এই সময়: আমরণ অনশনের পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও ১০ দফা দাবি পূরণের কোনও আশ্বাস রবিবার রাত পর্যন্ত সরকারের তরফে মেলেনি বলে জানাচ্ছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা।অনশন মঞ্চকে ঘিরে থাকা পুলিশের কাছ থেকেও কোনও সহযোগিতা মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ, অনশনকারীদের জন্য বায়ো-টয়লেট বসানোর অনুমতি পর্যন্ত দেয়নি পুলিশ। উল্টে মেট্রো চ্যানেলে অনশন মঞ্চের ভৌগলিক অবস্থানকে বেআইনি ঠাউরে হেয়ার স্ট্রিট থানায় এফআইআর করেছে কলকাতা পুলিশ। যদিও সেই এফআইআর-কে চ্যালেঞ্জ করে ছ’টি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চের পক্ষ থেকে আজ, সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের হতে পারে বলে জানা গিয়েছে। রবিবার রাত পর্যন্ত অনশনকারীদের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে বলেই জানিয়েছে জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট।
শুক্রবার কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে ধর্মতলায় একটি বড় ঘড়ি নিয়ে অবস্থান শুরু করেছিলেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। দাবি পূরণের জন্য সরকারকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়। ওই ঘড়ির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তার দেবাশিস হালদার বলেছিলেন, ‘প্রতিটি ঘণ্টা, প্রতিটি মিনিটের হিসেব রাখা হবে।’ তবে ২৪ ঘণ্টা কেটে যাওয়ার পরেও দাবি পূরণের ব্যাপারে সরকার কোনও সাড়া না-দেওয়ায় শনিবার রাত সাড়ে আটটা থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন ছ’জন চিকিৎসক। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায়, তনয়া পাঁজা ও স্নিগ্ধা হাজরা এবং এসএসকেএমের অর্ণব মুখোপাধ্যায়, এনআরএসের পুলস্ত্য আচার্য ও কেপিসি-র সায়ন্তনী ঘোষ হাজরার সঙ্গে এ দিন রাতে আমরণ অনশনে যোগ দেন আরজি করের অনিকেত মাহাতো ও আসফাকুল্লা নাইয়াও।
এ দিন থেকেই আবার প্রতীকী অনশন শুরু করেছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তাররাও। আজ, সোমবার থেকে তাঁদের মধ্যে থেকে একজন ধর্মতলার ধাঁচেই একই দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করতে পারেন। বাকিরা লাগাতার রিলে অনশন চালাবেন। চিকিৎসকদের যৌথ মঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে, তাঁদেরও ছ’জন প্রতিনিধি জুনিয়রদের সংহতি জানাতে ধর্মতলাতেই রিলে অনশন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সব ঠিক থাকলে আজ, সোমবার অথবা কাল, মঙ্গলবার থেকে রোজ ছ’জন করে সিনিয়র ডাক্তার ধর্মতলার মঞ্চে অনশন করবেন। যৌথ মঞ্চের তরফে শ্যামবাজারে ‘অভয়া মঞ্চ’ তৈরির যে অনুমতি চাওয়া হয়েছিল, সেটিও পুলিশ খারিজ করে দেওয়ায় সেই পুলিশি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেও আজ মামলা করতে পারেন তাঁরা। এ দিন জুনিয়র ডাক্তারদের পাশাপাশি সিনিয়র ডাক্তাররাও যান অনশন মঞ্চে।
মোটের উপর পুলিশি অসহযোগিতাকে সঙ্গে নিয়েই চলছে অনশন। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমালোচনা হচ্ছে বায়ো-টয়লেট নিয়ে। শুক্রবার রাত থেকেই এ নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আসছিল পুলিশ। ‘গ্রিন জ়োন’-এর দোহাই দিয়ে মেট্রো চ্যানেলে বায়ো-টয়লেট বসানোর অনুমতি দেয়নি লালবাজার। ফলে অনশনকারীদের কার্জন পার্কের সুলভ শৌচালয় ব্যবহার করতে হচ্ছে। বস্তুত, পুলিশও আন্দোলনকারীদের সেই পরামর্শই দিয়েছে। যদিও ওই সুলভ শৌচালয় সকাল ৬টা থেকে রাত ৮.৩০ পর্যন্ত খোলা থাকে। তাই অনশনকারীদের প্রবল সমস্যা হচ্ছে বলে জানান জুনিয়র ডাক্তাররা। এ নিয়ে শনিবার রাতেই লালবাজারকে ই-মেল করে জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট। পুলিশ বা পুরসভার নয়, নিজেদের উদ্যোগেই বায়ো-টয়লেট বসানোর ক্ষেত্রে পুলিশের অনুমতিটুকু চাওয়া হয়েছিল শুধু। কিন্তু সেই ই-মেলের কোনও জবাব লালবাজার দেয়নি বলে জানাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।
কার্জন পার্কের ওই সুলভ শৌচালয়ের কর্মীরা জানাচ্ছেন, অনশনকারীদের কথা ভেবে তাঁরা শৌচালয় রবিবার থেকে ২৪ ঘণ্টাই খোলা রাখা সম্ভব কি না, তা ভেবে দেখছেন। ঠিক যেমন স্বাস্থ্য ভবনের সামনে কিংবা লালবাজারে অবস্থান চলাকালীন আন্দোলনকারীদের নিজেদের শৌচালয় ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন অনেক বাসিন্দা, হোটেল-রেস্তোরাঁ-অফিস কর্তৃপক্ষ, ঠিক সে ভাবেই সুলভ শৌচালয় কর্তৃপক্ষও এগিয়ে আসতে চান বলে জানা গিয়েছে। কিন্তু তাঁরা ভয় পাচ্ছেন, এতে প্রশাসনের বিরাগভাজন না-হতে হয়! কারণ, ইতিমধ্যেই অনশন মঞ্চ এবং তার উপর ত্রিপল বাঁধা নিয়ে ডেকরেটরের কর্মীদের পুলিশের তরফে ভয় দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে চিকিৎসকরা নিজেরাই যতটা পেরেছেন, সেই কাজ করেছেন। রবিবার সন্ধ্যায় তাঁরা বায়ো-টয়লেট আনাতে গেলে সেই গাড়িটিও পুলিশ আটকে দেয় বলে অভিযোগ।
এ দিকে জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনকে কটাক্ষ করতে দেখা গিয়েছে তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ এবং বর্তমান সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কুণাল সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, ‘যাঁরা চিকিৎসকদের এই অনশনে প্ররোচনা দিয়েছেন, প্রশাসনের তাঁদের উপর নজর রাখা উচিত। অনশনের ফলে কোনও আন্দোলনকারীর স্বাস্থ্যের অবনতি হলে সরকার নয়, ওই প্ররোচকরাই দায়ী থাকবেন।’ কল্যাণের প্রশ্ন, ‘কর্মবিরতি পালন করেও জুনিয়র ডাক্তাররা কী ভাবে মাসিক স্টাইপেন্ড তুললেন?’ যদিও আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা শাসক দলের এই দুই নেতার মন্তব্যে গুরুত্ব দিতে চাননি।