতায় বিচলিত রাজ্য। আন্দোলন, যুক্তি, পাল্টা যুক্তিতে পুজোর মুখেও ‘ভার’ তিলোত্তমার বাতাস। কিন্তু এরই মধ্যে দ্বিতীয়ায় ‘দুর্গা’-র আগমণ কিছুটা তাজা হাওয়া আনল বলে মত ওয়াকিবহাল মহলের।
এনআরএস-এর চিকিৎসক সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের উদ্যোগে ১৯৭৮ সালে অক্টোবর মাসেই ভারতে প্রথম টেস্ট টিউব বেবির জন্ম হয়। সেই শিশুর নাম রাখা হয় ‘দুর্গা’ (কানুপ্রিয়া আগরওয়াল)। আবারও দ্বিতীয়ার দিন এক মায়ের কোল আলো করে এল দুর্গা।
নিঃসন্তান বহু মহিলাদের আজও সমাজের বিভিন্ন স্তরে গঞ্জনা শুনতে হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে উন্নতির সুবাদে টেস্ট টিউব বেবি, ডিম্বাণু সংরক্ষণ, আইভিএফ-এর মতো পন্থাগুলি থাকলেও তা আজও অনেকক্ষেত্রে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষজনের নাগালের বাইরে। SSKM রাজ্যের দরিদ্র নিঃসন্তান মায়েদের পথ দেখাবে আগামীতে, মনে করছে চিকিৎসক মহল।