• পুলিশে অনাস্থার দাবি বিরোধীর, চলছে আন্দোলনও
    আনন্দবাজার | ০৭ অক্টোবর ২০২৪
  • আর জি কর-কাণ্ডেই শেষ নয়, তার পরেও রাজ্যের নানা প্রান্তে পর পর নারী নির্যাতনের অভিযোগ সামনে আসছে। এই অবস্থায় পুলিশের উপরে ভরসা রাখার আর কোনও জায়গা নেই বলে সমস্বরে দাবি করল বিরোধীরা। দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বালিকাকে ‘খুন ও ধর্ষণের’ পরে রবিবার এলাকায় গিয়ে আলাদা করে বিক্ষোভ দেখাল তারা। শাসক দল তৃণমূল অবশ্য এ দিন ফের বিরোধীদের বিরুদ্ধে পুজোর মধ্যে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ তুলেছে।

    দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পালের নেতৃত্বে এলাকার একটি থানা অভিযান করেছে বিজেপি। নেতা-কর্মীরা গার্ডরেল টপকে থানায় ঢুকতে গেলে পুলিশ লাঠি চালায় ও মহিলা কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে বলে অভিযোগ করেছে বিজেপি। অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশের পাল্টা দাবি, তাদের কয়েক জন বিজেপি কর্মীদের ছোড়া ইটে জখম হয়েছেন। বালিকা খুনের প্রতিবাদে বিজেপির উত্তর কলকাতা সাংগঠনিক জেলার ডাকে দলের মহিলা কর্মীরা এ দিন গিরিশ পার্ক মেট্রো স্টেশনের সামনে থেকে মিছিল করে সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ অবরোধ করেন। পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও বাধে তাঁদের। পুলিশ ৭ জন মহিলা কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।

    বালিকার দেহ উদ্ধারের পরে যে পুলিশ ফাঁড়ির বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছিল, এ দিন সেই প্রসঙ্গে সুকান্ত বলেছেন, “সন্ধ্যার পরে গুন্ডাদের মোচ্ছবের জায়গা এই ফাঁড়ি। মেয়েরা নির্ভয়ে বাইরে বেরোতে পারেন না। ফাঁড়ির প্রতিটা পুলিশের শাস্তি হওয়া উচিত।” ‘তৃণমূলের ধর্ষণকারীরা কাউকে ছাড়ছে না’ বলে অভিযোগ তুলে মা-বোনেদের ‘সাবধানে থাকা’র পরামর্শ দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই সঙ্গে পুলিশকে তাঁরও তোপ, “ধর্ষণ, পকসোর ধারা দেয়নি বলে অবসরকালীন আদালত পুলিশের নিন্দা করেছে। প্রমাণ হল, ভোটব্যাঙ্ক বাঁচাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর পুলিশ এই কাজ করছে। মানুষ এই জন্য বলছেন, পুলিশে আস্থা নেই।”

    বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু থেকে সিপিএমের যুবনেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়েরা রাজ্যে নারী-নিরাপত্তার এমন পরিস্থিতিতেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উৎসব-সূচনা করা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। শুভেন্দুর মন্তব্য, “উনি ঢাক বাজাচ্ছেন।” কার্যত একই সুরে মীনাক্ষীরও বক্তব্য, “মুখ্যমন্ত্রী প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ফিতে কাটবেন, অন্য দিকে মর্গে বাংলার মেয়েদের দেহ কাটা হবে ময়না তদন্তের জন্য। দু’টো এক সঙ্গে চলতে পারে না।” মীনাক্ষী, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়-সহ সিপিএম নেতা-কর্মীরা এ দিন এলাকার একটি অন্য থানায় বিক্ষোভও দেখিয়েছেন। রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকাকে কাঠগড়ায় তুলে দলের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম এ দিন দুর্গাপুরে বলেছেন, “পুলিশ নিজের দায়িত্ব পালন না করে তৃণমূলের ইশারায় চলছে। তাই মানুষ আর পুলিশকে বিশ্বাস করছে না।” তাঁর আরও দাবি, নির্যাতিতার দেহ পরিবারের হাতে না-দিয়ে তৃণমূল নেতাদের হাতে দেওয়া হয়েছিল।

    এলাকায় এ দিন প্রতিবাদ মিছিল করেছেন ভাঙড়ের আইএসএফ বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীও। ওই বালিকা, পূর্ব মেদিনীপুরে এক মহিলাকে ধর্ষণ-খুন এবং হলদিবাড়ি কলেজে অশান্তির ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্য জুড়ে প্রতিবাদ দিবস পালন করেছে ডিএসও। সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় ছাত্র সমাজকে তীব্র প্রতিবাদ-আন্দোলন গড়ে তোলার ডাক দিয়েছেন। নিহত বালিকার বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন সুকান্ত, অগ্নিমিত্রা, মীনাক্ষী, কান্তি, নওসাদ-সহ বিরোধী নেতা-নেত্রীরা। গিয়েছিলেন ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভানেত্রী প্রিয়াঙ্কা চৌধুরী, আরওয়াইএফ এবং যুব লিগের রাজ্য সম্পাদক যথাক্রমে আদিত্য জোতদার ও সমন্বয় বিশ্বাসের নেতৃত্বে আরএসপি, ফরওয়ার্ড ব্লক, সিপিআই-এর ছাত্র, যুব ও মহিলা সংগঠন। প্রত্যেকেই পরিবারটির পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন।

    যদিও বিরোধীদের দাবি ও আন্দোলন প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কুণাল ঘোষ পাল্টা বলেছেন, “অভিযুক্ত গ্রেফতার হয়েছে, দোষও স্বীকার করেছে। যেটা খারাপ ঘটনা, সেটা খারাপই। পুলিশ পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে। এর পরে বিরোধীরা কী চায়? বানতলা-ধানতলা, উন্নাও-হাথরসের ধারক-বাহকেরা পুজোর সময়ে অরাজকতা তৈরির চেষ্টা করছে!”

    বালিকা খুন-ধর্ষণের ঘটনার পরে মোমিনপুরের কাঁটাপুকুর মর্গের সামনে শনিবার যে বিক্ষোভ হয়েছিল, তাতে বারুইপুর থানার আইসি-র অভিযোগের ভিত্তিতে একটি ও স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে একটি মামলা দায়ের করেছে দক্ষিণ বন্দর থানা। স্বতঃপ্রণোদিত মামলায় মীনাক্ষী, দীপ্সিতা ধর, বিজেপি নেত্রী অগ্নিমিত্রা, প্রিয়াঙ্কা টিব্রেওয়ালের নাম আছে। পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
  • Link to this news (আনন্দবাজার)