সাপের কামড়ে পড়ুয়া মৃত্যুতে জামিন নাকচ প্রধান শিক্ষকের
এই সময় | ০৫ অক্টোবর ২০২৪
এই সময়, কাটোয়া: জামিন পেলেন না সাপের কামড়ে ছাত্রমৃত্যুতে গফিলতির অভিযোগে ধৃত প্রধান শিক্ষক পূর্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী ৮ অক্টোবর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতেই থাকতে হবে তাঁকে। শুক্রবার কাটোয়ার কোশিগ্রাম ইউনিয়ন ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষককে আদালতে পেশ করে পুলিশ। বিচারক তাঁকে ৫ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন। অভিযুক্তের আইনজীবী পারমিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘মামলায় জুভেইনাল জাস্টিসের ৭৫ নম্বর ধারা যুক্ত করা হয়েছে৷ তাই এ দিন জামিন মঞ্জুর করেননি বিচারক৷’এ দিকে, বৃহস্পতিবার ওই স্কুলেই ফের এক ছাত্রকে সাপে কামড়েছে বলে জানা গিয়েছে। স্কুলের ভিতরে পর পর সাপের কামড়ে আতঙ্ক ছড়িয়েছে পড়ুয়া ও অভিভাবক মহলে। শুক্রবার স্কুল খুললেও অনুপস্থিত ছিল অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী। আদালত সূত্রে খবর, বিচারক এ দিন এজলাসে জানিয়েছেন, মামলার তদন্তকারী অফিসারকে গোটা ঘটনা ঠিকমতো তদন্ত করতে হবে৷ স্কুল পরিচালন সমিতির সব সদস্য বা ওই শ্রেণিটির ইনচার্জকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে৷
এই ঘটনায় তাঁদের কারও গাফিলতির প্রমাণ মিললে অভিযুক্ত হিসেবে মামলার সঙ্গে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। এ দিন স্কুল পরিচালন সমিতির সভাপতি পরেশনাথ সাহা বলেন, ‘আদালত যা রায় দেবে তা মাথা পেতে নেব। তবে আমাদের কারও গাফিলতি ছিল না৷’ স্কুলের শিক্ষক রমেশচন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘আমরা কিছুই জানতাম না৷ পরে শুনলাম, সাপে কামড়েছে৷ ছেলেটির জন্যেও খারাপ লাগছে৷’
মঙ্গলবার কোশিগ্রাম ইউনিয়ন ইনস্টিটিউটের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র ইন্দ্রজিৎ মাঝির পায়ে স্কুলের ভিতরেই কামড়ে দেয় বিষধর সাপ। স্কুল ও ছাত্রটির পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রধান শিক্ষকের কাছে গিয়ে ক্ষতর কথা জানানো হয়। সেখানে ক্ষতস্থান ডেটল দিয়ে পরিষ্কার করে ছাত্রটিকে ফের ক্লাসে যেতে বলা হয়৷ ছাত্রটি স্কুল শেষ করে বাড়ি ফিরে খাওয়া-দাওয়া করে। বিকেলে গ্রামে টিউশনও পড়তে যায় সে। সেখানে গিয়েই সে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
পরিবারের দাবি, বাড়ি ফেরার পরে ইন্দ্রজিৎ কথা বলতে পারছিল না৷ সন্ধ্যার দিকে কাটোয়া মহকুমা হাসতাপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন৷ বুধবার দেহের ময়না-তদন্ত করা হয়৷ ছাত্রমৃত্যুর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার স্কুলে চড়াও হয় ক্ষিপ্ত গ্রামবাসী। মৃত ছাত্রের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ গ্রেপ্তার করে প্রধান শিক্ষক পূর্ণেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
এ দিকে, গ্রামবাসীর বিক্ষোভের দিনেই ফের ওই স্কুলে এক ছাত্রকে সাপে কামড়ানোর ঘটনা সামনে এসেছে। অর্ণব গড়াই নামে ওই ছাত্র স্কুলের দশম শ্রেণীর ছাত্র। সে জানায়, স্কুলের ভিতরেই তাকে সাপে কামড়ায়। কাটোয়া হাসপাতালে ভর্তিও হয় সে। যদিও তার শরীরে বিষের প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলে জানা গিয়েছে। এর পরেই নড়েচড়ে বসেন স্থানীয় পঞ্চায়েত ও স্কুল কর্তৃপক্ষ। পঞ্চায়েত ও স্কুল যৌথ উদ্যোগে সাফাই অভিযান চালায় কোশিগ্রাম ইউনিয়ন ইনস্টিটিউটে। স্কুলের ভিতরে ও বাইরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়৷
শুক্রবার স্কুল খুললে দেখা যায় সাপের আতঙ্কে বহু পড়ুয়াই অনুপস্থিত। শোকপালন করে ছুটি দিয়ে দেওয়া হয় স্কুল। দশম শ্রেণির পড়ুয়া রোহিত শেখ বলে, ‘দু’বছর ধরে অপরিষ্কার ছিল স্কুল৷ চারদিকে সাপ ঘুরে বেড়ায়৷ তাই ওই ঘটনার পরে ভয়ে কেউ আসেনি৷’ নারায়ণচন্দ্র সাহা নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘আমার মেয়ে পড়ে ওই স্কুলে৷ এখন কয়েকদিন মেয়েকে স্কুলে পাঠাব না৷ পরিস্থিতি বুঝে পরে পাঠাব।’