ঘাটালে এবার নজর টানবে মহিলা পরিচালিত অনেকগুলি দুর্গাপুজো
বর্তমান | ০৬ অক্টোবর ২০২৪
সংবাদদাতা, ঘাটাল: ঘাটাল মহকুমায় পুরুষদের সঙ্গে মহিলাদেরও সর্বজনীন দুর্গাপুজো করার প্রবণতা বাড়ছে। প্রত্যেকটি পুজোর সূচনার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে নানা অভিমান, অপমান, উপেক্ষা ও সংক্রমণের আতঙ্কের কাহিনি।
ঘাটাল থানার নিশ্চিন্দিপুরে একটি জমিদার বাড়িতে দুর্গাপুজো হয়। সেই পুজোতে সেভাবে অংশগ্রহণ করার সুযোগ না পাওয়ার আক্ষেপেই নিশ্চিন্দিপুর মহিলা দুর্গোৎসব কমিটি পুজোর সূচনা হয়েছিল। এবছর সেই পুজো ষষ্ঠ বর্ষে পদার্পণ করল। কমিটির পক্ষে ঝিলিক ঘোষ, পাপিয়া ঘোষ ও শ্রাবণী রানা জানালেন, ৪০ জন সদস্য মিলে পুজোর আয়োজন করি। পুজোর থিম ‘মায়ের আঁচলের মহিমা এবং হারিয়ে যাওয়া আঁচলের বহুমুখী ব্যবহার’। এবার সপ্তমীতে মরণোত্তর দেহদান কর্মসূচি ও একটি সচেতনতা শিবিরের আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
২০২০ সালে ছিল করোনা সংক্রমণের আতঙ্ক। এলাকার বাইরে গিয়ে পুজোয় অংশগ্রহণ করলে সংক্রমণ বাড়বে। তাই বেশ কয়েকজন মহিলা উদ্যোগ নিয়ে দাসপুর থানার বাড়জালালপুর দুর্গোৎসব কমিটির জন্ম দেন। এখন ওই কমিটির সদস্য সংখ্যা ২৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে পুজো কমিটির সম্পাদক চন্দনা ঘোড়ই জানান। সরকারি অনুদান এখনও শুরু হয়নি। এবার পুজোয় কমিটির পক্ষ থেকে মশারি ও বেডশিট বিলি করা হবে। নবমীতে খিচুড়ি এবং দশমীতে পরমান্ন ভোগের ব্যবস্থা থাকছে। ওই থানার বালকরাউত গ্রামের মহিলাদেরও অনেক দূরে গিয়ে পুজোর অঞ্জলি দিতে হতো। কমিটির অন্যতম কর্মকত্রী রূপালি জানা জানালেন, সেই কারণেই তাঁরা ২০১৮ সাল থেকে ৭২ জন মহিলা সদস্যদের নিয়ে পুজো করে আসছেন।
ঘাটাল থানার ‘রঘুনাথপুর শ্রীদুর্গা পরিবার’ নামে সর্বজনীন দুর্গাপুজোটি এলাকার প্রায় ১৫০ জন মহিলা একত্রিত হয়ে এবছর থেকেই শুরু করেছেন। সরকারি অনুদান পায়নি ওই পুজো কমিটি। তাই বাজেট দেড় লক্ষ টাকার মধ্যে। পুজো কমিটির সম্পাদক অনিমা ধাড়া জানালেন, মায়ের আরাধনায় এলাকায় নতুন করে আনন্দের সূচনা হয়েছে।
চন্দ্রকোণা থানার পিংলাস সর্বজনীন দুর্গোৎসব পুজো কমিটি পুরোপুরি মহিলাদের। অত্যুৎসাহী মাত্র ১৩ জন মহিলা সদস্যই পুজোটি চালিয়ে আসছেন। এবার পুজোটি চতুর্থ বছরে পড়ল। পুজো কমিটির সম্পাদক সোনামণি খান বলেন, ‘নিজেদের গ্রাম ছাড়াও পাশাপাশি চার-পাঁচটি গ্রামের মানুষ এই পুজোয় অংশগ্রহণ করেন। পুজো চলাকালীন প্রত্যেক দিন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
মহিলারা বিগত ছ’বছর ধরে পুজোর দায়িত্ব সামলাচ্ছেন দাসপুর থানার ডিহিরামনগর সর্বজনীন দুর্গোৎসবের। টিমে রয়েছেন ৪০ জন মহিলা। এই পুজো এবছর ২৪তম বর্ষে পড়ল। প্রথম দিকে পুজোর দায়িত্ব সামলাত রামনগর মিতালি সঙ্ঘ ক্লাব। সভাপতি পাপিয়া হাইতের কাছে জানা গেল, সেই পুজোয় অনেক সমস্যা দেখা যেত। সেই সমস্যা দূর করতে মেয়েরাই পুজোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এবছরের পুজোর বাজেট চার লক্ষ টাকা। ওই থানার রাধাকান্তপুর মহিলা সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটি। থিমের নাম স্বদেশ নারী শক্তি। এবার সপ্তম বছরে চার লক্ষ টাকার বাজেট। পুজো কমিটির সম্পাদক সুজাতা সিং জানালেন, ৪০ জন মহিলা সদস্য পুজো পরিচালনা করেন। মহিলাদের পরিচালিত ওই থানারই সাগরপুর মহামায়া মাতৃ সঙ্ঘের পুজোও সপ্তম বছরে পড়ল। পুজোয় মহিলারা নাটক সহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।
দাসপুরের শিবপুর পল্লিশ্রী মহিলা পুজো কমিটি এবার তাদের তৃতীয় বর্ষের থিম করেছে ঢাক। দাসপুর গঞ্জের ওই পুজোর অন্যতম আকর্ষণীয় পুজো হিসেবে ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে। ওই গঞ্জেরই মহিলা পরিচালিত সুজানগর নিউ শীতলা স্পোর্টিং ক্লাবের পুজোটিও এবার তৃতীয় বর্ষে পড়ল। মহিলারা দারুণ ভাবে পুজোটি উপভোগ করেন বলে কমিটির সম্পাদক সুমিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান।