• চুঁচুড়ার শীলবাড়িতে ইন্দো-ডাচ ঘরানায় সাজানো ঠাকুরদালানে পূজিত হরগৌরী
    News18 বাংলা | ০৫ অক্টোবর ২০২৪
  • রাহী হালদার, হুগলি: গঙ্গা তীরবর্তী হুগলি জেলা সমৃদ্ধ তার সংস্কৃতিক বৈচিত্র নিয়ে। পর্তুগিজ, ফরাসি, ওলন্দাজ অনেক ইউরোপীয় শক্তি এসে উপনিবেশ গঠন করেছিল গঙ্গা তীরবর্তী এই জেলার বিভিন্ন অংশে। বৈদেশিক শক্তি তাদের উপনিবেশ-দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে অনেক বছর হল। কিন্তু রয়ে গিয়েছে তাদের সমসাময়িক সময়ের অনেক স্মৃতি। এমনই এক কাহিনি রয়েছে নীলাম্বর শীলের তৈরি করা বাড়িটিতে।

    শীলরা ছিলেন তৎকালীন সময়ের নামজাদা ব্যবসায়ী। তবে সেই সময়ের বর্গী ও ইংরেজদের অত্যাচারের ফলে তারা সুরক্ষা পাওয়ার জন্য ওলন্দাজদের দুর্গ প্রাচীর বেষ্টিত চুঁচুড়া শহরে এসে বসবাস স্থাপন করেন। জলপথ কাছে থাকায় তিনটি সুবিশাল পালতোলা নৌকায় সোনা রুপোর মুদ্রা নিয়ে তারা বাণিজ্য করতে থাকেন। ক্রমেই ব্যবসায়িক হিসেবে তাদের নাম ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। চুঁচুড়ায় আসার মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যেই তাঁর ব্যবসা তুঙ্গে পৌঁছায় এবং তিনি ১৭৬৩ সালে চুঁচুড়ার একটি প্রকাণ্ড বাড়ি নির্মাণ করেন যা বর্তমানে ‘বড় শীলবাড়ি’ নামে পরিচিত।

    ইন্দো-ডাচ স্থাপত্যশৈলীর প্রভাব বিশেষ ভাবে লক্ষণীয়। বাড়ির কেন্দ্রস্থলে একটি অপূর্ব ঠাকুরদালান রয়েছে যা নীলাম্বর শীলের দ্বিতীয় পুত্র মদনমোহন শীলের তত্বাবধানে ১৮০৩ সালে তৈরি হয়। ঠাকুরদালানে গ্রিক কোরিন্থিয়ান শৈলির সরু স্তম্ভের সারির উপরে পঙ্খের কারুকার্যখচিত খিলানগুলির দিকে আজ এই আড়াইশো বছর পরেও মুগ্ধ বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে হয়।

    বর্তমানে বড় শীলবাড়ির দুর্গাপুজো চুঁচুড়ায় অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গন্তব্য হয়ে উঠলেও এই পরিবারের আদি পুজো আসলে কার্তিকপুজো, যা সেই মদনমোহন শীলের ঠাকুরদালান নির্মাণের সময় থেকেই চলে আসছে। পরিবারের সদস্যদের কাছে আজকের দুর্গাদালানের আগে কার্তিকদালান নামেই পরিচিত ছিল।

    শীল বাড়িতে প্রায় আড়াইশো তিনশো বছর ধরে কার্তিকপুজো হয়। চারদিনের কার্তিকপুজো জাঁকজমকে ভরা। দুর্গাপুজো শুরু হয় ১৯৯৭ সালে।সেই পুজোতেও জাঁক হয় খুব। কলকাতা নিবাসী বাড়ির সদস্যরা আসেন পুজোর সময়।চুঁচুড়ায় ছড়িয়ে থাকা শীল বংশের সদস্যরা পুজোর দিনগুলোয় একত্রিত হন। ঠাকুরদালান জমজমাট থাকে।পুজোর চারদিন বাড়ির হেঁশেল বন্ধ থাকে। দলে ভিয়েন বসে এক সঙ্গে খাওয়া দাওয়া চলে। পুজো হয় নিষ্ঠা সহকারে। নাড়ু প্যারাকি খাজা গজা পুজোর মিষ্টি সব বাড়িতেই তৈরি হয় আজও। পুজোর দিন গুলোতে নাচ গান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলে শীলবাড়ির সুবিশাল দালানে। শীলবাড়ির প্রতিমার গয়না পরানো হয় ষষ্ঠীর দিন। কলা বৌ স্নানে যে উৎসবের সূচনা হয় গঙ্গার ঘাটে বিসর্জনের শোভাযাত্রায় শেষ হয় উৎসব।
  • Link to this news (News18 বাংলা)