• বাইরে থাকুন কুল, ভিতরে বোল্ড! উর্দিধারীদের ‘টাফ’ বার্তা মমতার
    এই সময় | ০৭ অক্টোবর ২০২৪
  • এই সময়: আরজি করের ঘটনার পর থেকেই সামাজিক মাধ্যমে সাধারণ নাগরিকদের একাংশের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে পুলিশ। প্রতিবাদ-আন্দোলন থেকে স্লোগান উঠেছে, ‘পুলিশ তোমার কীসের ভয়, ধর্ষক তোমার কে হয়?’ এমনকী সামগ্রিক ভাবে পুলিশকর্মী ও অফিসারদের পরিবারের সদস্যদেরও সামাজিক মাধ্যমে নিশানা করা হয়েছে। এক নাবালিকাকে নিগ্রহ ও খুনের ঘটনার জেরে শনিবার জয়নগরেও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় পুলিশ ফাঁড়ি। সামাজিক মাধ্যম থেকে বাস্তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করতে গিয়ে যে ভাবে আক্রান্ত হচ্ছেন উর্দিধারীরা, সেখানে পুলিশের মনোবল অটুট রাখতে বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।রাজ্য সরকার সম্পূর্ণ ভাবে পুলিশের পাশে রয়েছে এই বার্তা দিয়ে অপরাধের মোকাবিলায় পুলিশকে ‘রাফ অ্যান্ড টাফ’ হওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সমালোচকদের বিরুদ্ধে ‘ফোঁস’ করার অধিকার যে পুলিশেরও রয়েছে, পরোক্ষে তিনি সেই বার্তাও দিয়েছেন। একই সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেক কনটেন্ট চিহ্নিত করার দায়িত্ব পুলিশকর্মীদের বাড়ির মহিলাদের দিয়েছেন মমতা। যাঁরা সফল ভাবে সেই কাজ করবেন, তাঁদের পুরস্কার ও চাকরির প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

    রবিবার বিকেলে আলিপুর বডিগার্ড লাইন্সে দুর্গাপুজোর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মনে রাখবেন, আরও স্ট্রং হতে হবে, মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে। উপরে থাকবেন কুল, ভিতরে থাকবেন বোল্ড। বি রাফ অ্যান্ড টাফ, অ্যান্ড সাম টাইমস সফট। যারা শয়তান, তা আমি হই বা অন্য কেউ, ক্ষমা করবেন না। টেক স্ট্রং অ্যাকশন। সরকার পুরোপুরি পুলিশ বাহিনীর পিছনে রয়েছে।’

    আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ঘটনাকে হাতিয়ার করে বিরোধী শিবিরের যারা চক্রান্ত-অপপ্রচার করছে, তাদের বিরুদ্ধে দলের নেতা-কর্মীদের ‘ফোঁস’ করার বার্তা কিছু দিন আগে মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর সভা থেকে দিয়েছিলেন মমতা। এ দিন বডিগার্ড লাইন্সের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ফের বলেন, ‘আমি রামকৃষ্ণের (রামকৃষ্ণ পরমহংস) কথা বলছি। ঠাকুর বলেছিলেন, আমি তোমাকে কামড়াতে বারণ করেছি, ফোঁস করতে বারণ করিনি। অধিকার সবার আছে। আপনারও আছে, আমারও আছে। সবার আছে। মনে রাখবেন, পুলিশ-ফুলিশ নয়। আপনারা যে যা ইচ্ছে বলতে পারেন, কিন্তু আপনার বাড়ির সামনে ক্রাইম হলে পুলিশকে আগে ডাকতে হয়।’

    বিরোধীপক্ষের সঙ্গে নাগরিক সমাজের একটি অংশ যে ভাবে পুলিশের তুমুল সমালোচনা করছে, তার মোকাবিলা করার অধিকার যে উর্দিধারীদেরও রয়েছে— মমতা সেই বার্তাই দিতে চেয়েছেন বলে তৃণমূল নেতৃত্ব মনে করছেন। এই অপপ্রচারের মোকাবিলায় পুলিশকর্মীদের বাড়ির মহিলারা বাড়তি দায়িত্ব পালন করতে পারেন বলেও পর্যবেক্ষণ মুখ্যমন্ত্রীর। সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেক নিউজ় চিহ্নিত করে তা নিয়ে সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ দায়ের করার কাজ মহিলারা করতে পারবেন বলেও মনে করেন তিনি।

    মহিলাদের জোট বেঁধে এই কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা। তাঁর কথায়, ‘আমি মেয়েদের দায়িত্ব দিয়ে যাচ্ছি, সরাসরি লিখবেন ফেক। নিজে থেকে ফেসবুক-ট্যুইটার (অধুনা এক্স) করবেন। ফেক লিখে তারপর পুলিশের সাইবার ক্রাইমে পাঠিয়ে দিন। বাংলা ও কলকাতা পুলিশকে স্পষ্ট বলছি, যে মেয়েরা এই অপরাধীদের ধরে দিতে পারবে, তাদের জন্য একশোটা পুরস্কার থাকবে। তারা চাকরিও পাবে দরকার হলে।’

    এ দিন পুলিশ ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনেরও প্রশংসা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশের এই অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে বিরোধী শিবির বিভিন্ন সময়ে সমালোচনা করেছে। যদিও পুলিশ ওয়েলফেয়ারের কর্তাদের উদ্দেশে মমতার পরামর্শ, ‘তোমাদের বিরুদ্ধে কে কী বলল, ডোন্ট কেয়ার। রাজা চলে বাজার তো, কুত্তা ভোঁকে হাজার। এটা মাথায় রাখতে হবে। যে কাজ করবে সে গালি খাবে, এটা কলি কালের নিয়ম।’
  • Link to this news (এই সময়)