সৌমেন রায়চৌধুরী| এই সময় অনলাইনগত বছরের পঞ্চমী, ভাড়া করা ম্যাটাডোরে বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে নিজেই প্রতিমা আনতে গিয়েছিলেন তিনি। এমডি-তে ভর্তির সুযোগ পেয়ে ২০২২ সাল থেকে বাড়ির গ্যারাজে একচালার প্রতিমা এনে দুর্গাপুজো করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। পরিবারের সকলেই সামিল হতেন তাতে। বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানাতে ভুলতেন না ‘তিলোত্তমা’। কিন্তু এ বার ঘর খালি, আলো বন্ধ। মেয়েটাই নেই। চোখের জল বাধ মানল না নির্যাতিতার মায়ের। বললেন, ‘আমার দুর্গার আগেই বিসর্জন হয়ে গিয়েছে। এ বার আর কিছু হলো না। এগুলি বলতেও আমার কষ্ট হচ্ছে।’ খানিক সামলে নিয়ে ধীরে ধীরে বললেন, ‘এখনও অনেকটা লড়াই বাকি আছে।’
গত দু’বছর ধরে বাড়ির গ্যারাজেই ছোট করে দুর্গাপুজোর আয়োজন করতেন আরজি করের নির্যাতিতা। পুজোর সময় তাঁর নিজের ডিউটি থাকত। বাবা, মা, কাকা, কাকিমা মিলে সবদিক সামলে নিতেন। তবে যেটুকু সময় পেতেন সেটুকু নিজেকে নিংড়ে দিতেন। পুজোর পরিকল্পনা থেকে আয়োজনে তাঁর অবদান ছিল ষোলোআনা। নাড়ু বানানো থেকে পুজোর খুঁটিনাটি সমস্ত বিষয়ে তিনি নিজেই তদারকি করতেন ।
কিন্তু সেই গোটা বাড়িকে গ্রাস করেছে বিষাদ। কাজের জায়গায় ‘উমা’-কে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। বিচারের জন্য শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাওয়ার অঙ্গীকার নির্যাতিতার বাবা-মায়ের। তাঁর মা বলেন, ‘মেয়েটা এ বছর পুজোয় ছুটি নেবে বলেছিল। ওর কথাতেই তো আমরা পুজোটা শুরু করেছিলাম। কে জানত এমন হবে!’
গত ২ বছর এই বাড়িতে ঢাক বাজাতে আসতেন রামপুরহাটের ঢাকি। এই বছরও মাস তিনেক আগে তিনি বায়না পেয়েছিলেন। আরজি করের নৃশংস ঘটনা নজরে এসেছে তাঁরও। কয়েক মাস আগে পাওয়া বায়নার টাকা ফেরত দিতে সম্প্রতি তিনি নির্যাতিতার বাড়িতে যান। বাড়িতে পা রেখেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
বাড়ির সামনেই 'পরিবার মঞ্চ ' তৈরি করে বিচারের দাবিতে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন পরিবারের লোকজন। পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, পুজোর ৪ দিন বাড়ির উঠোনেই থাকবেন তাঁরা। একটা মঞ্চ বাঁধা হয়েছে। ওই মঞ্চে পরিবারের লোকেরা থাকবেন। যাঁর ইচ্ছা করবে আসতে পারবেন। যে কেউ আসতে পারেন সেখানে।
পাশাপাশি জৌলুসহীন পুজো হচ্ছে নির্যাতিতার পাড়ায়। নেই বাহারি আলোকসজ্জা। একরাশ মনখারাপ নিয়ে নমো নমো করে পুজো সারছেন উদ্যোক্তারা। যাবতীয় শোক আর প্রতিবাদ নিংড়ে বেরিয়ে আসছে একটাই কথা, জাস্টিস!