• ‘আর কবে?’ আর জি কর আবহে অরিজিতের গানে পুজোয় চালচিত্র সাজালেন চিকিৎসক
    প্রতিদিন | ০৭ অক্টোবর ২০২৪
  • অর্ণব দাস, বারাসত: আর জি কর হাসপাতালে কর্মরত অবস্থায় তরুণী চিকিৎসকের নৃশংস পরিণতির প্রতিবাদে এখনও আন্দোলনে জুনিয়র ডাক্তাররা। ন্যায়বিচার না পাওয়া পর্যন্ত উৎসবেও ফিরতে চাইছেন না তাঁরা। এমন সরগরম পরিস্থিতিতে বাড়ির পুজোয় নিজের হাতে প্রতিমা তৈরি করে, চালচিত্র সাজিয়েছেন বারাসতের চিকিৎসক অনুপম ধর। আর তার মাধ্যমেই তিনি বিচারের দাবি তুলেছেন। পেশায় চিকিৎসক সহধর্মিনীও ব্যতিক্রমী এই প্রতিবাদের অংশ হতে সহযোগিতা করেছেন তাঁকে।

    বারাসতের নবপল্লী ভদ্রবাড়ির বাসিন্দা অনুপম ধরের পারিবারিক দুর্গাপূজার ইতিহাস একশো বছরের বেশি পুরনো। শুরুতে বাড়ির দুর্গাপুজো প্রতিমায় হলেও পরবর্তীতে পারিবারিক কিছু অসুবিধার কারণে ঘটপুজোর মাধ্যমেই দেবীপুজো শুরু হয়। এদিকে, ছোটবেলা থেকেই মাটি নিয়ে খেলতে বেশি পছন্দ করতেন অনুপম। মাটি দিয়ে তিনি অনায়াসে তৈরি করে ফেলতেন বিভিন্ন মডেল। সেই আগ্রহ থেকে স্কুল ছুটির পরে বাড়ি ফেরার পথে কোথাও প্রতিমা তৈরি হতে দেখলেই দাঁড়িয়ে পড়তেন কিশোর। দেখতেন, কীভাবে তৈরি হয় মাটির প্রতিমা। এভাবেই শিখে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন বাড়ির পুজোর জন্য ২ ফুটের কালীর প্রতিমা তৈরি করার পর থেকে বাড়ির যে কোনও পুজোয় ছোট প্রতিমা তৈরী শুরু করে অনুপম।

    পরবর্তীতে ডাক্তারি পাশ করে ২০১৬ সালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন অনুপম। সেই বছরই বাড়ির দুর্গা পুজোয় ঘটপুজোর পরিবর্তে পুনরায় নিজে হাতে প্রতিমা গড়ে পুজো শুরু করেন তিনি। সেই থেকেই চিকিৎসকের হাতে গড়া প্রতিমাতেই বাড়ির দুর্গাপুজো হয়। এবছর, নবম বর্ষেও সেই ধারা অব্যাহত। কিন্তু এবছরই আর জি করে সহকর্মীর মর্মান্তিক পরিণতিতে ন্যায় বিচারের দাবিও রয়েছে অনুপমের তৈরি প্রতিমায়। পানিহাটি স্টেট জেনারেল হাসপাতালে কর্মরত এই চিকিৎসক শত ব্যস্ততা মধ্যেও সময় বের করে তৈরি করছেন প্রতিমা। চালচিত্রকে সাজিয়ে তুলেছেন প্রতিবাদের ভাষায়। আর জি কর কাণ্ড নিয়ে এযাবৎ দেশের বিভিন্ন সংবাদপত্রের কাটিং দিয়ে তা সাজানো হয়েছে। আর একেবারে উপরের দিতে লেখা অরিজিৎ সিংয়ের গানের কথা ? ”আর কবে কণ্ঠ শক্তি পাবে/আর কবে চিত্ত স্বাধীন হবে/আর কবে শির উঠে দাঁড়াবে।” এছাড়াও চালচিত্রে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সীতাহরণ ও দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের ছবি।

    অনুপম ধরের কথায়, ”আর জি করে ঘটে যাওয়া অত্যন্ত বেদনাদায়ক ঘটনা। এখন প্রতিটি ঘরের প্রতিবাদ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তার দাবি উঠেছে। এনিয়ে চিকিৎসক-সহ সাধারণ মানুষ পথে নেমে সোচ্চার হয়েছেন। পুজোর মধ্যেও মানুষ যেন এই প্রতিবাদ ভুলে না যায়, সেই বার্তা দিতেই এই ভাবনা। সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, যেখানে ত্রেতা ও দ্বাপর যুগের দুটি বড় যুদ্ধ হয়েছে নারীর সম্মান রক্ষার্থে, সেখানে এখনও আমাদের নির্যাতিতার বিচারের দাবি জানাতে হচ্ছে।” তাঁর এই প্রতিবাদের সহযোগী স্ত্রী ডাঃ ইন্দ্রাণী ঘোষের বক্তব্য, ”চিকিৎসক হওয়ার পাশাপাশি আমিও একজন নারী। আর জি করে আমারই সহকর্মী দিদির সঙ্গে নারকীয় ঘটনাটি ঘটে গিয়েছে। পুজোর দিনে যাঁরা প্রতিমা দর্শনে আসবেন, তাঁদের মনেও যেন নির্যাতিতা সুবিচার না পাওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদের ভাবনা থাকে, সেই কারণেই এমনটা করা।” 
  • Link to this news (প্রতিদিন)