• ৭৬ কিলোমিটার পথ কমে ১৪, ডিপোয় নষ্ট হচ্ছে শতাধিক ট্রাম
    এই সময় | ০৫ অক্টোবর ২০২৪
  • সুগত বন্দ্যোপাধ্যায়

    ইতিহাস বলছে — একসময় টালা থেকে টালিগঞ্জ জুড়ে ৭৬ কিলোমিটার পথ জুড়ে শহরে ঘুরে বেড়াত ট্রাম। রুটের সংখ্যা ছিল ৪১। হাওড়া ব্রিজ টপকে শিবপুর পর্যন্ত বিস্তার ছিল এই ট্রাম-পথের। পরে নানা কৌশলে যা সঙ্কুচিত হতে থাকে।১৯৯৩-এ হাওড়া ব্রিজের স্বাস্থ্যের কারণ দেখিয়ে সেখানে ট্রাম চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। শহরে উন্নয়নের অজুহাতে উল্টোডাঙা আর ঠাকুরপুকুর পর্যন্ত ট্রাম চলাচলও বন্ধ হয়। যানজট ও শ্লথগতির কারণকে সামনে রেখে এক কামরার ট্রাম ও কংক্রিটের ট্রাম-পথ তৈরি হলেও, কিছুই কাজে লাগেনি। অপচয় হয়েছে সরকারি টাকা।

    ২০১১-য় শহরে ট্রাম-পথের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৫৬ কিলোমিটারে। রুটের সংখ্যাও কমে দাঁড়ায় ৩২টিতে। ২০১৯-এর ট্রাম-পথের বিস্তৃতি অর্ধেক (২৮ কিলোমিটার) এবং রুটের সংখ্যা কমে ন’টি হয়ে যায়। ধারণ ক্ষমতা কমায় শিয়ালদহ ও বেলগাছিয়া ফ্লাইওভার দিয়ে ট্রাম চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সঙ্গে যুক্ত হয় শহর জুড়ে মেট্রোর কাজ। ফলে বেলগাছিয়া ট্রাম ডিপোর ঘেরাটোপে আটকে যায় ৫৫টি ট্রাম। রাজাবাজারে ডিপো-বন্দি হয় ৫০টি। শহরের অন্য ডিপোগুলিতেও আটকে পড়ে একের পর এক ট্রাম। লকডাউনের পরে ২০২২-এ ট্রাম-পথ শহরের বুকে কমে ১৪ কিলোমিটার হয়। চলছিল বালিগঞ্জ-ধর্মতলা ও টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ রুটে। পরে আরও দু’টি রুট চালু হয় — ধর্মতলা-শ্যামবাজার ও ধর্মতলা-খিদিরপুর। কিন্তু মেট্রোর কাজের জন্য অল্প দিনের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় টালিগঞ্জ-বালিগঞ্জ এবং ধর্মতলা-খিদিরপুর রুট।

    এই মুহূর্তে পথ হারিয়ে ডিপো-বন্দি ২৪০টি ট্রাম। যার ৬০ শতাংশ বিকল। বাকি ট্রামগুলিও দীর্ঘ বন্দি-জীবনের জন্য অচল হতে বসেছে। এই তালিকায় ৮০ বছরের পুরোনো কাঠের বগির ট্রামও রয়েছে। মেরামতির জন্য তৈরি নোনাপুকুর ট্রাম-ওয়ার্কশপ প্রায় ধংসস্তূপের চেহারা নিয়েছে।

    ট্রামের ভবিষ্যত নিয়ে কার্যত অন্ধকারে রাজ্যের পরিবহণ অধিকারিকেরাও। তাঁদের দাবি, রাজ্য সরকার ট্রামে ইতি টানছে। একাধিক ট্রাম-ডিপো বিক্রি হয়ে গিয়েছে, বা বিক্রির প্রক্রিয়া চলছে। ডিপোয় পড়ে থাকা ট্রাম এখনই স্ক্র্যাপ করে বিক্রি ছাড়া কোনও পথই খোলা নেই। একটি ট্রামের গড় আয়ু ৫০-৬০ বছর। ভালো রক্ষণাবেক্ষণ করলে ৭০-৮০ বছর পর্যন্তও চালানো যায়। কিন্তু, সে-সব ভেবে এখন আর লাভ নেই। ডিপোয় পড়ে থাকা ট্রাম এখনই স্ক্র্যাপ করে বিক্রি না-করলে আখেরে লোকসান হবে সরকারেরই। কারণ, খোলা আকাশের নীচে পড়ে থাকা ‘অচল’ ট্রাম আর কিছুদিন পরে স্ক্র্যাপ হিসেবেও আর বিক্রি হবে না।

    পরিবহণ দপ্তরের আধিকারিকদেরই অভিযোগ, ট্রামের গতি বাড়াতে শহর জুড়ে যে স্টিলের ট্র্যাক বানানো হয়েছিল, এখন সরকারই পিচ ঢেলে তা চাপা দিয়ে দিচ্ছে। ভবিষ্যতে ওই রাস্তা মেরামতি বা নতুন করে তৈরি করার সময়ে ঠিকাদাররা জঞ্জাল হিসেবে ওই ট্র্যাক তুলে বিক্রি করে দেবে। কলকাতা ট্রাম কোম্পানি বা রাজ্য সরকার এক পয়সাও পাবে না। হয়তো কিছু সরকারি অফিসার বা নেতার পকেট ভর্তি হবে।
  • Link to this news (এই সময়)