• শ্লীলতাহানি পার্ক স্ট্রিট থানার রেস্টরুমে! অভিযুক্ত এসআই
    বর্তমান | ০৭ অক্টোবর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: স্বাস্থ্যক্ষেত্রের পর এবার খোদ পুলিস মহলের অন্দরেই মহিলার সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠল। থানার ভিতরে রেস্টরুমে মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ারকে শ্লীলতাহানি করার অভিযোগে তোলপাড় কলকাতা পুলিস। অভিযোগ, ৫ অক্টোবর পার্ক স্ট্রিট থানার সিভিককে পুজোর উপহার দেওয়ার পর শ্লীলতাহানি করেন থানারই এক সাব ইনসপেক্টর (এসআই)। লালবাজার সূত্রে খবর, তাঁর নাম অভিষেক রায়। ২০০৯ ব্যাচের তদন্তকারী অফিসার তিনি। রবিবার তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে পার্ক স্ট্রিট থানার পুলিস। পাশাপাশি, ওই এসআইকে ক্লোজ করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করেছে লালবাজার। সূত্রের খবর, পুলিস কমিশনার মনোজ ভার্মা ওই সাব ইনসপেক্টরকে গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দিয়েছেন। 


    নির্যাতিতার দাবি, প্রাথমিকভাবে থানায় কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার অভিযোগ নিতে অস্বীকার করেন। অফিসারের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি মিটমাট করে নেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি। এরপরেই মেডিক্যাল পরীক্ষা করিয়ে নবান্নের স্বরাষ্ট্রদপ্তর ও লালবাজারে পুলিস কমিশনারকে চিঠি দিয়ে ঘটনাটি জানান মহিলা সিভিক ভলান্টিয়ার। তার ভিত্তিতেই মামলা রুজু করে ওই সাব ইনসপেক্টরকে লালবাজারে তলব করা হয়। 


    ৪ অক্টোবর পার্ক স্ট্রিট থানায় পোস্টিং হয় তরুণী সিভিকের। আগে আলিপুর থানা এলাকায় কর্মরত ছিলেন তিনি। পার্ক স্ট্রিট থানার চারতলায় অফিসারদের জন্য বিশ্রাম নেওয়ার একটি ঘর রয়েছে। ৫ অক্টোবর রাতে সেখানেই ছিলেন অভিযুক্ত অফিসার। অভিযোগকারিণীর দাবি, রাত ১টা নাগাদ থানার এক হোমগার্ডকে দিয়ে ডেকে পাঠানো হয় তাঁকে। পুজোর উপহার বাবদ তাঁকে একটি শালোয়ার স্যুট দেন অভিষেক। অভিযোগ, এরপরেই সিভিক ভলান্টিয়ারের গায়ে হাত দিয়ে অশালীন আচরণ করেন সাব ইনসপেক্টর। সিভিকের দাবি, মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন অফিসার। 


    অভিযোগপত্র থেকে জানা গিয়েছে, সোজা সেরেস্তায় চলে আসেন নির্যাতিতা। সেখানেই ডিউটি অফিসারের চেয়ারে ছিলেন সার্জেন্ট রণবীর দাস। তবে বিষয়টি শুনেও কার্যত উড়িয়ে দেন তিনি। পুলিস ফোর্সে কর্মরত হয়েও কোনও সাহায্য পাননি তরুণী। তৎক্ষণাৎ বাড়িতে ছোট ভাইকে ফোন করেন তিনি। মিনিট পনেরোর মধ্যে থানায় পৌঁছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার চেষ্টা করেন নির্যাতিতার ছোট ভাই। তরুণী জানিয়েছেন, অভিযোগপত্র নিতে অস্বীকার করেন ডিউটি অফিসার। আদালতের নির্দেশ বলছে, মহিলা সুরক্ষা সংক্রান্ত অপরাধের ক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে পুলিস তৎক্ষণাৎ সরকারিভাবে তা গ্রহণ করতে বাধ্য। ধর্ষণ ও শ্লীলতাহানির মতো অপরাধের ক্ষেত্রে দ্রুত এফআইআর করার নির্দেশও রয়েছে উচ্চ আদালতের। সেক্ষেত্রে অনডিউটি পুলিস অফিসার কীভাবে আদালতের সেই নির্দেশ অমান্য করলেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পুলিস মহলেই। 


    নির্যাতিতা জানিয়েছেন, এটাই প্রথম ঘটনা নয়। ওই সাব ইনসপেক্টর গত ২৫ সেপ্টেম্বরও থানার কম্পিউটার রুমে মদ্যপ অবস্থায় আমার সঙ্গে অশ্লীল আচরণ করেন। কিন্তু, এখানেই আবার অভিযোগপত্র নিয়ে সন্দেহ দানা বেঁধেছে। তরুণী নিজেই লিখেছেন, ৪ অক্টোবর থেকে পার্ক স্ট্রিট থানায় পোস্টিং হন। সেক্ষেত্রে ২৫ সেপ্টেম্বর থানায় কী করছিলেন ওই সিভিক? বিভাগীয় তদন্তে উত্তর খুঁজছে লালবাজার। সূত্রের খবর, লালবাজারের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। ঘটনার দিন থানার সেরেস্তার দায়িত্বে থাকা ডিউটি অফিসার ও অভিযুক্ত এসআইয়ের নির্দেশ বহনকারী হোমগার্ডকেও তলব করা হতে পারে।
  • Link to this news (বর্তমান)