• জয়নগরে আরজি করের জুজু দেখছেন কুণাল? বাম-বিজেপির প্রতিবাদে খুঁজে পেলেন ‘চক্রান্ত’
    হিন্দুস্তান টাইমস | ০৫ অক্টোবর ২০২৪
  • দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থানার অন্তর্গত মহিষমারিহাট পুলিশ ফাঁড়ি এলাকায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ ও খুনের যে অভিযোগ উঠেছে, তাকে 'রহস্যজনক' ও 'নিন্দনীয়' বলে অভিহিত করলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ।

    একইসঙ্গে তাঁর বার্তা, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সিপিএম ও বিজেপি-সহ বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও কর্মীরা নাকি 'সাধু সেজে অরাজকতা তৈরি করতে' চাইছেন! কুণালের আবেদন, বিরোধীদের 'চক্রান্ত' যেন কিছুতেই সফল না হয়।

    তৃণমূল নেতার সরাসরি অভিযোগ, পুজোর মরশুমে অশান্তি ছড়াতেই জয়নগরের ঘটনাকে ব্যবহার করতে চাইছে বিরোধীরা। শনিবার দুপুর ৩টে নাগাদ নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এই প্রসঙ্গে একটি পোস্ট করেন কুণাল ঘোষ।

    সেই পোস্টে কুণাল লেখেন, ‘জয়নগরের বালিকার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা নিন্দনীয়। যে বা যারা দায়ী, চরম শাস্তি চাই। কিন্তু এই সুযোগে ধর্ষণ, খুনের রেকর্ড গড়া সিপিএম, বিজেপিসহ কিছু বিরোধীকে এখন সাধু সেজে অরাজকতা তৈরি করতে দেবেন না। পুজোর মরশুমে বিরাট চক্রান্ত চলছে অশান্তির।’

    উল্লেখ্য, শুক্রবার রাতে জয়নগরের সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দা ওই বালিকাকে টিউশন পড়ে বাড়ি ফেরার পথে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে অভিযোগ পরিবারের সদস্যদের। সংবাদমাধ্যমে তাঁরা জানিয়েছেন, রাতে মেয়ে বাড়ি না ফেরায় সঙ্গে-সঙ্গে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। কিন্তু, পুলিশ কোনও সাহায্য করেনি। এমনকী, তাঁদের অভিযোগ শুনতে পর্যন্ত চায়নি।

    পরবর্তীতে ওই বালিকার দেহ উদ্ধার হতেই শনিবার সকাল থেকে কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় গোটা এলাকা। স্থানীয়দের দাবি, ওই বালিকাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনায় পুলিশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে ফাঁড়িতে হামলা চালায় উন্মত্ত জনতা। পুলিশকর্মীদের মারধর করারও অভিযোগ ওঠে।

    ইতিমধ্যে, জয়নগরে পৌঁছে যান বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা পাল থেকে শুরু করে বাম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়। পৌঁছন সিপিএমের প্রবীণ নেতা কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।

    একদিকে, এলাকার তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলের সঙ্গে যে বিবাদে জড়ান অগ্নিমিত্রা পাল, অন্যদিকে পুলিশের সঙ্গে বিবাদে জড়ান মীনাক্ষী-কান্তিরা। অভিযোগ, প্রাথমিকভাবে তাঁদের নিহত ছাত্রীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেওয়া হয়। যদিও পরে তাঁরা সন্তানহারা বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেন।

    গোটা ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার ও পুলিশ প্রশাসনের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বাম-বিজেপি। আর এই জায়গা থেকেই কুণাল ঘোষ তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে কার্যত সতর্কবার্তা দিয়েছেন।

    জয়নগরের ঘটনার প্রতিবাদ জানালেও কুণাল মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন, বাম জমানাতেও রাজ্যে অনেক খুন ও ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। উল্লেখ্য, আজও কথায়-কথায় তৃণমূল নেতাদের গলায় তাপসী মালিকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার কথা শোনা যায়। কুণালের এদিনের সতর্কবার্তাও আদতে তারই অনুরণন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।

    অন্যদিকে, বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, হরিয়ানা থেকে একের পর এক ধর্ষণ ও খুনের অভিযোগ উঠলেও তা নিয়ে রাজ্য বিজেপির নেতা ও কর্মীরা রা কাড়েন না। অথচ, রাজ্যে এমন কোনও ঘটনা ঘটলেই তাঁরা রে রে করে তেড়ে আসেন।

    তথ্যাভিজ্ঞ মহল মনে করছে, বাম-বিজেপির এই 'চরিত্র' আরও একবার মানুষকে স্মরণ করিয়ে দিতেই হয়তো কুণাল ঘোষ তাঁদের 'ভেকধারী সাধু' বলে কটাক্ষ করতে চেয়েছেন।

    অন্যদিকে, আরজি কর কাণ্ডের পর থেকেই রাজ্যের সরকার ও শাসকদলের তরফে বারবার অভিযোগ তোলা হয়েছে, 'বাংলাবিরোধীরা' পুজোর মরশুমে অশান্তি ছড়ানোর চক্রান্ত করছে।

    জয়নগরের ঘটনার পর বাম-বিজেপি নেতা-নেত্রী সেখানে দ্রুততার সঙ্গে পৌঁছে যাওয়ার মধ্যেও কি সেই চক্রান্তেরই গন্ধ পেলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ? নাকি আরজি কর কাণ্ডের পর আরও একটি ধর্ষণ ও খুনের ঘটনা সামনে আসতেই ফের গণঅভ্যুত্থানের আশঙ্কা করছেন তিনি?
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)