নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: পুলিসের সমালোচনা করে যারা নিজেদের ‘বড় ত্রাতা’ ও ‘ভগবান’ মনে করছে, তাদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কর্মক্ষেত্রে পুলিসকে আরও উৎসাহিত করে, অপরাধীদের ধরতে রাজনৈতিক রং না-দেখার নির্দেশ দিলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। সেইসঙ্গে বছরভর নিজেদের উৎসব, আনন্দ, পরিবার ছেড়ে সাধারণ মানুষের জন্য পুলিস কর্মীরা যেভাবে নিজেদের নিয়োজিত করেন, তাঁদের কুর্নিশ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী।
রবিবার দক্ষিণ কলকাতার সুরুচি সংঘ, আলিপুর বডি গার্ড লাইন, ৬৪ পল্লির দুর্গাপুজোর উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও ভার্চুয়াল মাধ্যমে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার প্রায় ৪০০টি পুজোর উদ্বোধন করেছেন তিনি। সর্বশেষ নবনীড় বৃদ্ধাশ্রমে গিয়ে আবাসিকদের পুজোয় অংশ নেন এবং আলাপচারিতা করেন মমতা। দিনভর কর্মসূচির মধ্যে আলিপুর বডি গার্ড লাইনের পুজোয় গিয়ে মমতার কথায় উঠে আসে পুলিসের সারা বছর মানুষের পাশে থাকার প্রসঙ্গ। ঘটনাচক্রে নাম না করে মমতা টেনে আনেন আর জি কর প্রসঙ্গ। ওই ঘটনার পর থেকে পুলিসের সমালোচনায় মুখর কেউ কেউ। কিন্তু দিন-রাত, রোদ-ঝড়-বন্যা-উৎসবে পুলিস যেভাবে কাজ করছে, তা কেউ কেন দেখছে না, সেই প্রশ্নটা তুলে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিসকে মোরাল বুস্ট আপ করেছেন তিনি। বলেছেন, কাজ করতে গিয়ে কোথাও ভুল-ত্রুটি হয়ে গেলে সেটাকে বড় করে দেখানো হচ্ছে। যে কাজ করবে, সে গালি খাবে, এটাই কলিকালের নিয়ম। যে কাজ করবে না, কে তাকে গালি দেবে? যারা গালিগালাজ করছে, তারা নাকি আবার সমাজের বড় বড় ত্রাতা। কেউ কেউ নিজেকে ভাবছে ভগবানের থেকেও বড়। অপরাধীরাই ভগবান সাজছে! তোপ মমতার। তিনি বলেন, জগতের সমস্ত অপরাধ করার পর কেউ কেউ আবার ‘স্টার’ হয়ে গিয়েছেন।
পুলিসের বিরুদ্ধে যারা ক্ষোভ দেখাচ্ছেন, তাঁদেরকেও চড়া সুরে আক্রমণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেছেন, সবাইকে সরিয়ে দিতে হবে? এটা হয় নাকি! অন্যায়টা জানল না, আর অপরাধ হয়ে গেল! বিনা অপরাধে অপরাধী হয়ে গেল! তাহলে যে অপরাধ করেছে, তার শাস্তি কবে হবে, সেই দিনের জন্য অপেক্ষা করব।
উল্লেখ, আর জি কর ঘটনার পর তৎকালীন কলকাতার পুলিস কমিশনার বিনীত গোয়েলকে বদলের দাবি জানান জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের দাবি মেনেই কলকাতার পুলিস কমিশনারকে বদল করে রাজ্য সরকার। কিন্তু তারপরও পুলিসকে ক্রমাগত আক্রমণ করে যাওয়াকে কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। এদিন তিনি বলেছেন, হাজারটা কাজের মধ্যে একচু ভুল-ত্রুটি অজ্ঞাতে বা অজানাভাবে হয়ে গেলে, সেটাকে নিয়ে অনেকে কুৎসা, অপপ্রচার, চক্রান্ত করছে। অথচ ওরা জানে না—কেন্দ্রীয় বাহিনী বা আর্মির যে সম্মান রয়েছে, কলকাতা ও রাজ্য পুলিসের সম্মান তার চেয়ে একটুও কম নয়। বরং এরাজ্যের পুলিসেরই সম্মান বেশি।
অন্যদিকে, উৎসবের মরশুমে প্রতিদিনই দেখা যাচ্ছে অবস্থান, ধর্না, বিক্ষোভ চলছেই। আবার ‘রাত দখলের’ নামে কর্মসূচিও হচ্ছে প্রায়ই। এখানেই মমতার বক্তব্য, যাঁরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছেন, তাঁদের বলি, আরও বেশি করে করুন। তাতে আমাদের শক্তিবৃদ্ধি হবে। সিপিএম আমলে রাজনৈতিক ওয়েলফেয়ার কমিটি ছিল, আমরা সেটা করিনি। কখনওসখনও দু’-একটা ঘটনা ঘটে গেলে বাংলায় চিৎচার, চেঁচামেচি, হাহাকার বেশি হয়। এটা করা উচিত, তাদের অধিকারও আছে। কিন্তু অন্য রাজ্যে যখন একই ঘটনা ঘটে, তখন মুখে লিউকোপ্লাস্ট দিয়ে থাকে কেন? তখন একটাও প্রতিবাদ করে না এরা!