আরজি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় নাগরিক সমাজ ও চিকিৎসকদের প্রতিবাদ আন্দোলনে বহু চেষ্টা করেও ঘেঁষতে পারেননি রাজনৈতিক নেতারা। গত দু’মাস ধরে ওই ঘটনায় রাজ্যের শাসক দল নাস্তানাবুদ হলেও লাভের গুড় বিরোধীদের ঘরে আসেনি। উল্টে প্রতিবারই জুনিয়র চিকিৎসকদের ধিক্কার ও প্রবল প্রতিরোধে পিছু হটতে হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতানেত্রীদের। তার মধ্যেই জয়নগরে নাবালিকা ছাত্রীর খুন ও ধর্ষণের অভিযোগকে কেন্দ্র করে নতুন করে মাঠে নামছে বিরোধীরা। তবে আরজি কর থেকে শিক্ষা নিয়ে এই ঘটনায় সতর্ক তৃণমূল শিবিরও।আরজি করের ঘটনার পরই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আইন এনে ধর্ষকদের এনকাউন্টার করার কথা বলেছিলেন। জয়নগরের ঘটনার পর সেই একই তত্ত্ব শোনা গেল ঘাটালের তৃণমূল সাংসদ দেবের মুখে। শনিবার নিজের ছবির প্রচারে বারুইপুরে এসে ক্ষোভ উগরে দিয়ে ধর্ষকদের গুলি করে মেরে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেন দেব।
তাঁর কথায়, ‘শুট অ্যাট সাইট করে দাও ভাই। ধর্ষক যদি ধরা পড়ে এবং অপরাধ প্রমাণিত হয়, তবে তাদের তোমার-আমার ট্যাক্সের টাকায় বাঁচিয়ে লাভ নেই।’ যদিও একই সঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘আমি একজন জনপ্রতিনিধি। এই শব্দগুলি আমি ব্যবহার করতে পারি না।’
তৃণমূলের প্রাক্তন রাজ্যসভার সাংসদ কুণাল ঘোষও বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘জয়নগরের ঘটনা জঘন্য এবং নিন্দনীয়। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। অভিযুক্ত গ্রেপ্তার হয়েছে।’ এর পরই তিনি বলেন, ‘মেয়েদের উপর এই ধরনের পাশবিক অত্যাচার যারা করছে, তাদের প্রকাশ্যে টাঙিয়ে ফাঁসি দেওয়া উচিত অথবা গুলি করে মারা উচিত। কিন্তু গণতান্ত্রিক রাজ্যে সেটা আমরা করতে পারি না। তাই যত দ্রুত সম্ভব তিলজলা মডেলে বিচার প্রক্রিয়া শেষ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।’
জয়নগরের ঘটনা নিয়ে বিরোধীরা পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সরব হয়েছে। তৃণমূলও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে পুলিশকে ঢালাও সার্টিফিকেট দেওয়ার পথে হাঁটছে না। কুণালের কথায়, ‘গ্রামবাসীদের দাবি, অভিযোগ জানানোর জন্য তাদের বিভিন্ন থানায় ঘুরতে হয়েছে। যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে, তা হলে পুলিশ সুপারকে অনুরোধ করব, গ্রামবাসীদের অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য।’ এর পরই তাঁর মন্তব্য, ‘পুলিশ এবং সরকারি কর্মীদের একাংশ এমন কিছু কাজ করছেন যাতে সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে, মানুষের ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে।’ এ দিন জয়নগরে যে গ্রামবাসীরা পুলিশ ফাঁড়ি ভাঙচুর করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কড়া আইনি পদক্ষেপ না করারও অনুরোধ করেছেন কুণাল।
বিজেপি ও সিপিএম অবশ্য জয়নগরের ঘটনায় কোমর বেঁধে ঝাঁপিয়েছে। রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আজ, রবিবার জয়নগর যাচ্ছেন। শনিবার ঘটনার প্রতিবাদে কলকাতা এবং রাজ্যের বেশ কিছু জায়গায় মিছিল করে বিজেপি। সুকান্ত বালুরঘাটে সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘রাজ্যে মহিলাদের কোনও নিরাপত্তা নেই। তাঁদের নিরাপত্তার জন্য বিজেপি আরও আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’
বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘মহিলাদের উপর অত্যাচারের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটে চলেছে। একজনও সাজা পায় না। শাসক দলের ঝান্ডার নীচে থাকলে এই অপরাধ কোনও দিনই বন্ধ হবে না।’ এ দিন দুপুরেই জয়নগরে পৌঁছে যান মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়, কনীনিকা ঘোষ, কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো সিপিএম নেতা-নেত্রীরা।
তবে জনতার ক্ষোভের আগুন সবচেয়ে বেশি ছিল তৃণমূল নেতৃত্বের দিকেই। এ দিন সকালে খবর পেয়ে কুলতলির তৃণমূল বিধায়ক গণেশচন্দ্র মণ্ডল এলাকায় গেলে তাঁকে তাড়া করেন মহিলারা। প্রাণ বাঁচাতে ছুটে পালান তিনি। পদ্মেরহাট হাসপাতালে গিয়ে ক্ষোভের মুখে পড়েন তৃণমূল সাংসদ প্রতিমা মণ্ডলও। তাঁকে জুতো দেখানো হয়। প্রতিমার সঙ্গে মুখোমুখি বচসায় জড়ান বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। তিনি বলেন, আঙুল উঁচিয়ে অগ্নিমিত্রা বলে, ‘আপনি এখানকার সাংসদ। আপনাকে জবাব দিতে হবে।’ পাল্টা ক্ষোভ উগরে দিয়ে সাংসদ বলেন, ‘আমি কাউকে কিছু বলিনি। কিন্তু ওঁরা শেখাচ্ছে, আমার শাড়ি খুলে দেওয়া হোক।’