• দলছুট রুপোলি শস্য ধরা দিল দামোদরে, দাম উঠল ২১০০!
    এই সময় | ০৫ অক্টোবর ২০২৪
  • এই সময় কলকাতা ও বর্ধমান: একা একটা ইলিশ সাঁতরে এল দামোদরে। আটকে গেল জালে। নাকি, দলছুট হয়ে একা ধরা পড়ে গেল? দামোদরের অতলে তার সঙ্গীরা কি এখনও সাঁতরে বেড়াচ্ছে?এই তো সে দিনের ঘটনা। দামোদরের বানে ভেসে গিয়েছিল খেতের ফসল। সেই বানের জল কমতেই ঘটল অবাক-করা এমন এক ঘটনা। দামোদরেই বানেই কি এল রুপোলি শস্য? বাঙালির চিরকালীন রসনা বিলাস — ইলিশ। ও পারের পদ্মা, এ পারের গঙ্গা, এমনকী রূপনারায়ণেও ইলিশ মেলাটা স্বাভাবিক। তা বলে দামোদরে? হ্যাঁ, তাকেই সত্যি প্রমাণ করে পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরে শুক্রবার সকালে একটি প্রমাণ মাপের ইলিশ উঠল এক জেলের জালে। সেই ইলিশ দেখতে ভিড় জমল বাজারে। তা বেচতে ডাকা হলো নিলাম। কেজিটাক সেই ইলিশ বিক্রি হলো ২১০০ টাকায়। মাছ কিনে গর্বে বুক ফুলিয়ে বাজার ছাড়লেন স্থানীয় লক্ষ্মণ বিশ্বাস।

    বিষয় যখন ইলিশ, তখন বাঙালির নস্ট্যালজিয়া ঠেকায় কে? অতএব পরিসংখ্যানের খেরোর খাতা খুলে বসলেন ইলিশ গবেষকেরা। তাঁরা বলছেন, বিরল হলেও দামোদরে ইলিশ মেলাটা বিরলতম নয় মোটেই। সিকি শতাব্দী আগেও এই জামালপুরেই দামোদরে মিলেছিল এমনই খান দুয়েক ইলিশ। তবে দামোদরের ইলিশ-পূরাণ আরও পুরোনো। সেখানকার প্রবীণেরা এখনও মনে করতে পারেন সে কথা। বড়শুল এলাকার বাসিন্দা সাংবাদিক শ্যামল মুখোপাধ্যায় তাঁদেরই এক জন। তিনি বলেন, ‘বাপ-ঠাকুর্দার কাছে শুনেছি, ৫০-৬০-এর দশকে জামালপুর ঘাটের পাশাপাশি পাল্লা রোড ঘাটে নিয়মিত মিলত ইলিশ। তার কারণ, এক সময়ে রূপনারায়ণে ইলিশের নিয়মিত আনাগোনা ছিল। পথ ভুল করে কিনা জানি না, রূপনারায়ণের ইলিশ প্রায়শয় ঢুকে পড়ত দামোদরে।’

    সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যার অধ্যাপক, তথা ইলিশ গবেষক অসীমকুমার নাথের কথায়, ‘এটাকে এক ধরনের দুর্ঘটনাই বলা যায়। আসলে রূপনারায়ণের সঙ্গে দ্বারকেশ্বর এবং মুণ্ডেশ্বরী নদীর যোগ রয়েছে। বানের সময় জলের তোড়ে মাছ উজানের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নামতে শুরু করেছিল। সেই সময় নদীর সংযোগস্থলে এসে পড়া রূপনারায়ণের কোনও ইলিশ হয়তো মুণ্ডেশ্বরী হয়ে দামোদরে ঢুকে পড়েছে।’

    জামালপুর থানারই উত্তর মোহনপুরের বাসিন্দা কাজল দাস বৃহস্পতিবার রাতে জাল পেতেছিলেন স্থানীয় জোরাবাঁধ এলাকার কাঠুড়ে পাড়ায়। শুক্রবার সকালে জাল তুলতেই বিস্মিত কাজল দেখেন তাতে আটকা পড়েছে এক কেজি ওজনের ইলিশটি। এখান থেকেই ৭-৮ কিলোমিটার দূরে মুইদিপুর এলাকায় মুণ্ডেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিশেছে দামোদর। সেই নদীর সঙ্গেই যোগ রয়েছে রূপনারায়ণের। মাছটি নিয়ে কাজল সোজা হাজির হন জামালপুরের মাছের আড়তে।

    মুহূর্তে রটে যায় তাজা ইলিশ আসার কথা। সে ইলিশ দেখতে ভিড় জমে যায়। মাছ ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও ভিড় জমান। অনেকেই মাছটি কিনতে চেয়ে দরাদরি শুরু করে দেন। ঠিক হয় নিলাম করা হবে সেই মাছ। দাম শুরু হয় ১২০০ টাকা থেকে। ১৩০০-১৭০০ থেকে দর ওঠে ২০০০ টাকা। বাকিরা রণে ভঙ্গ দিলেও জামালপুরেরই বাসিন্দা লক্ষ্মণ ২১০০ টাকায় মাছটি কিনে নেন। স্থানীয় ব্লক মৎস্য আধিকারিক নিত্যানন্দ মণ্ডল বলেন, ‘আমি এখানে এসেছি ২ বছর। অফিসের রেকর্ড ঘেঁটে জানতে পারি ২০-২২ বছর আগে দামোদরে একবার ইলিশ পাওয়া গিয়েছিল।’ ইলিশ ঝাঁকের মাছ বলে স্থানীয় জেলেরা আশায় বুক বাঁধলেও অসীম জানাচ্ছে প্রচুর ইলিশ দামোদরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ এ ইলিশ নেহাতই দলছুট। একাই সাঁতার কাটছিল সে।
  • Link to this news (এই সময়)