জয়নগরের নিহত নাবালিকার দেহের ময়নাতদন্ত কল্যাণী এমস হাসপাতালে করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাই কোর্ট। রবিবার জরুরি শুনানিতে আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশ-প্রশাসনও। জয়নগরকাণ্ডে কেন পকসো আইনে মামলা হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। তাঁর প্রশ্ন, মেয়েটির বয়স ১০ বছরের কম হওয়া সত্ত্বেও কেন পকসো আইনে মামলা রুজু করেনি পুলিশ? সুরতহালের পরেও কেন পুলিশ পকসো ধারায় মামলা রুজু করল না? এর পরেই জয়নগরকাণ্ডে পুলিশকে পকসো আইনের ধারা যুক্ত করার নির্দেশ দেন বিচারপতি।
জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কোনও কেন্দ্রীয় হাসপাতালে মেয়ের দেহের ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়েছিলেন মৃতার বাবা। সেই দাবি মেনে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল পুলিশ। প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের নির্দেশ মেনে রবিবারই জরুরি ভিত্তিতে মামলার শুনানি হয় হাই কোর্টে। শুনানির সময় কমান্ড হাসপাতালের তরফে জানানো হয়, সেখানে সাধারণ মানুষের ময়নাতদন্ত করানো সম্ভব নয়। পাল্টা মৃতার পরিবার জানায়, অতীতেও কমান্ড হাসপাতালে বাইরের লোকের ময়নাতদন্ত হয়েছে। শেষমেশ সোমবার কল্যাণী এমসে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। তবে সেখানে যদি ময়নাতদন্তের সঠিক পরিকাঠামো না থাকে, তা হলে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করানো যেতে পারে বলে জানিয়েছেন বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘‘কল্যাণী এমসের চিকিৎসকেরাই ময়নাতদন্ত করবেন। ময়নাতদন্তের সময় জেএনএম হাসপাতালের এক জন কর্মীও উপস্থিত থাকতে পারবেন না। সোমবার বেলা ১১:৪৫ মিনিটে কল্যাণী এমসে দেহ যাবে। বারুইপুর কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেটকে সেখানে উপস্থিত থাকতে হবে। শুধুমাত্র বাবা-মা চাইলে ময়নাতদন্তের ভিডিয়ো দেখতে পারবেন। ময়নাতদন্ত কক্ষের বাইরে তাঁরা থাকতে পারবেন।’’
ন’বছরের শিশুকে ধর্ষণ-খুনের অভিযোগকে কেন্দ্র করে শনিবার দিনভর অগ্নিগর্ভ ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর। শুক্রবার রাতে বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে একটি জলাভূমি থেকে উদ্ধার হয় নাবালিকার দেহ। তার পর শনিবার সকাল থেকেই এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। পরিবার ও গ্রামবাসীদের দাবি, নাবালিকা নিখোঁজ হওয়ার পর পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু প্রথমে পুলিশের ভূমিকা সদর্থক ছিল না। পুলিশ যদি প্রথমেই তৎপর হত, তা হলে নাবালিকার এই পরিণতি হত না। পুলিশ অবশ্য সেই অভিযোগ মানেনি। এক যুবককে গ্রেফতারও করেছে তারা। সন্ধ্যায় কলকাতার মোমিনপুরের কাটাপুকুর মর্গে নাবালিকার দেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠিয়েছিল পুলিশ। সেখানে বিক্ষোভ দেখান সিপিএমের নেতা-কর্মীরা। অগ্নিমিত্রা পালের নেতৃত্বে বিজেপিও মর্গের সামনে বিক্ষোভ দেখায়। দেহ মর্গে নিয়ে যাওয়ার সময় তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টার অভিযোগে স্লোগান দেন দীপ্সিতা ধরেরা। পুলিশের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি হয় তাঁদের। ওই গোলমালের জেরে শেষমেশ মৃতার দেহের ময়নাতদন্ত হয়নি শনিবার।