কলকাতার ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ। তারা শহরকে যানমুক্ত করতে ট্রাম চালানোর বিরোধী — যুক্তি দিচ্ছেন পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। প্রশ্ন উঠছে, ট্রাম তো চলছে মাত্র দু’টি রুটে। শহরের অন্যত্র ট্রামের বাদবাকি রুট বন্ধ। তাতেও কি কমেছে যানজট? মন্ত্রীর দাবি, ট্রাম তুলে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয় বাম আমলেই।তার জন্য বাম সরকার গত ন’য়ের দশকে ট্রাম কোম্পানিকে দিয়ে বাস পরিষেবা চালু করে। কিন্তু, মুখ থুবড়ে পড়ে সেই পরিষেবাও। ২০১১-র পালাবদলের পরে সেই পরিষেবা চালু করার কোনও সদিচ্ছা কেন দেখা যায়নি, প্রশ্নটা ধাক্কা খেয়ে ফিরে এসেছে সরকারি দপ্তর থেকে।
ট্রামের জন্য যানজট?
তথ্য বলছে, প্রতি বছর বৃহত্তর কলকাতায় শুধু অ-বাণিজ্যিক গাড়ির রেজিস্ট্রেশন বাড়ছে গড়ে তিন লক্ষ করে। ২০১১-তে রেজিস্ট্রেশন হয়েছিল ২০ লক্ষ ৯২ হাজার ২৩টি অ-বাণিজ্যিক গাড়ির। আর ২০২২-য়ে তা দাঁড়িয়েছে ৫০ লক্ষ ৮৬ হাজার ৫১৮-তে। এর একটা বড় অংশ স্কুটার ও মোটরবাইক। লকডাউনের পরে পথে কমেছে গণ-পরিবহণ। শুধু ট্রাম তো নয়, শহরের রাজপথ থেকে কার্যত উধাও হয়েছে বাসও।
পড়ুয়াদের স্কুলে পাঠানো থেকে কর্মস্থলে পৌঁছতে ব্যক্তিগত গাড়ি বা বেশি পয়সা দিয়ে অ্যাপ-ক্যাব বা অ্যাপ-শার্টল সার্ভিসের ওপর নির্ভর করতে বাধ্য হচ্ছে মানুষ। যা শহরের দূষণ ও যানজট দুটোই বাড়াচ্ছে। সরকারি রিপোর্টই বলছে, ২০২২-য়ে শহরের পথে দিনে মাত্র ১০ থেকে ১২টি ট্রামের দেখা মিলত। তা হলে যানজট করল কে? ট্রাম না সাধারণ পরিবহণ।
আর দূষণ? পরিবেশবিদরা বলছেন, একটি পরিবেশ-বান্ধব ট্রাম যত যাত্রী বহন করে, তাদের জন্য বিকল্প পরিবহণের ব্যবস্থা করতে হলে দু’টি সাধারণ বাস অথবা তিনটি মিনিবাস অথবা ৩৫টি অটো অথবা ৪০টি প্রাইভেট গাড়ি দিতে হবে। এগুলি থেকে দূষণের মাত্রা সহজেই অনুমেয়। দূষণ নিয়ন্ত্রণে বিকল্প হিসেবে অনেকেই এখন বলছে ইলেকট্রিক বাস বা গাড়ির কথা।
প্রথমত, এই গাড়িগুলির আয়ু তুলনায় কম। বড়জোড় ১০ বছর। ব্যয়বহুলও। তার চেয়ে বড় কথা, তাতেও দূষণের হাতছানি রয়েছে। কারণ এই গাড়িগুলি চলে লিথিয়াম ব্যাটারিতে। এই গাড়ির আয়ু শেষ হলে, যথাযথ ভাবে তা নষ্ট করা না-হলে দূষণ ছড়াবে।
এ ছাড়াও একটা ইলেকট্রিক বাসের দামে অন্তত ৯ থেকে ১০টা পরিবেশ-বান্ধব ট্রাম তৈরি করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, একটা ইলেকট্রিক বাসের ব্যাটারির দামেই অন্তত ৩-৪টে ট্রাম তৈরি করা যায়। একটা ট্রাম অন্তত ৪০ থেকে ৫০ বছর চলতে পারে। রক্ষণাবেক্ষণের খরচও সামান্য। সেই পথে হাঁটতে চাইছে না সরকার।