• ঠাকুরপুকুর এস বি পার্ক সর্বজনীন ফেরাবে হারানো শৈশব, বড়িশা ক্লাবে বেহালার বিস্মৃত ইতিহাস
    বর্তমান | ০৬ অক্টোবর ২০২৪
  • শোভন চন্দ, কলকাতা: আশ্বিনের ভোর। উঠোনে বসে তেলচিটে রেডিওয় একমনে মহিষাসুরমর্দিনী শুনছেন নগেনবাবু। বারবার বিল্টুর একই প্রশ্ন— কী গো দাদু,কখন মহিষাসুরের সঙ্গে দুগ্গার লড়াই হবে? পাশ থেকে ফিক করে হেসে উঠল বিল্টুর বোন তুলি। উমম... চুপটি করে শোন না। ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলেন নগেন দত্ত। পরে অবশ্য নাতি-নাতনিকে শোনালেন দুগ্গা মায়ের গপ্পো। এরপর বেলা বাড়তেই সবাই হইহই করে ঠাকুর আনতে বেরিয়ে গেল...। অক্টোবরের তপ্ত দুপুর ও ব্যস্ত শহুরে জীবনে এসব নিছকই গল্পকথা। কারণ, বহুকাল আগেই হারিয়েছে একান্নবর্তী পরিবারের সেই আমেজ। নেই সরল-স্নিগ্ধ শৈশব আর শিশুমনের কল্পনার জালবিস্তার। এখন মুঠোফোনে বন্দি জীবন। হোমস্ক্রিন শুষে নিচ্ছে সমস্ত কৌতূহল, কল্পনাশক্তি। এবার সেই হারানো দিনই ফিরিয়ে আনছে ঠাকুরপুকুর এস বি পার্ক সর্বজনীন। ‘আমাদের দুগ্গা মা’ থিমের মধ্য দিয়ে তুলে ধরা হচ্ছে বর্তমান ও অতীতের টানাপোড়েন। উদ্যোক্তা সঞ্জয় মজুমদার জানাচ্ছেন, ‘৫৪তম বছরে পুজোর বাজেট ৫০-৫৫ লক্ষ টাকা। মণ্ডপজুড়ে থাকছে প্যাস্টেল রঙের কচি হাতের আঁকিবুঁকি। এই ভাবনার নেপথ্যে থাকা শিল্পী পূর্ণেন্দু দে’র কথায়, বর্তমানের বন্দি ও অতীতের মুক্ত শৈশবকে তুলে ধরতে মণ্ডপের সামনের দিক সাদা-কালো এবং ভিতরে নানা ধরনের রং ব্যবহৃত হয়েছে। শিশুদের কথা মাথায় রেখেই গড়ে উঠেছে মূর্তি। তাই দেবী এখানে বাৎসল্যের প্রতীক।

    শৈশবের ঘোর কাটলে ডুব দেওয়া যেতে পারে ইতিহাসে। পলাশির প্রান্তরে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য তখন অস্তমিত। বঙ্গে প্রবেশ করেছে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ইতিহাস বলছে, সেই সময় জমিদার সাবর্ণ রায়চৌধুরীর পরিবার ইংরেজদের হাতে গোবিন্দপুর, সুতানটি ও কলিকাতা নামে তিনটি গ্রাম তুলে দেয়। এই গোবিন্দপুর পেরিয়ে সুন্দরবনের জঙ্গলের একটি অংশ ছিল বর্তমানের বেহালা। সময়ের ফেরে কংক্রিটের বসতি কেড়ে নেয় জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্রকে। এবার সেই ইতিহাস ও বাস্তুতন্ত্র উঠে আসবে বড়িশা ক্লাবের পুজোয়। থিমের নাম বসতি। প্রাচীনত্বের নির্দশন হিসেবে মণ্ডপে রয়েছে কালীঘাট মন্দিরের ছোঁয়া। উপস্থিত সুন্দরবনের লৌকিক দেবতা দক্ষিণ রায়ও।

    ৭৬তম বর্ষে নারীদের সম্ভ্রমের, অধিকারের লড়াইয়ে সামিল হচ্ছে বড়িশা সর্বজনীন। থিমের নাম ‘রুদ্রাণী’। লোহা, প্লাইউড,লাল কাগজের ফুল দিয়ে দিয়ে তৈরি মণ্ডপ। শিল্পী সৌমেন পালের তৈরি দেবীমূর্তির দশহাতে থাকছে দশটি ত্রিশূল। ৬৭ বছরে পা দেওয়া বেহালা আদর্শপল্লির পুজোর থিম আবার ‘আশ্রয়’। ঠিকানার খোঁজে এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে উড়ে বেড়ায় পাখি। বাসা বাঁধে। ফের বাসা বদলায়। ঠিক একইভাবে মহিলারাও এক জীবনে বাড়ি বদলান, বদলে যায় পরিবারও। এমন ভাবনাকেই তুলে ধরেছে রায় বাহাদুর রোডের এই পুজো। শিল্পী সুবোধ পালের তৈরি মা এখানে ধ্যানমগ্ন। নারকেলের খোসার পাতলা অংশ দিয়ে তৈরি পাখির বাসা, গাছের ছাল, মাটির হাঁড়ি দিয়ে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ।

    ৪৫তম বর্ষে শকুন্তলা পার্ক নেতাজি সঙ্ঘের পুজোর ‘থিম মৃণালিনী’। সৌন্দর্য ও সাফল্যের ভাবনার মেলবন্ধনে গড়ে তোলা হয়েছে মণ্ডপ ও মায়ের মূর্তি। প্রাধান্য পেয়েছে মৃণালিনীর অর্থ।
  • Link to this news (বর্তমান)