• পুজোর দিনগুলো কাটে বাড়ির বাইরে, অগ্রহায়ণের লক্ষ্মীপুজোয় শারদ আনন্দ ঢাকিপাড়ায়
    প্রতিদিন | ০৬ অক্টোবর ২০২৪
  • অর্ক দে, বর্ধমান: শারদ আনন্দ অগ্রহায়ণে! কারণ শরতের দেবীবন্দনার দিনগুলোয় গ্রামের পুরুষরা ব্যস্ত থাকেন অন্যত্র। পুজোর বায়না পেয়ে পরিবারের সদস্য পাড়ি দেন দূরদূরান্তে। তাই পুজোর দিনগুলি তাঁদের পরিবারের কাছে ততটাও আনন্দের নয়, যতটা অন্য পাঁচটা পরিবারের কাছে আনন্দমুখর এই উৎসব। তবে এইসব পরিবারগুলোর উৎসব শুরু হয় পুজোর শেষে। পরিবারের সদস্য ফিরে এলে।

    বর্ধমান ১ ব্লকের আমড়া পঞ্চায়েতের দাসপাড়ার প্রায় শতাধিক ঢাকি পরিবারের বাস। সারা বছর নানাকাজের সঙ্গে যুক্ত থাকলেও পুজোর কয়টা দিন বাড়তি উপার্জনের আশায় পরিবারের সদস্যদের ছেড়ে দূরে চলে যেতে হয়। দুর্গাপুজো থেকে কালীপুজো পর্যন্ত বিভিন্ন মণ্ডপে ঢাক বাজানোর বায়না মেলে। বিভিন্ন শহরতলি একলার পুজো অনেক সময় ভিন রাজ্যেও পুজোর সময় ডাক পান এই ঢাকিরা। তাই বর্ধমানের আমড়া এলাকায় ঢাকি পাড়ায় পুজোয় সময় উচ্ছ্বাস কিছুটা কম। তাঁদের পরিবারের লোকজন বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় থাকেন, কখন ঘরের মানুষটা ফিরবেন।

    বর্ধমানের এই গ্রামের দাস পাড়ায় রয়েছে প্রায় ১০০ টি পরিবার। তাঁদের মধ্যে ৮০ জনের বেশি এবার দূরদূরান্তে বিভিন্ন মণ্ডপে ঢাক বাজানোর কাজে চলে গিয়েছেন। এঁদের মধ্যে কেউ ভিন রাজ্য অসম, কেরল থেকেও ডাক পান। তবে বেশিরভাগ ঢাকিই বর্ধমান ও কলকাতা শহরতলির পুজো মণ্ডপে চলে যান। সারা বছর কেউ হকারি বা স্থানীয় দোকানে কাজ করে পরিবার চালান। অনেকে চাষের কাজ করেন। পুজোর সময় বাড়তি রোজগারের আশায় বেরিয়ে পড়েন। পুজোর চারদিন বিভিন্ন মণ্ডপে বা বাড়ির পুজোর ডাক বাজানোর কাজ করে।

    অনেক সময় পরিবারের ছোটদেরও সঙ্গে করে নিয়ে যান অনেকে। এরফলে, পুজোর সময় বাড়তি রোজগারে সুযোগ মেলে। তাই ঢাকি পরিবারের দুর্গাপুজোর সময় পরিবারের সকলে মিলে আনন্দ উপভোগের সুযোগ হয়ে ওঠে না।

    বয়স প্রায় সত্তর ছুঁই ছুঁই মুক্তিপদ রুইদাস বলেন, “পুজোর চারদিন রোজগারের দিকে অনেকেই সারা বছর তাকিয়ে থাকে। বাপ-ঠাকুরদার আমল থেকে এই পেশা চলে আসছে। ঢাকি পরিবারের পুজো শুরু হয় পুজোর পরে। কারণ, যারা ঢাক বাজানোর ডাক পেয়ে দূরে চলে যান। তারা সব কাজ সেরে ১৩-১৪ দিন পর বাড়ি ফেরে।” অন্যান্য ঢাকি পরিবারের মধ্যে সনাতন রুইদাস, ভৈরব রুইদাস, বিজয় রুইদাসের জানান, ‘এই গ্রামের ঢাকি পরিবারগুলি বংশানুক্রমে এই কাজ করে আসছে। তাঁদের বাবা-কাকাদরাও পুজোর সময় বাড়ি থেকে দূরে চলে যেতেন। এখন তাঁরাও সেই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি আমাদের পরিবারের দুর্গোৎসব বলে কিছু নেই। তবে অগ্রহায়ণ মাসের লক্ষ্মীপুজোয় বর্ধমানের আমড়া দাসপাড়ায় ধুমধাম করে পুজোর আয়োজন হয়। সারা বছরের মধ্যে এই সময়েই পরিবারের সঙ্গে তাঁরা পুজোর আনন্দ উপভোগ করেন।’
  • Link to this news (প্রতিদিন)