আরজি কর কাণ্ডে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার টালা থানার প্রাক্তন ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। এরই মাঝে সম্প্রতি টালা থানার চার পুলিশ আধিকারিক সিজিও কমপ্লেক্সে ডেকে জেরা করেছে সিবিআই। জেরার মুখে পড়া পুলিশকর্মীদের মধ্যে একজন মহিলাও ছিলেন বলে জানা গিয়েছে। এই সবের মাঝেই গতকাল শিয়ালদা আদালতে আরজি কর মামলার শুনানির সময় সিবিআই আইনজীবী জানান, এই ঘটনায় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের ক্ষেত্রে পুলিশের ভূমিকার বিষয়টির ওপর নজর রয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থার।
ইতিমধ্যেই আরজি কর কাণ্ডে পুলিশের কার্যপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। ময়নাতদন্ত থেকে শুরু করে সেমিনার রুমে 'বহিরাগত' প্রবেশ নিয়ে অসন্তোষ দেখা গিয়েছে সিবিআইয়ে। সুপ্রিম কোর্টে তারা জানিয়েছেন তথ্য প্রমাণ বিকৃতির কথ। এরই মাঝে কয়েকদিন আগে জানা যায়, সেই সেমিনার রুম থেকে ১৪ অগস্ট একটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ। প্রশ্ন ওঠে, পুলিশ ৯ অগস্ট সেই মোবাইল না পেলেও ১৪ অগস্ট কীভাবে সিবিআই সেটি পেল? এদিকে কলকাতা পুলিশের প্রাক্তন ডিসি নর্থ অভিষেক গুপ্তা নাকি নির্যাতিতার মা-বাবাকে টাকা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন বলে অভিযোগ। এমনকী চিকিৎসকের মৃতদেহ দ্রুত দাহ করার ক্ষেত্রে পুলিশ চাপ দিয়েছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ গিয়ে নির্যাতিতার মা-বাবার বাড়ি ঘিরে ফেলেছিল বলে দাবি করেছিলেন খুন হওয়া চিকিৎসকের বাবা। পরে সেমিনার রুমে 'বহিরাগতদের' ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এলে তা খণ্ডন করতে পুলিশ যেভাবে সাংবাদিক বৈঠক করে, তা নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। পুলিশের নানান দাবি পরে আইএমএ খণ্ডন করে দেয়।
এই আবহে আদালতে এর আগে সিবিআই দাবি করেছিল, গত ৯ অগস্ট সকাল ১০টার সময় থানায় ছিলেন না অভিজিৎ। থানার সিসিটিভি ফুটেজ থেকেই তা জানা গিয়েছে। এই আবহে সেই সময় অভিজিৎ কোথায় ছিলেন, তা জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা। উল্লেখ্য, সেদিন সকাল ১০টা ১০ মিনিট নাগাদ নাকি পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছিল খুনের বিষয়ে। তাই এই সময়ে অভিজিৎ কোথায় ছিলেন, তা জানা খুবই জরুরি। সিবিআইয়ের দাবি, দেহ ময়নাতদন্ত করা বা না-করা নিয়ে সব সিদ্ধান্ত একা ওসি-র পক্ষে নেওয়া সম্ভব ছিল না। সেদিন মৃতার মা, বাবা তো দ্বিতীয় বার ময়নাতদন্তের অনুরোধও করেছিলেন। এই আবহে ধৃত অভিজিতের ফোনের কিছু নথি থেকে বেশ কিছু সূত্র মিলেছে বলে দাবি করা হচ্ছে।
এই সবের মাঝেই সন্দীপ ঘোষের আইনজীবী এবং অভিজিৎ মণ্ডলের আইনজীবীরা গতকাল আদালতে দাবি করেন, শুধু প্রভাব খাটানোর কথা বলে জামিন আটকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। প্রমাণ লোপাটের যে অভিযোগ করা হচ্ছে সেটা তো জামিনযোগ্য। এদিকে অভিজিৎ মণ্ডলের আইনজীবী অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া টালা থানার ওসিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অভিজিৎ মণ্ডলের আইনজীবী দাবি করেন, তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে সেগুলিও জামিনযোগ্য। সেক্ষেত্রে তাঁকে অযথা আটকে রাখা হয়েছে।