বিদেশের মাটিতে বাংলার গন্ধ! পটে সাজবে হংকং-এর মণ্ডপ
এই সময় | ০৫ অক্টোবর ২০২৪
সোমনাথ মাইতি, চণ্ডীপুর
তালপাতার পাখা ও কুলোর উপরে আঁকা বাংলার পটচিত্রে সাজবে হংকং-এর পুজো মণ্ডপ। ওখানকার বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন(এইচকেবিএ)-এর পুজো এ বার ২৬ বছরে পড়েছে। মাস দেড়েক আগে পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরের বাসিন্দা আবেদ চিত্রকরকে ফোন করেন এইচকেবিএ-এর কর্তারা। মণ্ডপ সাজানোর জন্য ২০০টি কুলো ও ২০০টি তালপাতার পাখার উপরে দুর্গার পটচিত্র আঁকার বরাত দেন তাঁরা। মোটা টাকার বরাত পেয়ে আবেদ গ্রামের আরও ১২ জন পটুয়াকে নিয়ে কাজ শুরু করেন। ২০ সেপ্টেম্বর তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় কলকাতার নির্দাষ্ট ঠিকানায়। সেখান থেকে হংকংয়ে।কী ভাবে যোগাযোগ হলো হংকং-এর বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে? আবেদ বলেন, ‘কলকাতায় অনুষ্ঠিত লোক সংস্কৃতি মেলায় এক প্রবাসীর সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। ওই ভদ্রলোক বাড়ি সাজানোর জন্য কয়েকটি পটচিত্র কিনে হংকংয়ে ফিরে যান। তাঁর মাধ্যমে ওখানকার বেঙ্গলি অ্যাসোসিয়েশন আমাদের কাজের কথা জানতে পারেন। ওঁরা বিশ্বাস করে আগেই টাকা পাঠিয়ে দেন। সময় মতো পাঠানোর জন্য আমি, আমার স্ত্রী ও আরও ১২ জন পটুয়াকে নিয়ে দিনরাত কাজ করেছি।’
তিনি বলেন, ‘মা দুর্গার পরিবার আঁকা তালপাতার পাখা দিয়ে ভি আকৃতির করে মণ্ডপ করা হবে। দেবীর মুখ আঁকা কুলো দিয়ে বাকি অংশ সাজানো হবে পুজো মণ্ডপ।’ আবেদের স্ত্রী সায়রা চিত্রকর বলেন, ‘এর আগে ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় বিশ্ব লোক সংস্কৃতির উৎসবে আমি পটচিত্র নিয়ে হাজির হয়েছিলাম। ওই মেলায় ভালো বিক্রি হয়েছিল। এ বার আমাদের পটের কাজ হংকংয়ের পুজো মণ্ডপে দেখা যাবে ভেবে খুব আনন্দ হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘পটচিত্র ও পটচিত্রে আঁকা বিভিন্ন সামগ্রীর ব্যবহার যত বাড়বে পটুয়াদেরও আর্থিক উন্নতি হবে।’
কথায় বলে, যেখানে বাঙালি সেখানেই পুজো। হংকংয়েও দু’দশকের বেশি সময় ধরে এইচকেবিএ-এর উদ্যোগে দুর্গাপুজো হয়ে আসছে। সংগঠনের পক্ষে রাজদীপ মজুমদার বলেন, ‘এখানে কলকাতার মতো বড় মণ্ডপ করা যায় না। তবু আমরা প্রতি বছর নতুন নতুন থিমে মণ্ডপ সাজানোর চেষ্টা করি। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিই, বাংলার হারিয়ে যাওয়া পটচিত্র দিয়ে এ বারের মণ্ডপ সাজানো হবে। বিদেশের মাটিতে বাংলার গন্ধ পেতেই এই সিদ্ধান্ত।’
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়াগ্রাম ও পূর্ব মেদিনীপুরের চণ্ডীপুরের হবিচক এলাকায় পটুয়া বা পট শিল্পীদের বাস। চণ্ডীপুরে ১০০ ঘর পটুয়ার মধ্যে ৮০ থেকে ৮৫ জন এই লোকশিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ভাবে যুক্ত। আগে পটুয়ারা বিশেষ ধরণের কাগজের উপরে প্রাকৃতিক রং দিয়ে পৌরাণিক কিংবা সাম্প্রতিক বিষয়ের উপরে ছবি এঁকে সেই ছবির সঙ্গে গান গেয়ে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চাল-ডাল সংগ্রহ করতেন।
পরে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মেলায় পটচিত্র প্রদর্শন ও বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। কয়েক বছর ধরে কলকাতা ও দিল্লির কয়েকটি পুজো মণ্ডপে পট ও পটচিত্রের ব্যবহার হলেও এই প্রথম সরাসরি চণ্ডীপুরের পটুয়াদের শিল্প সামগ্রী দিয়ে বিদেশের পুজো মণ্ডপ সাজানোর খবরে খুশি পটুয়ারা।