আজ কল্যাণীতে ময়নাতদন্ত, নির্দেশ হাইকোর্টের, পকসো নয় কেন, ভর্ৎসনা পুলিসকে
বর্তমান | ০৭ অক্টোবর ২০২৪
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা ও সংবাদদাতা, বারুইপুর: জয়নগরের নিহত স্কুলছাত্রীর বয়স ১০ বছর। পরিবারের দাবি, যৌন নির্যাতনের ইঙ্গিত রয়েছে তার দেহে। তাহলে কেন পকসো আইনের ধারায় মামলা দায়ের হল না? এই প্রশ্ন তুলে পুলিসকে ভর্ৎসনা করলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ। ময়নাতদন্ত নিয়ে জটিলতা তৈরি হওয়ায় রবিবার জরুরি ভিত্তিতে কলকাতা হাইকোর্টে শুনানি হয়। বিচারপতি নির্দেশ দেন, মামলায় পকসো আইনের ধারা যুক্ত করতে হবে থানাকে। এ সংক্রান্ত সমস্ত নথি এবং অভিযুক্তকে পেশ করতে হবে বিশেষ পকসো আদালতে। শুধু তাই নয়, ময়নাতদন্ত নিয়েও তাত্পর্যপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। বলা হয়েছে, কল্যাণী এইমসের বিশেষজ্ঞদের তত্ত্বাবধানে কল্যাণী জেএনএম হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করতে হবে। সেই সময় উপস্থিত থাকবেন বারুইপুরের অতিরিক্ত মুখ্য দায়রা বিচারক।
জয়নগরের মহিষমারি গ্রামে নাবালিকাকে যৌন নির্যাতন ও খুনের অভিযোগে শনিবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। মৃতার পরিবার নিরপেক্ষতার স্বার্থে কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালে ময়নাতদন্তের আবেদন জানিয়ে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়। প্রধান বিচারপতি দ্রুত শুনানির আবেদন মঞ্জুর করেন। শুনানিতে রাজ্যের তরফে বলা হয়, কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা নেই তাদের। সেই প্রেক্ষিতে একাধিক কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালের নাম উঠে আসে। বিভিন্ন কারণে নাকচ হয়ে যায় কমান্ড হাসপাতাল, কল্যাণী এইমস, জোকা ইএসআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় হাসপাতালগুলি। তখন বিচারপতি পরিবারের দাবিকে মান্যতা দিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারি হাসপাতালের বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ময়নাতদন্তের নির্দেশ দেন। সময়ও বেঁধে দিয়ে হাইকোর্ট জানায়, সকাল ১১টা ৪৫ মিনিটের মধ্যে কলকাতার কাঁটাপুকুর মর্গ থেকে দেহ নিয়ে যেতে হবে কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে। মা-বাবা চাইলে বাইরে থেকে ময়নাতদন্তের ভিডিও দেখতে পারবেন। এরপরই বিচারপতি প্রশ্ন তোলেন, ‘নির্যাতিতার বয়স ১০ বছর। সুরতহাল বা ইনকোয়েস্ট রিপোর্টে পুলিস কেন পকসো যুক্ত করেনি?’ এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি রাজ্য। তখন বিচারপতি সমস্ত নথি বিশেষ পকসো আদালতে স্থানান্তরিত করার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশের প্রেক্ষিতে মৃতার পিসি বলেন, ‘সঠিকভাবে ময়নাতদন্ত হলে আমরা সন্তুষ্ট।’ জেএনএম হাসপাতালের সুপার অতনু বিশ্বাস বলেন, ‘নির্দেশ মৌখিকভাবে শুনেছি। হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে আমাদের কোনও চিকিত্সক ময়নাতদন্তে থাকবেন না।’ মৃতার পিসি এদিন সিবিআই তদন্ত দাবি করে বলেন, ‘আমার ভাইঝির শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকার দাগ ছিল।’ মহিষমারির বাসিন্দারা এদিনও দোষীর সর্বোচ্চ সাজার দাবিতে সোচ্চার হন। এদিনই আলিপুর বডিগার্ড লাইনসে পুজো উদ্বোধনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, ‘আমি চাই, কুলতলির ঘটনায় অভিযুক্তদের তিন মাসের মধ্যে ফাঁসি হোক।’
এদিকে, তদন্তে পুলিস জানতে পেরেছে, এই ঘটনায় ধৃত মোস্তাকিন সর্দার গত কিছুদিন ধরেই নাবালিকাকে অনুসরণ করছিল। ঘটনার দিনের সিসিটিভি ফুটেজেও তাকে ওই নাবালিকার পিছু নিতে দেখা গিয়েছে। নানা অছিলায় সে নাবালিকার সঙ্গে ভাব জমানোর চেষ্টা করছিল। বারুইপুরের পুলিস সুপার পলাশচন্দ্র ঢালি বলেন, ‘সব অপপ্রচার চলছে। যারা এই কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মৃতার পরিবারকে সবরকম সাহায্য করা হচ্ছে। আমরা কোনও তথ্য লুকোচ্ছি না।’