বৃষ্টি উপেক্ষা করে সকাল থেকেই ছাতা মাথায় ভিড় জমতে শুরু করেছিল মণ্ডপে মণ্ডপে। দুপুরের সেই ভিড়ই সন্ধ্যায় কার্যত জনজোয়ারের চেহারা নিল। একাধিক পুজোমণ্ডপে দর্শনার্থীদের সমাগম দেখে বোঝার উপায় ছিল না যে রবিবার আদতে তৃতীয়া, নাকি মহাষষ্ঠী! কেউ পুজোর লম্বা ছুটি পড়ার আগেই বন্ধুদের সঙ্গে প্রতিমা-দর্শনে বেরোলেন, কেউ আবার শহরতলি থেকে শেষ মুহূর্তের কেনাকাটা সারতে এসে ঢুঁ মারলেন আশপাশের মণ্ডপ চত্বরে।
মহালয়ার পর থেকে গত কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিও দমিয়ে রাখতে পারেনি উৎসাহীদের। রাতের দিকে ভিড় জমছিল শহরের একাধিক পুজোমণ্ডপে। ছুটির দিনে সেই ভিড় শুরু হল বেলা বাড়তেই। দুপুরে ঝমঝমিয়ে ঘণ্টাখানেকের বৃষ্টিতে সেই ভিড়ে কিছুটা ভাটা পড়ে। তবে পরের দিকে মণ্ডপে মণ্ডপে মানুষের ঢল আভাস দিয়ে রাখল, পুজোর বাকি দিনগুলিতে কী পরিমাণ ভিড় হতে পারে। উদ্যোক্তাদের বলতে শোনা গেল, ‘‘গত এক মাসে যা পরিস্থিতি হয়েছিল, আদৌ এ বছর দর্শক আসবেন কিনা, তা নিয়ে ভয়ে ছিলাম। অনেকটা শান্তি লাগছে এ বার।’’
এ দিন দুপুরে গড়িয়াহাট, রাসবিহারী সংলগ্ন একাধিক মণ্ডপে পা ফেলার জায়গা ছিল না। দেশপ্রিয় পার্কের পুজোর উদ্বোধন এখনও না হলেও অনেকেই মণ্ডপ দেখার জন্য ঢুকে পড়েন। দুপুরে এক সময়ে পরিস্থিতি এমন হয় যে, কর্তৃপক্ষের তরফে ঢোকার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশেই ত্রিধারার প্রতিমা দেখতেও এ দিন ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। দুপুর থেকেই সেখানে ছিল লম্বা লাইন। পরিস্থিতি সামলাতে নামতে হয় স্বেচ্ছাসেবকদের। বারাসত থেকে বান্ধবীদের সঙ্গে আসা তিথি গুপ্ত মণ্ডপের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘‘অষ্টমী-নবমীতে তো এই চত্বরে পা রাখাই যায় না। তাই ভেবেছিলাম, আগে এসে ফাঁকায় ফাঁকায় দেখে নেব। কিন্তু কোথায় কী! এখনও বোধন হয়নি, কে বলবে!’’ পাশেই বাজারের ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলা বললেন, ‘‘আমার রথ দেখা আর কলা বেচা— দুই-ই হল। বৃষ্টির যা অবস্থা, পরে যদি আর দেখা না হয়!’’ রাসবিহারী অ্যাভিনিউ সংলগ্ন এই পুজোগুলির পাশাপাশি আলিপুর এবং চেতলার পুজোগুলিও ভিড় টেনেছে।
সকালের বৃষ্টিতে ভিজে ভিজেই এ দিন উত্তরের হাতিবাগান সর্বজনীন, টালা প্রত্যয়, কলেজ স্কোয়ারে মণ্ডপ ঘুরতে দেখা যায় অনেককে। ছাতা মাথায় হাতিবাগান সর্বজনীনের মণ্ডপ ঘুরে দেখছিলেন একদল তরুণী। নিজস্বী তোলার ফাঁকে তাঁদের এক জন বললেন, ‘‘এক বৃষ্টিতেই সব মেকআপ শেষ। এমন কাকভেজা ভিজেছি, পুজোয় জ্বরে না পড়ি!’’
এ দিন নিউ মার্কেটে কেনাকাটার পাশাপাশি অনেকেই গিয়েছেন ধর্মতলায় জুনিয়র চিকিৎসকদের ধর্নামঞ্চেও। এমনই এক জন বললেন, ‘‘এত আলোর মধ্যে ছেলেমেয়েগুলো রাস্তায় পড়ে রয়েছে। এই ভাবে কি উৎসব হয়?’’